জমির বিরোধে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে বাবাকে পরিকল্পিত হত্যা ছেলের
আলফাজ সরকার আকাশ, শ্রীপুর(গাজীপুর) প্রতিনিধি

গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার ভাংনাহাটি পশ্চিমপাড়া নতুনবাজার এলাকায় গিয়াস উদ্দিন (৬০) হত্যাকাণ্ডের দেড় বছর পর ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ হত্যাকাণ্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট ২ আসামীকে গ্রেপ্তার করে মঙ্গলবার বিকেলের দিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে তাঁরা।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে সন্তান তার বাবা মোঃ গিয়াস উদ্দিনকে অন্যান্যদের সহযোগিতায় হত্যা করেন। মোঃ গিয়াস উদ্দিন শ্রীপুরের ভাংনাহাটি পশ্চিম পাড়া গ্ৰামের আব্দুল মালেকের ছেলে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার ভোর পাঁচটার দিকে এই ঘটনায় দায়ের মামলার দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার কুকসাইর গ্রামের কেরামত আলীর ছেলে আলম (৩৮) ও একই জেলার ত্রিশাল উপজেলার কুষ্টিয়া গ্রামের মোঃ আবুল কালামের ছেলে মোঃ আরাফাত (২৬)। তাঁদের শ্রীপুরের কেওয়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে ঘটনার বর্ণনায় বলা হয়, নিজ বাড়ির সামনে হত্যাকান্ডের শিকার মোঃ গিয়াস উদ্দিনের একটি ব্যাটারি চালিত রিকশা গ্যারেজ ছিল। সেখানে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা তৈরি ও কেনাবেচাও করা হতো। গ্যারেজের ভেতর একটি চৌকিতে প্রতিদিন গিয়াসউদ্দিন ঘুমাতেন। গত ২০২০ সালের ১১ ডিসেম্বর তারিখে গিয়াস উদ্দিন তার গ্যারেজের ভিতর একটি চৌকিতে ঘুমাচ্ছিলেন। পরদিন ১২ডিসেম্বর তারিখের সকাল ছয়টার দিকে ঘরের ভেতর চৌকিতে মাথায় রক্তাক্ত ও গুরুতর আহত অবস্থায় গিয়াস উদ্দিনকে দেখতে পায় লোকজন। পড়ে তাকে উদ্ধার করে দ্রুত শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্য চিকিৎসকাকে মৃত ঘোষণা করেন।। এই ঘটনায় ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর নিহতের ছেলে মোঃ অলিউল্লাহ বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলাটি শ্রীপুর থানা পুলিশ প্রায় তিন মাস তদন্ত করে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে তারা রহস্য উদঘাটন করতে পারেননি। পরে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের সিদ্ধান্তে তদন্তাধীন অবস্থায় মামলা তদন্ত ভার পায় গাজীপুর পিবিআই। পিবিআই এর অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদারের দিকনির্দেশনায় ও গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ মোঃ মাকছুদের রহমানের সার্বিক সহযোগিতায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত হন পিবিআই এর পুলিশ পরিদর্শক মোঃ হাফিজুর রহমান।
পিবিআই জানায়, গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা কিছু তথ্য পেয়েছেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গিয়াস উদ্দিনের গ্যারেজে গ্রেপ্তার আসামী দুজন ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা রাখতেন। ঘটনার রাতে গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মোঃ আবু জর(৩২) ও গিয়াস উদ্দিনের ভাতিজা মোঃ সবুজ (৩২) গ্রেপ্তার দুই আসামিকে নিয়ে গিয়াস উদ্দিনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। স্থানীয় মোঃ শাহাবুদ্দিন গংদের সাথে গিয়াস উদ্দিনের চরম বিরোধ চলছিল। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই আবু জর ও অন্যান্যরা গিয়াস উদ্দিন কে হত্যার পরিকল্পনা করেন। আবু জর ও মোঃ সবুজ গ্রেপ্তারকৃত আসামি মোঃ আলমকে রাতে ফোন করে ঘটনাস্থলে আসতে বলেন। সবাই একত্রিত হয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী ওই রাতে গ্যারেজে প্রবেশ করে ঘুমন্ত অবস্থায় গিয়াস উদ্দিনের মাথায় চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন।
পিবিআই গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোঃ মাকছুদের রহমান বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। গিয়াস উদ্দিনের ছেলে আবু জর ও সবুজ অন্যান্যদের সহযোগিতায় হত্যার পরিকল্পনা করেন। জমি নিয়ে বিরোধের প্রেক্ষিতে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য ওইদিন রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় গিয়াস উদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।