চার দিনে পদ্মায় বিলীন স্কুল, তিন মসজিদ ও আড়াইশো বাড়ি
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

উপজেলার পাকা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাকা, মাঝি পাড়া ও ভূত পাড়ায় গত ২৪ আগস্ট থেকে আজ ২৮ আগস্ট পর্যন্ত এসব ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে শনিবার (২৮ আগস্ট)দুপুরে উপজেলার দুর্লভপুর ইউনিয়নের মনোহপুরের কুপপাড়া গ্রামের গিয়ে দেখা যায়, শত শত বিঘা জমির ধান বিলীন হচ্ছে। এতে শেষ ঠিকানা হারাতে বসেছে এই এলাকার হাজারো মানুষ।
দুর্লভপুর ইউনিয়নের মনোহপুরের কুপপাড়া পদ্মা নদী তীরবর্তী এলাকায় ইমরাজ আলী বলেন, গত ১৫ দিন ধরেই এই গ্রামে ভঙন দেখা দিয়েছে। এতে আমার প্রায় দেড় বিঘা জমির ধান নদিতে তলিয়ে গেছে। আমি অনেক কষ্টে স্থানীয় এনজিও থেকে ৩০ হাজার টা ঋণ নিয়ে এ ধান চাষ করেছিলাম। কিন্তু এই ধান আর আমার ঘরে উঠলোনা।
তিনি আরও বলেন, গত ৫-৭ বছর থেকেই এসময় আমাদের বাড়ি ভেঙ্গে অন্য স্থানে নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু আমাদের দেখার কেউ নাই। পায়না কোন সরকারি সুবিধা।
আনারুল ইসলাম নামে এক ধান চাষি বলেন, অনেক কষ্টে দুই বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। কিন্তু মাত্র ৩ দিনের ভাঙনে দেড় বিঘা ধান এখন নদিগর্ভে। সারা বছর আমি কি খেয়ে বাঁচব। এই জমি আমার একটি পানির পাম্প ছিল সেটিও পানিতে তলিয়ে গেছে। শুধু আনারুল নয় এমন হাজারো কৃষকের ধান নদি গর্ভে বিলীন হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে পাঁকা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাঁকা এলাকার মাঝি পাড়া ও ভূত পাড়ায় পাঁকা নারায়নপুর পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়, তিনটি জামে মসজিদ ও প্রায় আড়াইশোর বেশি বসত বাড়ি নদি গর্ভে বিলীন হয়েছে।
মানবাধিকার কমিশনের শিবগঞ্জ উপজেলার সাংগঠনিক সম্পাদক আল-আমিন জুয়েল বলেন, আমার বাড়ি পাকা ইউনিয়নে। নদি ভঙনে আমার এলাকার মানুষ খুব কষ্টে রয়েছে। প্রতিদিন প্লাবিত নতুন নতুন এলাকা। আমার বাড়ির পাশেই একটি উচ্চ বিদ্যলয় নদিতে তলিয়ে গেছে। আর প্রায় তিনশ বসত বাড়িও নদিগর্ভে। আমার মতে জিও ব্যাগ দিয়ে এ নদী ভাঙ্গন আর রক্ষা হবে না, ফলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণের দাবী নদীপাড়ের বাসিন্দাদের।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ময়েজ উদ্দিন বলেন, উপজেলার দুর্লভপুর ও পাকা ইউনিয়নের প্রায় ২৩ হাজার বিঘা জমি এখন পানির নিচে। আর দক্ষিণ পাকা এলাকার একটি উচ্চ বিদ্যালয় নদি গর্ভে বিলিন হয়েছে। এতে ঘর বাড়ি হারিয়ে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। তবে আমরা ভঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে সংশ্লিট দপ্তরে রিপোর্ট পাঠিয়েছি।
এদিকে প্রায় আড়াইশো কোটি টাকা ব্যায়ে নদির ওপারের বাসিন্দাদের জন্য বিদুৎতের ব্যাবস্থা করেছিল সরকার। এটিও এখন হুমকির মুখে। আর হুমকির মুখে রয়েছে প্রায় ১২ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। ভাঙন আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।