যে বিমানবন্দরের টার্মিনালকে ঘরবাড়ি বানিয়েছিলেন, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সেখানেই মারা গেলেন

অন্তজার্তিক ডেস্ক

রাষ্ট্রহীন হয়েই কাটিয়ে দিয়েছেন প্রায় দুই দশক। ফ্রান্সের প্যারিসের শার্ল দেগুল বিমানবন্দরই হয়ে উঠেছিল তার বাড়ি। চাপের মুখেও নতি স্বীকার না করা মেহরান করিমি নাসেরির জীবন চলার ইতি পড়ল এ বার। যে বিমানবন্দরের টার্মিনালকে ঘরবাড়ি বানিয়েছিলেন, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সেখানেই মারা গেলেন মেহরান।

স্বপ্নের ইউরোপে যাওয়ার জন্য ইরান থেকে রওয়ানা দিয়েছিলেন মেহরান করিমি নাসেরি। কিন্তু সারা জীবনেও সে যাত্রা পূর্ণ করতে পারেননি তিনি। কপালে জুটেছে শুধুই নির্বাসন। যদিও, নিজের এই জীবনকেই ভালোবাসতে শুরু করেছিলেন মেহরান।

গুগল নিউজে ফলো করুন Mohona TV গুগল নিউজে ফলো করুন Mohona TV
এর আগে মেহরান করিমি নাসেরি জানিয়েছিল, শার্ল দে গুল বিমানবন্দরে আমার অভিজ্ঞতা মোটেই খারাপ না। প্রতিদিন আমি একটি ভালো সময় কাটানোর চেষ্টা করি। প্রতিদিন আমি আমার অতীত এবং ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করি। নিজেকে নিয়ে গল্প লেখার কথা ভাবি।

ইরানের বাসিন্দা নাসেরি ১৯৭৩ সালে ইউনিভার্সিটি অব ব্রাডফোর্ড থেকে ৩ বছরের একটি কোর্স করার জন্য ব্রিটেনে যান। তারপর দেশে ফিরলেও ১৯৭৭ সালে ইরানের শেষ রাজা মহম্মদ রেজা শাহের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ায় ইরান থেকে বের করে দেওয়া হয় তাকে।

এরপর একাধিক দেশে নাগরিকত্বে আবেদন জানান তিনি। তবে সেগুলো গৃহীত হয়নি। মা স্কটিশ হওয়া সত্ত্বেও তাকে আশ্রয় দেয়নি ব্রিটেন। বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড,জার্মানিতেও মেলেনি আশ্রয়।

১৯৮৮ সালে লন্ডনে যাওয়ার জন্য ফ্রান্স থেকে বিমানে ওঠেন তিনি। লন্ডনে নামার পর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে না পারায় ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো হয় তাকে।

এরপর থেকে নিজেকে ‘দেশহীন’ ঘোষণা করে, যাবতীয় জিনিসপত্র নিয়ে প্যারিসের শার্ল দে গুল বিমানবন্দরের টু এফ টার্মিনালেই থাকতে শুরু করেন নাসেরি। বই পড়ে, ডায়েরি লিখে সময় কাটতো তার। তবে, তাকে সবাই চিনতো স্যার আলফ্রেড মেহরান নামে।

 

নাসেরির এই লড়াই হলিউডের পরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গকেও অনুপ্রাণিত করে। ২০০৪ সালে নাসেরির জীবনসংগ্রাম নিয়ে তৈরি হয় ‘দ্য টার্মিনাল’। ওই ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেন অস্কারজয়ী অভিনেতা টম হ্যাঙ্কস। ‘লস্ট ইন ট্রানজিট’ নামে একটি ফরাসি চলচ্চিত্রও মুক্তি পায় মেহরানের জীবনী অবলম্বনে।

বিমানবন্দরে থাকার পর ২০০৬ সালে অসুস্থ হয়ে পড়েন নাসেরি। হাসপাতালে ভর্তির জন্য বিমানবন্দর থেকে বের করা হয় তাঁকে। পরে অভিবাসীদের একটি হোমে থাকার সুযোগ করে দেয়া হয়।

কিন্তু কয়েক সপ্তাহ আগে ফের বিমানবন্দরের ফিরে আসেন নাসেরি। এ বার থাকতে শুরু করেন এক নম্বর টার্মিনালে। সেখানেই শনিবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন স্যর আলফ্রেড মেহরান। সমাপ্তি ঘটে রাষ্ট্রহীন এক মানুষের জীবন সংগ্রামের।

author avatar
Editor Online
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button