আন্তর্জাতিকজাতীয়

বাংলাদেশ-জাপান দীর্ঘকালের পরীক্ষিত বন্ধু

মোহনা অনলাইন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানকে বাংলাদেশের দীর্ঘকালের পরীক্ষিত বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, স্বাধীনতা অর্জনের দুই মাসের মধ্যেই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়া কয়েকটি দেশের মধ্যে অন্যতম এই দেশটিতার হৃদয়ের খুব কাছের। তিনি বলেন, জাপান আমাদের বিশ্বস্ত উন্নয়ন অংশীদার। বাংলাদেশ তার উন্নয়নেরজন্য জাপানের অবিচল সমর্থন পেয়েছে এবং আমাদের স্বাধীনতার পর জাপানের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে সরকারি উন্নয়ন সহায়তা পেয়েছে।

শেখ হাসিনার লেখা ‘জাপান আমাদের হৃদয়ে বিশেষ স্থান করে নিয়েছে’ শিরোনামের একটি নিবন্ধে তিনি এ

কথা উল্লেখ করেন। তার চার দিনের টোকিওতে সরকারি সফরের দ্বিতীয় দিন ২৫ এপ্রিল সে দেশের বৃহত্তম ও

গুগল নিউজে ফলো করুন Mohona TV গুগল নিউজে ফলো করুন Mohona TV

প্রাচীন ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা ‘দ্য জাপান টাইমস’এই নিবন্ধ প্রকাশিত হয়।

এতে তিনি লিখেছেন, আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫১তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আমার দেশ,

বাংলাদেশ এবং জাপানের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে আমি আবার টোকিওতে এসেছি।

তিনি বলেন, আমি মহামান্য সম্রাট নারুহিতো এবং সম্রাজ্ঞী মাসাকোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং

আমাকে আমন্ত্রণের জন্য প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদাকে ধন্যবাদ জানাই। আমি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো

আবেকেও শ্রদ্ধা জানাই। আবে ছিলেন বাংলাদেশের একজন মহান বন্ধু।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা লাভের দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশকে

দ্রুত স্বীকৃতি দেয়া কয়েকটি দেশের মধ্যে জাপান অন্যতম। তিনি লিখেছেন, এমনকি ১৯৭১ সালে আমাদের

মুক্তিযুদ্ধের সময়ও জাপান অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়েছে, যা আমরা কখনো ভুলিনি বা ভুলব না। শেখ

হাসিনা বলেন, সবচেয়ে অবিস্মরণীয় ঘটনা ছিল জাপানি স্কুলের শিশুরা তাদের টিফিনের টাকা জমা করে সেই

টাকা ঘূর্ণিঝড় এবং যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত আমাদের লোকদের জন্য সাহায্য করেছিল। তিনি বলেন, ‘তারপর থেকে

জাপান আমাদের দীর্ঘকালে পরীক্ষিত বন্ধু হিসেবে রয়ে গেছে। জাপান আমার হৃদয়ের খুব কাছের একটি দেশ,

ঠিক যেমন এটি আমার পরিবার এবং আমাদের জনগণের কাছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার ছোট বোন শেখ রেহানা জাপানের সাথে বিশেষভাবে সম্পর্কিত কারণ, সে

আমাদের পিতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং আমাদের ছোট ভাই শেখ রাসেলের সাথে

১৯৭৩ সালের অক্টোবরে প্রথম জাপান সফর করেছিল।’ তিনি বলেন, জাপানের প্রতি তার পিতার

স্পর্শকাতরতার উত্তরাধিকার লালন করার পাশাপাশি দেশটির বিস্ময়কর উন্নয়নের প্রতি তার গভীর শ্রদ্ধা

রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার বাবা জাপানের উন্নয়ন দেখে মুগ্ধ এবং জাপানকে মডেল হিসেবে অনুসরণ

করতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেন, তিনি জাপানের জাতীয় পতাকার নকশা দেখেও অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।

উভয় পতাকাই বাংলাদেশের জন্য গাঢ় সবুজ এবং জাপানের জন্য সাদা রঙের পটভূমির বিপরীতে কেন্দ্রে লাল বৃত্তসহ আয়তাকার।

