ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ: অস্ত্র সহায়তা স্থগিতের সিদ্ধান্তে নতুন উত্তেজনার শঙ্কা
মোহনা অনলাইন
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে নতুন করে উত্তেজনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে নির্ধারিত কিছু অস্ত্র সরবরাহ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় ইউক্রেন সতর্ক করে বলেছে, এই সিদ্ধান্ত রাশিয়াকে আরও আগ্রাসী করে তুলবে।
মার্কিন হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র আনা কেলি জানান, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক পর্যালোচনার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র নিজস্ব স্বার্থ বিবেচনায় ইউক্রেনকে নির্দিষ্ট কিছু অস্ত্র সরবরাহ স্থগিত করেছে। ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই পদক্ষেপকে ‘যুদ্ধ ও সন্ত্রাসকে উৎসাহিতকারী’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
ইউক্রেন বর্তমানে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদারে মনোযোগ দিচ্ছে, কারণ রাশিয়া প্রায় প্রতিদিনই ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে ইউক্রেনীয় শহরগুলোতে হামলা চালাচ্ছে। মার্কিন সিদ্ধান্তের বিষয়ে আলোচনা করতে কিয়েভে নিযুক্ত মার্কিন কূটনীতিককে তলব করেছে ইউক্রেন। তবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, এখনো তারা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো নোটিশ পায়নি।
এদিকে, ক্রেমলিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। প্রেসিডেন্ট পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ইউক্রেনে অস্ত্র কম গেলে যুদ্ধ দ্রুত শেষ হবে।
ইউক্রেনীয় সংসদ সদস্য ফেদির ভেনিস্লাভস্কি জানান, এই সিদ্ধান্ত এমন সময় এলো যখন রাশিয়া ইউক্রেনে সন্ত্রাসী হামলা আরও বাড়িয়েছে। কিয়েভের মতে, সাম্প্রতিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলাগুলো ছিল যুদ্ধের শুরু থেকে সবচেয়ে বড় বিমান হামলা।
এনবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থগিত হওয়া অস্ত্রের মধ্যে থাকতে পারে প্যাট্রিয়ট ইন্টারসেপ্টর, হাউইটজার কামানের গোলা, ক্ষেপণাস্ত্র ও গ্রেনেড লঞ্চার। পেন্টাগনের এক সূত্র সিবিএস নিউজকে জানায়, মার্কিন অস্ত্র মজুদ অত্যন্ত কমে যাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আনা কেলি অবশ্য জোর দিয়ে বলেন, “মার্কিন সামরিক শক্তি নিয়ে কেউ যেন সন্দেহ না করে। ইরানকে জিজ্ঞেস করলেই সেটা পরিষ্কার হবে।”
এর আগে, চলতি বছরের মার্চে যুক্তরাষ্ট্র সাময়িকভাবে ইউক্রেনের অস্ত্র ও গোয়েন্দা সহায়তা বন্ধ করেছিল ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠকের পর, যা পরবর্তীতে আবার চালু হয়। এপ্রিলের শেষদিকে এক চুক্তির মাধ্যমে ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রকে খনিজ সম্পদ ব্যবহারের অধিকার দেয়।
ইউরোপীয় দেশগুলো ইউক্রেনকে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে বিপুল সামরিক সহায়তা দিয়ে এলেও বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন সহায়তা ছাড়া যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া কঠিন হবে।
চেক প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট পেত্র পাভেল বিবিসিকে বলেন, “ভবিষ্যতে গোলাবারুদের সহায়তা অব্যাহত থাকবে কি না, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।”
এদিকে মঙ্গলবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে দুই ঘণ্টার বেশি সময় ফোনালাপ হয়—২০২২ সালের পর যা তাদের প্রথম সরাসরি কথা। ম্যাক্রোঁ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও পুতিন বলেন, “রাশিয়ার নিরাপত্তা উদ্বেগ বহু বছর ধরে উপেক্ষিত হওয়াই এই যুদ্ধের মূল কারণ।”
বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে, যার মধ্যে রয়েছে ২০১৪ সালে দখল করা ক্রিমিয়া উপদ্বীপও।


