ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই বিচারক সহ নাজিরের অপসারণ চেয়ে আদালত বর্জন করেছে আইনজীবীরা

মোঃ শাহজাদা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই বিচারক সহ নাজিরের অপসারণ চেয়ে আদালত বর্জন করেছে আইনজীবীরা, আদালতের বিচারিক কার্যক্রম ব্যাহত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই বিচারকসহ নাজিরের অপসারণ চেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সকল আদালত ৩ দিনের জন্য বর্জন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে আইনজীবীরা।

আজ বৃহস্পতিবার (০৫ জানুয়ারি) সকাল থেকে আদালত বর্জন করে জেলা আইনজীবী সমিতির সামনে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। এ সময় বক্তব্য রাখেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট তানভীর ভুইয়া, সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বাবুল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম লিটন, মাহবুবুল আলম খোকন প্রমূখ।

এ সময় বক্তারা, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল -১ এর বিচারকের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ এনে বলেন, গেল ১ ডিসেম্বর বিকেলে মামলা দায়ের করতে গেলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল -১ এর বিচারক মামলাটি গ্রহন না করে জেলার সকল আইনজীবীদের নিয়ে আপত্তিকর ও অপমানজনক মন্তব্য করেন। এর আলোকে ২৬ ডিসেম্বর সভা করে ১ জানুয়ারি থেকে সংশ্লিষ্ট আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় জেলা আইনজীবী সমিতি। সে সাথে জাল স্ট্যাম্প, জালিয়াতির উৎস ও চাঁদাবাজি বন্ধ করে দেয়ায় ঘুষখোর ও ঘুষখোরের মদদদাতা আদলতের নাজির মুমিনকে প্রত্যাহারের দাবী জানায়।

অথচ তাকে রক্ষায় জেলা জজের ইন্ধনে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে কর্মসূচী পালন করেছে বিচার বিভাগীয় কর্মচারীরা। এরই প্রতিবাদে জেলার আইনজীবীরা জেলা জজ শারমিন নিগার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের-১ এর বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ ফারুক ও আদালতের নাজির মোমিনুল হকের অপসারনের দাবীতে বৃহস্পতি, রবি ও সোমবার পর্যন্ত ৩ দিনের জন্য সকল কোর্ট বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়। দাবী আদায় না হলে কর্মসূচী চলমান থাকবে বলেও জানায় বক্তারা।

এদিকে বর্জনকে ঘিরে সকাল থেকে জেলা জজ আদালত, চীফ জুডিশিয়াল আদালতসহ সবকটি আদালতের বিচারিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এতে করে দূর দূরান্ত থেকে আসা বিচারপ্রার্থীদের বিপাকে পড়তে হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ মোস্তফা কামাল বলেন, সময় পার হয়ে যাওয়ায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের-১ এর বিচারক মামলাটি নেননি। তবে এ কারণে একজন বিচারককে আইনজীবীরা যেভাবে অকথ্য ভাষায় গালাগালসহ তার সাথে আচরণ করেছে তা দুঃখজনক। এই আচরণ আইন পরিপন্থী। এছাড়াও তিনি আইনজীবী কর্তৃক জেলা জজের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা উল্লেখ করে বলেন, জেলা জজকে নিয়ে এ ধরণের মন্তব্য সংবিধান পরিপন্থী।

উল্লেখ্য, একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মূলত গেল ১ ডিসেম্বর একটি মামলা দায়েরকে কেন্দ্র করে আইনজীবী সমিতির নেতাসহ একাধিক আইনজীবীর সঙ্গে বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের বিতন্ডা হয়। সময় পার হয়ে যাওয়ায় নিয়ম অনুসারে মামলাটি নিতে অপারগতা প্রকাশ করায় ক্ষিপ্ত হন আইনজীবীরা। এ ঘটনায় ২৬ ডিসেম্বর সভা করে ১ জানুয়ারি থেকে সংশ্লিষ্ট আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় জেলা আইনজীবী সমিতি। এ ঘটনায় আদালতে কর্মরত কর্মচারিদের মধ্যেও বিরূপ প্রভাব দেখা দেয়। তারা আইনজীবীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে মঙ্গলবার বিচার বিভাগীয় কর্মচারি অ্যাসোসিয়েশন সভা করে বুধবার থেকে কর্মবিরতি ও মানববন্ধ কর্মসূচী পালন করে।

আইনজীবী আদালত প্রাঙ্গনে এসে বিচারবিভাগীয় কর্মচারিদের মানববন্ধন ও কর্মবিরতি পালন দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন। এসময় শত শত আইনজীবী জেলা বার এসোসিয়েশন ভবনের সামনে জড়ো হয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয় ব্যক্ত করতে থাকেন। এক পর্যায়ে আইনজীবীরা আদালত প্রাঙ্গনে জেলা জজ শারমিন নিগারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

 

author avatar
Editor Online
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button