জাপানি বিনিয়োগ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে জাপানের বিনিয়োগ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে।

সাম্প্রতিক ওডিএ ঋণ প্যাকেজে জাপান বাংলাদেশকে অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি সহজ শর্তে ২

দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দ্বিমুখী দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ২০২১-২২

অর্থবছরে প্রথমবারের মতো ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। এ ছাড়াও তিনি বলেন, ঢাকায় মাস র‌্যাপিড

ট্রানজিট ট্রেন লাইন, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল এবং আড়াইহাজারে

একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ জাপান বাংলাদেশের কয়েকটি বড় অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

তিনি লিখেছেন, সমস্ত বিপদ সত্ত্বেও, বাংলাদেশের অর্থনীতি সহনশীল এবং বিদেশী সরাসরি বিনিয়োগের জন্য

একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে রয়ে গেছে। কারণ বাংলাদেশের উদারনীতি ও আইন বিনিয়োগের জন্য

অনুকূল এবং উৎসাহজনক। এর মধ্যে রয়েছে এফডিআই সম্পর্কিত আর্থিক নীতি, ট্যাক্স সুবিধা, রফতানির

জন্য প্রণোদনা এবং একটি তরুণ, প্রতিযোগিতামূলক শ্রমশক্তি। তিনি আরো বলেন, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক

অঞ্চল প্রতিষ্ঠা একটি আকর্ষণীয় উদ্যোগ, যা দেশীয় এবং বিশেষ করে বিদেশী উভয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে

জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। মজার ব্যাপার হলো, বাংলাদেশ কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে অত্যন্ত

সৌভাগ্যবান। এটি পশ্চিমে ভারতীয় উপমহাদেশকে পূর্বে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাথে সংযুক্ত করেছে। প্রায় ১৭

কোটি জনসংখ্যার নিজস্ব অভ্যন্তরীণ বাজার নিয়ে বাংলাদেশের গ্রাহক ভিত্তি ৩ বিলিয়ন।

রোহিঙ্গা ইস্যু সম্পর্কে তিনি বলেন, গত ছয় বছরে বাংলাদেশ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত প্রায় ১১ লাখ মিয়ানমারের

নাগরিককে দেখাশোনা করতে গিয়ে উভয়সঙ্কটে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিবন্ধে লিখেছেন, ‘গণহত্যার মুখে

রোহিঙ্গা নামে পরিচিত এই লোকদের বাংলাদেশ মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছিল। তাদের দীর্ঘ উপস্থিতি স্থানীয়

সম্প্রদায়ের জীবন ও জীবিকাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে। এখন তারা বাংলাদেশসহ সমগ্র অঞ্চলের

নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠছে। জাপান, এই অঞ্চলে তার ফলপ্রসূ প্রভাবের মাধ্যমে মধ্যস্থতা করতে পারে

এবং এই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে তাদের স্বদেশে ফিরে যেতে সাহায্য করতে পারে।’

 

ওয়াশিংটনের উদ্দেশে টোকিও ত্যাগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানে চার দিনের সরকারি সফর শেষ করে

গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর স্ক্রিপ্ট রাইটার এম নজরুল

ইসলাম জানান, প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট টোকিওর

হানেদা বিমানবন্দর থেকে বিকেল ১৫.৫৫ মিনিটে (জাপান সময়) ওয়াশিংটন ডিসির ডালাস আন্তর্জাতিক

বিমানবন্দরের উদ্দেশে যাত্রা করে। তিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে আগামী ১ মে বাংলাদেশ এবং বিশ্বব্যাংকের ৫০

বছরের অংশীদারিত্ব উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। ফ্লাইটটি ডালাস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিকেল

১৫:৫০টায় (যুক্তরাষ্ট্র সময়) অবতরণের কথা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান

বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন।

যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য কমনওয়েলথ রাজ্যের রাজা ও রানী হিসেবে চার্লস তৃতীয় এবং তার পত্নী ক্যামিলার

রাজ্যাভিষেকের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী আগামী ৪ মে লন্ডনের উদ্দেশে ওয়াশিংটন ডিসি ত্যাগ করবেন।

সুত্র: বাসস

author avatar
Editor Online
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button