মেট্রোরেলে প্রথম ট্রেনে টিকিট কেটে উঠবেন প্রধানমন্ত্রী

মোহনা রিপোর্ট

 

বাংলাদেশের  জনগনের দীর্ঘদিনের লালিত এক স্বপ্নের নাম মেট্রোরেল  বিদ্যুৎচালিত এই যানবাহন বাস্তবায়নে নানান পদক্ষেপ গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর  সেই স্বপ্নের  মেট্রোরেলের যাত্রা শুরু হচ্ছে আগামী ২৮ ডিসেম্বর স্বপ্ন বাস্তবায়নের রূপকার প্রধানমন্ত্রী নিজে উপস্থিত থেকে দেশের প্রথম মেট্রোরেলের উদ্বোধন করবেন উদ্বোধনের পর টিকিট কেটে তিনি মেট্রোরেলে চড়বেন উত্তরার দিয়াবাড়ী স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত যাওয়ার কথা তার

গুগল নিউজে ফলো করুন Mohona TV গুগল নিউজে ফলো করুন Mohona TV

উদ্বোধনের পরের দিন ২৯ ডিসেম্বর সকাল ৮টা থেকে সাধারণ যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে মেট্রোরেল উদ্বোধনের পর কয়েকদিন শুধু দিনের বেলায় চলাচল করবে মেট্রোরেল এরপর রাতে দিনে যাত্রী পরিবহণ করবে ট্রেন

 মেট্রোরেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানান, মেট্রোরেল চালু হলে উত্তরা থেকে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর রুটের যানজট কমবে, জনজীবনে স্বস্তি মিলবে আপাতত এই সড়কের অর্ধেক অংশের বিদ্যমান সমস্যার সমাধান মিলবে বাকি অর্ধেকের মধ্যে মতিঝিল পর্যন্ত অংশ আগামী বছরের ডিসেম্বরে এবং কমলারপুর পর্যন্ত অংশ ২০২৪ বা ২০২৫ সালের মধ্যে চালু হবে

 

তারা আরও জানান, বৈদ্যুতিক এই যানের যাত্রীরা নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন যাত্রা হবে আরামদায়ক, দ্রুতগতির নিরবচ্ছিন্ন ঢাকার বিদ্যমান গণপরিবহণ নির্ধারিত সময়ে চলাচল করতে পারছে না একেকদিন একেক সময়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছায় আর মেট্রোরেল ছুটবে ১০০ কিলোমিটার গতিতে শুরুতে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত আসতে সময় লাগবে প্রায় ২০ মিনিট পরে যাত্রার সময় লাগবে ১৬ থেকে ১৭ মিনিট মেট্রোরেল পুরোপুরি চালু হলে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহণ করতে পারবে শুরুতে মেট্রোরেল দিনের বেলায় চলবে পরে রাতেও চলাচল করবে রাতে চলাচলের একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দেবে কর্তৃপক্ষ

মেট্রোরেল বাস্তবায়নে কাজ করছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) কোম্পানির আওতায় উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এমআরটি নামক মেট্রোরেল বাস্তবায়ন কাজ চলছে যার আংশিকের উদ্বোধন আগামী ২৮ ডিসেম্বর এই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এমএএন সিদ্দিক মঙ্গলবার যুগান্তরকে জানান, মেট্রোরেল উদ্বোধন আগামী ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধনের স্থান, সময় এবং অন্যান্য প্রস্তুতির বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে সভা রয়েছে ওই সভার পর গণমাধ্যমকে বিস্তারিত জানিয়ে দেওয়া হবে

 

মেট্রোরেল চালুর আগে সব ধরনের প্রস্তুতি নিখুঁতভাবে যাচাইবাছাই করে সম্পন্ন করা হয়েছে দিনের পাশাপাশি রাতেও ট্রেন চালিয়ে দেখা হয়েছে মেট্রোরেল চালুর পর প্রথম থেকে সব সিটে যাত্রী নেওয়া হবে না ধাপে ধাপে যাত্রীর সংখ্যা বাড়ানো হবে ২০০ জন, ৩০০ জন এভাবে ধাপে ধাপে বাড়ানো হবে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশে ১০ সেট ট্রেন চলাচল করবে

