লক্ষ্মীপুরে স্ত্রীকে গলাটিপে হত্যা, স্বামীর ১০ বছর কারাদণ্ড
মামুনুর রশিদ,লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
জেলা সদরে পরকিয়া সন্দেহে স্ত্রী লামিয়া আক্তার ঐশিকে গলা টিপে হত্যার দায়ে স্বামী আরমান হোসেন আরিফকে (৩০) ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে তার ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ১ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন।
লক্ষ্মীপুর জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জসিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, রায়ের সময় আসামী আরিফ আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদালত তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আরিফ সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের পশ্চিম শেরপুর গ্রামের চৌকিদার বাড়ির মৃত আমির হোসেনের ছেলে।
এজাহার ও আদালত সূত্র জানায়, আরিফের সঙ্গে একই উপজেলার জাহানাবাদ গ্রামের হাসান আহম্মেদের মেয়ে লামিয়ার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এতে ২০১৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর তারা নিজেরাই বিয়ে করেন। তবে বিয়ের পর থেকে স্ত্রীর সঙ্গে অন্যান্য ছেলেদের পরকিয়ার সম্পর্ক আছে বলে সন্দেহ করে আরিফ। লামিয়াও মোবাইলফোনে পরপুরুষের সঙ্গে কথা বলতো। আরিফ এতে নিষেধ করলেও তিনি শুনতেন না। এনিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। এতে বিভিন্ন সময় আরিফ তাকে মারধর করতো। এনিয়ে লামিয়া আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিল। তখন বাড়ির লোকজন তাকে রক্ষা করে।
পরকীয়ার সন্দেহ করে ২০১৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে আরিফ তার স্ত্রী লামিয়াকে মারধর করে গলা টিপে ধরে। এতে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরে আরিফ একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশাযোগে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি (লামিয়) মারা যান।
পরে মরদেহ বাড়িতে এনে বসতঘরে রেখে পালিয়ে যায় আরিফ। এসময় তার অন্য স্বজনরাও গা-ঢাকা দেয়। তবে আরিফ তার শ্বাশুড়িকে জানায় লামিয়া অসুস্থ। এতে তিনি ছুটে এসে দেখেন ঘরে লামিয়ার মরদেহ পড়ে আছে। পরে ১ অক্টোবর লামিয়ার মা সুফিয়া বাদী হয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানায় আরিফ, তার ভাই মো. সফিক ও বোন জেসমিন আক্তারের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০১৯ সালের ১০ জুলাই আরিফকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তখন আরিফ পুলিশের কাছে স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করে। আদালতেও হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
২০১৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও চন্দ্রগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক মজিবুর রহমান অভিযুক্ত আরিফের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। মামলার অন্য দুই আসামী সফিক ও জেসমিনকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতির আবেদন করেন। দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত আজ এ রায় প্রদান করেন।