সংবাদ সারাদেশ

ফরিদপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুদকের অভিযান

আশিস পোদ্দার বিমান, ফরিদপুর প্রতিনিধি

ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুদকের অভিযান

ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন সম্বন্বিত ফরিদপুর কার্যালয় (দুদক)। অভিযানকালে আউটসোসিং এ কর্মচারী নিয়োগে ভারপ্রাপ্ত ওয়ার্ড মাস্টার রিয়াজ হোসেনের প্রায় এক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে ।

মঙ্গলবার (০৯ মে) দিনব্যাপী এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন দুদক ফরিদপুরের সহকারী পরিচালক মো. জাকির হোসেন।

দুদকের কেন্দ্রীয় কার্যালয় জমা পড়া এ হাসপাতালের বিভিন্ন অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য এ অভিযান চালান দুদক ফরিদপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের একটি দল।

দুদক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, অভিযানকালে হাসপাতালের প্রত্যেকটি বিভাগে কর্মরত পরিছন্নতাকর্মী, ওয়ার্ডবয়, আয়া, নিরাপত্তা প্রহরী ও সেবা প্রার্থীদের বক্তব্য লিপিবদ্ধ করে তারা। তাদের বক্তব্য থেকে জানা যায়, ভারপ্রাপ্ত ওয়ার্ডমাস্টার রিয়াজ হোসেন পরিছন্নকর্মী, ওয়ার্ডবয়, আয়া, নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে নগদ টাকা নিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুদকের দলটি হাসপাতালটি পরিদর্শন শেষে ভারপ্রাপ্ত ওয়ার্ড মাস্টার রিয়াজ হোসেনের কক্ষটি খুলে দিতে বললে ওয়ার্ড মাস্টার গড়িমসি করেন। পরে দুদকের অভিযানিক দলটি তালা ভেঙ্গে ওই কক্ষে প্রবেশ করেন।

কক্ষটি তল্লাশি করে বেশ কিছু ফাইল জব্দ করা হয়। এ ফাইলগুলোর মধ্যে একটি ফাইলে বেশ কিছু আবেদনকারীর ব্যাক্তিগত তথ্য সম্বলিত ফাইলের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ওয়ার্ড মাস্টার আবেদনকারীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন।

তবে তিনি দাবি করে বলেন, টাকাগুলো তিনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গালফ সিকিউরিটি সার্ভিস প্রাইভেট কোম্পানীর কর্মকর্তাদের দিয়েছেন। তবে তারা (কোম্পানী) টাকা নিলেও তার দেওয়া আবেদনকারীদের নিয়োগ দেয়নি। তিনি এখন ব্যাক্তিগত টাকা দিয়ে তাদের টাকা পরিশোধ করেছেন।

ওয়ার্ড মাস্টারের কক্ষ থেকে পাওয়া একটি ফাইলে বেশ কিছু বিনা বেতনে কাজ করার অঙ্গিকারনামাও পাওয়া যায়। এ বিষয়ে ওয়ার্ড মাস্টার জানান, প্রায় ৯০ জন কর্মচারী বিনা বেতনে কাজ করছেন। মূলত এই বিনা বেতনে কর্মরত কর্মচারীরা হাসপাতালটির ট্রলি টানা বাবদ ২০০ টাকা, মর্গের লাশ গ্রহণকারী স্বজনদের কাছ থেকে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন। এরাই রোগীদের প্রাইভেট হাসপাতালে ভুল বুঝিয়ে নিয়ে যায়।

দুদকের দলটি হাসপাতালটি পরিদর্শনকালে আউটসোসিংএ নিয়োগপ্রাপ্তদের কর্তব্যে গাফিলতা দেখেন। হাসপাতালটির পরিবেশ অপরিস্কার ও অপরিছন্ন অবস্থায় দেখা যায়।

আরও পড়ুন : ভেজাল ঘি কারখানায় জরিমানা, লাখ টাকার ঘি ধ্বংস! 

দুদকের সহকারী পরিচালক মো. জাকির হোসেন জানান, সাম্প্রতিক আউটসোসিং এ নিয়োগ প্রাপ্ত প্রথম শিফট এ কর্মরত অধিকাংশই স্বীকার করেন তাদের নিয়োগ পেতে ওই সিকিউরিটি কোম্পানীকে পঞ্চাশ হাজার টাকা থেকে এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। অভিযানকালে ভারপ্রাপ্ত ওয়ার্ড মাস্টার রিয়াজ হোসেন ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এর বিরুদ্ধে আউটসোসিং এ কর্মচারী নিয়োগ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে সাধারণ লোকদের নিকট হতে প্রায় এক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগটি প্রাথমিকভাবে সত্য বলে ধারানা করা যাচ্ছে।

সহকারী পরিচালক মো. জাকির হোসেন আরও বলেন, ‘আমরা উল্লেখিত অভিযোগ সমূহের সত্যতা পেয়েছি। হাসপাতালের দ্বিতীয়, তৃতীয় চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সেবা দেয়ার মান অসন্তোসজনক। এখানে বিনা বেতনে ৯০ জন স্টাফ আছে, যারা রুগীদের জিম্মি করে অর্থ আদায় করে। আউটসোর্সিং এর নিয়োগে অর্থ লেনদেনের সত্যতা মিলেছে।’ তিনি আরো জানান, অভিযানের পুরো প্রতিবেদন আমরা কমিশনের জমা দিবো, কমিশন যে সিদ্ধান্ত দিবে, সে অনুযায়ী পরবর্তী আইনানূগ কার্যক্রম চালানো হবে।

ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এনামুল হক জানান, তিনি মঙ্গলবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি সভায় অংশ নেওয়ার জন্য ঢাকায় ছিলেন। দুদক তার প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়েছে এ বিষয়টি তার জানা নেই।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button