 

মেট্রোরেল ধনীগরিব সবার পরিবহণ শিশু, নারী, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী সবাই এই যানবাহনে চলাচল করতে পারবেন পূর্বঘোষিত ভাড়ায় মেট্রোরেলে চলাচল করবেন যাত্রীরা মেট্রোরেলের সার্বিক বিষয় দেখভালের জন্য কারিগরি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে ওই কমিটি মেট্রোরেলের কার্যক্রম তদারকি কাজ শুরু করেছে

 

সরকার নির্ধারিত মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ টাকা উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের ভাড়া হবে ৬০ টাকা মতিঝিল পর্যন্ত চালু হলে ভাড়া হবে ১০০ টাকা কমলাপুর পর্যন্ত চালু হলে ভাড়া হতে পারে ১২০ টাকা এছাড়া প্রথম স্টেশন উত্তরা দিয়াবাড়ী থেকে পল্লবী মিরপুর১১ নম্বর স্টেশনের ভাড়া ৩০ টাকা, মিরপুর১০ কাজীপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৪০ টাকা, শেওড়াপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে স্মার্টকার্ডে ভাড়া পরিশোধ করলে ১০ শতাংশ ছাড় দেওয়ার বিষয়ে চিন্তা করছে ডিএমটিসিএল মেট্রোরেলে নিয়মিত চলাচলকারীদের সাপ্তাহিক, মাসিক পারিবারিক কার্ড দেওয়া হবে মেট্রোরেলের প্রতিটি স্টেশনে থাকা যন্ত্রে এসব কার্ডে টাকা রিচার্জ করার সুযোগ থাকবে

 

উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার এই পথে ৯টি স্টেশন রয়েছে সেগুলো হলউত্তরা (উত্তর) দিয়াবাড়ী, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর১১, মিরপুর১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া এবং আগারগাঁও

 

এছাড়া আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত স্টেশন রয়েছে ৭টি সেগুলোর মধ্যে রয়েছেবিজয় সরণি, ফার্মগেট, কাওরান বাজার, শাহবাগ, টিএসসি, প্রেসক্লাব মতিঝিল মতিঝিল থেকে দশমিক ১৬ কিলোমিটার কমলাপুর অংশের স্টেশনের সংখ্যা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি

 

উল্লেখ্য, ২০১২ সালে মেট্রোরেল বা এমআরটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাজাইকার সঙ্গে এই প্রকল্পের ঋণচুক্তি হয় পরের বছর প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে এই প্রকল্পটি প্রথমে ছিল উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার পরে কমলাপুর পর্যন্ত দশমিক ১৬ কিলোমিটার অংশ যুক্ত করা হয়েছে বর্তমান মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য ২১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার শুরুতে এই প্রকল্পের ব্যয়ের আকার ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা পরে প্রকল্পের আকার বাড়ানো হয়েছে আরও প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা বর্তমান প্রকল্পের আকার ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা এর মধ্যে জাইকা ঋণ সহায়তা হিসাবে দিয়েছে ১৯ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা সরকার খরচ করছে ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা আর মেট্রোরেলের স্টেশনে লিফট, এস্কেলেটর সিঁড়ি দিয়ে ওঠা যাবে তিনতলা স্টেশন ভবনের দ্বিতীয়তলায় টিকিট কাউন্টার এবং অফিস ব্যবস্থাপনা তিনতলায় থাকবে রেললাইন প্ল্যাটফর্ম দুর্ঘটনা এড়াতে রেললাইনের পাশে বেড়া থাকবে স্টেশনে ট্রেন থামার পর বেড়া ট্রেনের দরজা একসঙ্গে খুলে যাবে আর নির্দিষ্ট সময় পর তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে

author avatar
Editor Online
Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button