ছাত্রলীগ নেতার বাড়ি-গাড়িতে আগুন লাগিয়ে শিক্ষকসহ দু’জন জেলে!
আলফাজ সরকার আকাশ,শ্রীপুর(গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ-

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কে এম শাহরিয়ার শাকিলের বাড়ি ও গাড়ীতে আগুন দেয়ার ঘটনায় লতিফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবু সাঈদসহ দুজনকে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে আদালত।
উচ্চ আদালত হতে চার সপ্তাহের আগাম জামিন নিয়ে গত ১০ মে বিজ্ঞ আদালতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করলে বিজ্ঞ বিচারক মোঃ শাকিল আহমেদ দুইজন আসামিকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। এর আগে, সিআইডির দীর্ঘ তদন্তের পর আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের ভিত্তিতে এ মামলার সকল আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।
মামলা ও ভুক্তভোগীর পরিবার সুত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর রাতে ছাতলীগ নেতা কে এম শাহরিয়ার শাকিলের বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে বাড়ির গ্যারেজে থাকা ২৭ লাখ টাকা মূল্যের একটি প্রাইভেটকার (ঢাকা মেট্রো-গ-২৯-৯০৬০) এবং ঘরে থাকা আসবাবপত্রের আংশিক আগুনে পুড়ে যায়। এ ঘটনায় ২০২১ সালের ৪ মার্চ গাজীপুরের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট (আমলি) আদালত, গাজীপুর-এ সি.আর মামলা নং ৩০২/২১ দায়ের করেন ছাত্রলীগ নেতা শাকিলের বাবা আঃ মোতালিব খান। যিনি পূর্ব শত্রুতার জেরে প্রতিপক্ষের আক্রমনের ভয়ে শ্রীপুরের সিংগারদীঘি গ্রামে স্ত্রী,পুত্রবধূ ও নাতিসহ থাকতেন বলে মামলার আরজিতে জানিয়েছেন।
আদালত ওই মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের দায়িত্ব দিলে দীর্ঘ তদন্তের পর ২০২১ সালের ১৩ ডিসেম্বর প্রতিবেদন পেশ করেন। সেখানে সাদেক ফকির , সাদেক কাজী, সায়েম ফকির ও আবু সাঈদ ফকির, নাঈম ফকির ও আবু ইউসুফ ফকিরকে বাড়িতে অনধিকার প্রবেশ করে অগ্নি সংযোগের সাথে জড়িত ছিল বলে উল্লেখ করা হয়।
পরবর্তীতে সিআইডির প্রতিবেদটি আমলে নিয়ে ৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। কিন্তু আসামিরা ১০ মে উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন করলে তাদেরকে ৪ সপ্তাহের আগাম জামিন দেওয়া হয়। পরে আসামিরা নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করলে নাঈম ফকির ও আবু সাঈদ ফকিরকে পেনাল কোডের ৪৩৬ ধারার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকায় জেল হাজতে পাঠানো হয় এবং বাকী ৩ জন আসামিকে পরবর্তী ধার্য তারিখ পর্যন্ত জামিন দেওয়া হয়েছে বলে আদালত সুত্রে জানা যায়।
মামলার বাদী আঃ মোতালিব খান বলেন, তাদের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যের বাড়িতে ভাড়া থাকতে হচ্ছে এবং প্রতিনিয়ত এই আসামি গনের পক্ষের লোকজন মামলা উত্তোলনের জন্য ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে। আমরা আইনের কাছে ন্যায় বিচার কামনা করছি।
এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার প্রয়োজনে আসামিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।
ঘটনার পর বিলম্বে মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে গাড়ির মালিক কে এম শাহরিয়ার শাকিল দাবি করেন, এই ঘটনা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত ছিল। পূর্ব শত্রুতার জেরে প্রতিপক্ষের লোকজন বাড়ি ও গাড়িতে আগুন দিয়েছে। গাড়িসহ পুরো বাড়িটি আগুনে জ্বালিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্য থাকলেও আশপাশের লোকজন এসে আগুন নিভিয়ে ফেলে । তিনি রাজনৈতিক কারণে প্রতিপক্ষের রোষানলে পড়ে সেসময় সৌদি আরব অবস্থান করছিলেন। এমনকি তার ভাইকেও রাজনৈতিক কারণে দেশত্যাগ করতে হয়েছিল। এ ঘটনায় শ্রীপুর থানায় মামলা দায়েরের চেষ্টা করে তারা ব্যর্থ হন বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর সোমবার রাত আটটার দিকে গোসিংগা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি কে এম শাহরিয়ার শাকিলের গ্রামের নিজ বাড়ীর গ্যারেজে থাকাবস্থায় তার ব্যক্তিগত গাড়িতে দুর্বৃত্তরা আগুন দেয়।
ওই বাড়ির মালিক আব্দুল মোতালেব খানের ছোট ছেলে শাকিল খান ও তার বড় ছেলে একই ইউনিয়নের যুবলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. শরীফ খান সৌদি প্রবাসী। শাকিল খান তার পরিবারের ব্যবহারের জন্য তার বাবার নামে ওই গাড়িটি কিনেছিলেন। তার বাবা বড় ছেলের নাতি ও স্ত্রীকে নিয়ে একই উপজেলার সিংঘারদিঘী গ্রামে বসবাস করতেন। সেসময় শরীফ খানের স্ত্রী সন্তান সম্ভবা হওয়ায় কাপাসিয়ায় তার বাবার বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। বাড়িটি শুধু কেয়ারটেকার মনির হোসেন দেখভাল করতো।