শ্রীপুরে ভূমি রেকর্ড জরিপে হয়রানি-আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ চরমে!

আলফাজ সরকার আকাশ, শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি

জমির ঝামেলামুক্ত মালিকানা বুঝিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে গাজীপুরের ৪৩ নং শ্রীপুর মৌজায় ৩ হাজার ৫ শ ৮১ একর ভূমির জরিপের কাজ চলছে। বিনামূল্যে  দাগ-খতিয়ান দেখে পর্চা তৈরির কথা থাকলেও সেখানে হয়রানি ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে চলছে চাপা ক্ষোভ। তবে, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর।

উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিস সুত্রে জানা যায়, ৪৩ নং শ্রীপুর মৌজায় ৫টি ক্যাম্পে ৯০টি সিটে ভাগ করে মাঠে সার্ভেয়ার দ্বারা ভূমি অংকন কাজ করা হয়। এরপর মৌজার নকশা ও কাঠামো স্হাপনের মাধ্যমে জমির মালিকানা ও দখল সংক্রান্ত প্রমাণাদি উপস্থাপন করে আমিন দল কর্তৃক প্রস্তুতকৃত খাতিয়ান পর্চা জমির মালিককে সরবরাহ করার কাজ শুরু হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত ৭ মাস ধরে মাঠে অংকনের কাজ করে সার্ভেয়াররা। এর কিছুদিন পরই জমির মালিকদের দালাল মারফত নোটিশ দিয়ে অফিসে আসতে বলে। পরে তাদের কাছে  অনৈতিক সুবিধা চাওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জমির মালিকরা। বিষয়টি প্রকাশ করলে কিংবা টাকা না দিলে মালিকদের ভুলবাল নকশার কবলে পড়তে হচ্ছে ।

দিনের পর দিন কাগজপত্র নিয়ে দৌড়ে হাঁপিয়ে উঠছেন পৌর এলাকার ভাংনাহাটি গ্রামের পাগলা বাড়ির সত্তরোর্ধ্ব কাজিমুদ্দিন। লম্বা নিশ্বাস নিয়ে তিনি বলেন,’বাপদাদার নামে আরএস রেকর্ড থাকলেও পর্চা তৈরিতে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দাবী করছে সেটেলমেন্ট অফিস। তাঁদের পেছনে ঘুরতে ঘুরতে আমি ক্লান্ত। জমি চলে গেলেও আর দৌঁড়াবো না’।

শ্রীপুর পৌর এলাকার ভাংনাহাটি গ্রামের মায়ের ওয়ারিশ দাবী করে আসা ফরিদ প্রধান বলেন, ‘ প্রকৃত ওয়ারিশানদের কোনো কথার মূল্য না দিয়ে সুবিধা নিয়ে পর্চা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার মা ফাতেমা আক্তারের জমির পর্চা না দিয়ে অন্যদের নামে বরাদ্দ দিয়েছে মুজিবুর-২’।

শ্রীপুর উত্তর পাড়া গ্রামের রিপন মিয়া বলেন, ‘আমাদের বাপ-দাদার জমি অন্যের নামে রেকর্ড করে দিয়েছে। অফিসে যাওয়ার পর বলে হয় টাকা দেন না হয় ঢাকা গিয়ে সংশোধন করে নেন’।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সুত্র বলছে, স্থানীয় নেতা ও কিছু পরিচয়ধারী সাংবাদিকদের সাথে তালিকার মাধ্যমে অনৈতিক সুবিধার রফাদফা করা হচ্ছে। এছাড়াও সার্ভেয়ারদের সাথে স্থানীয় কিছু দালাল নিয়োগ দেওয়া হয় যাদের মাধ্যমেই টাকা লেনদেনের বিষয়টি দরদাম করা হয়। অফিসারদের সাথে যোগাযোগ করে মিলন, রতন,হাদিউল,বাহার,আমিনুল,মামুন, মানিকসহ বেশ কিছু ব্যক্তি হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা।

হয়রানির শিকার জমির মালিকরা অফিসে এসে প্রকাশ্যে হয়রানি ও টাকা লেনদেনের অভিযোগ করলেও অস্বীকার করেন অভিযুক্ত সার্ভেয়ার মফিজুল ও মুজিবুর ও অন্যরা। সার্ভে ক্যাম্প নং-৩ এ দায়িত্বে থাকা মফিজুল ইসলাম বলেন, আমরা যতটা সম্ভব চেষ্টা করছি। তবে,এ এলাকায় জমিজমা বিরোধ চরম। আমার অফিসে টাকা লেনদেনের কোনো ঘটনা নেই।

বিষয়টি অবগত নন বলে জানিয়ে শ্রীপুর উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসের উপসহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার এবি এম শামছুল আলম বলেন, সার্ভেয়ারদের কেনো টাকা দিতে হবে?। এমন অভিযোগ থাকলে সরাসরি আমাদেরকে জানান।

একই সুর দিলেন আরেক উপসহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার আব্দুল মালেক। তিনি বলেন, ভুলভাল পর্চা দেওয়ার সুযোগ নেই। ডিসপুট দিয়ে শুনানির সুযোগ রয়েছে।

অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এড়িয়ে গিয়ে যথাযথ আইন মেনেই জরিপ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে বলে জানান উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসার সুধীর চন্দ্র সরকার। তিনি বলেন, বেশী কাজ করলে বেশি দোষ হবে। সেগুলো সংশোধন করে সকলের সহযোগিতা নিয়ে সামনের কাজ করতে চাই।

খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের কথা জানিয়ে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালক মোঃ এজাজ আহমেদ জাবের মোহনা টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ চলছে। এখানে অর্থ লেনদেনের কোনো সুযোগ নেই। তারপরও তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

 

author avatar
Editor Online
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button