Top Newsজাতীয়

শুকনো মৌসুমে তিস্তার বালুচরে পার হয়ে যায় গরু, পার হয় গাড়ী

মতামত

শাহীন রাজা: ভরা বর্ষায় নদীর গর্জনে আতঙ্কে তিস্তা পারের মানুুষের ঘুম ভেঙে যেতো। মনে হতো নদীর গহীন জলে দানবেরা খেলা করছে। শুকনো মৌসুমেও ছিল, জল ভরা নদী। আজ সেই নদীর বুকে, শুধুই ধুধু বালুচর। নদীর বুকে পায়ে হেটে হয় পারাপার! পার হয় গাড়ী।

বর্ষা শেষে ধানের জমিতে জমা হতো পলি। ধানে, ধানে ধন্য ছিল তিস্তা পারের মানুষ। পানি নেমে গেলে শুধু মাছ আর মাছ। আজ সবকিছুই অতীত কল্প কাহিনী। সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, আনন্দ সবই নদীর মতোই শুকিয়ে ধুধ বালুর চর !

হিমালয়ের সাড়ে সাত হাজার ফুট উচুঁতে হিমবাহ থেকে নেমে আসে তিস্তার জল। উৎস থেকে ৩০০ কিলোমিটার একেবেকে ঢুকেছিল বাংলাদেশে। দীর্ঘ তিস্তা সিকিম এবং পশ্চিমবঙ্গের দীর্ঘ পথ পারি দিয়ে আসে বাংলাদেশে৷ অতীতে তিস্তা নদীর তিনটি ধারা ছিল৷ এগুলো হচ্ছে, করতোয়া, আত্রেয়ী ও পুনর্ভবা৷ এই তিন ধারার মিলিত নাম ত্রিস্রোতা৷ এর অপভ্রংশ হচ্ছে, বর্তমান তিস্তা৷

হিমালয় থেকে বাংলাদেশে আসার পথে সিকিমে পানি আটকে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নেয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে পানি আটকে কৃষি কাজে ব্যবহারের জন্য ব্যারেজ নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও তিস্তার পানি উত্তোলন করে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। যার ফলে শুকনো মৌসুমে বাংলাদেশে পানি আসে খুবই সামান্য। বাংলাদেশের সাত লাখ হেক্টর আবাদি জমি তিস্তার জল কণা থেকে প্রতিবছর বঞ্চিত হচ্ছে।

আবার বর্ষা মৌসুমে প্রচুর বৃষ্টিপাতে হিমালয় থেকে পানির ঢল নামে। ভারত এই পানি আর ধরে রাখতে পারে না। ধরে রাখতে গেলে কয়েকটি রাজ্য তিস্তার পানিতে প্লাবিত হয়ে যাবে। ব্যারেজের সব-কয়টা দরজা খুলে দেয়া হয়। এবং বাংলাদেশের বিশাল অঞ্চল প্লাবিত হয়ে যায়। তিস্তা এখন বাংলাদেশের জন্য দুঃখ হয়ে দেখা দিয়েছে !

বাংলাদেশ এবং ভারত দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে তিস্তার পানিবণ্টন সমস্যার সমাধান করতে পারছে না। ভারতের এক তরফা মনোভাবের কারণে,এই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। অথচ সময় যত যাচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তন ও ভূরাজনৈতিক নানা সমস্যা বাড়ছে। এটি হতে যত দেরি হবে, পরিস্থিতি তত জটিল হবে, ভূরাজনীতির হিসাব তত বড় হবে।

এই সমস্যা সমাধানে, যৌথ ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি) গঠন করে। সেচ, বন্যা এবং ঘূর্ণিঝড় নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পানি সম্পদ ভাগাভাগির মতো বিষয়গুলো নিয়ে কারিগরী পর্যায়ে আলোচনাই ছিল এটির মূল উদ্দেশ্য। ১৯৭২ সালের মার্চে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী, সহযোগিতা এবং শান্তি চুক্তির অংশ হিসাবে গঠিত হয় জেআরসি।

জেআরসির কার্যপদ্ধতি (রুলস অব প্রসিজার) অনুসারে, বছরে চারটি সভা করার কথা এই সংস্থাটির। অর্থাৎ গত ৫২ বছরে ২০৮টি জেআরসির বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে দু’দেশের কারিগরী এই কমিশর সর্বোচ্চ ৩৮টি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

তিস্তা নদী পানির হিস্যা নিয়ে কখনোই আন্তরিক নয়। অথচ দুই বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ইউরোপে প্রবাহমান দানিয়ুব নদীর পানি নিয়ে আন্তঃ দেশীয় গুলোর মধ্যে কোন সমস্যা দেখা দেয়নি। এক মিনিটের জন্য-ও পানি প্রবাহে উজানের দেশ প্রতিশোধ পরায়ণ হয়নি। এমনকি ইরান এবং ইরাকের মধ্যে আট বছর যুদ্ধ হয়েছে। অথচ একদিনের দজল-ফোরাতের পানি প্রবাহ বন্ধ হয়নি।

অথচ ভারত বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী হওয়া সত্ত্বেও বিষয়টি সম্পর্কে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়নি। বরঞ্চ তিস্তা এবং গঙ্গার পানি ভারত সবসময় রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। দুই দেশের মধ্যে প্রবাহিত নদীর পানি সমস্যা সমাধানে কখনোই আন্তরিক নয়। ভারত হয়তো জানে না এই বিষয়গুলো বাংলাদেশের মানুষকে বিক্ষুব্ধ করছে। এবং ভারত বিরোধী হয়ে উঠছে !

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button