Top Newsআন্তর্জাতিক

শুল্ক নিয়ে ঢাকা-ওয়াশিংটন চূড়ান্ত সভা আজ

মোহনা অনলাইন

ট্রাম্প প্রশাসনের পারস্পরিক শুল্কহার সংক্রান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য পুরো বিশ্ব এখন অপেক্ষায় রয়েছে। আগামী ৮ জুলাই শেষ হচ্ছে ঘোষিত ৯০ দিনের শুল্ক বিরতির সময়সীমা। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অবস্থান ধরে রাখতে এবং কম শুল্ক সুবিধা পেতে বিভিন্ন দেশ ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভের (ইউএসটিআর) সঙ্গে জোরালো আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

এখন পর্যন্ত কেবল যুক্তরাজ্যই ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে একটি শুল্ক চুক্তিতে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে, যদিও ট্রাম্প শুরুতে এই সময়ের মধ্যে ৯০টি চুক্তি স্বাক্ষরের ঘোষণা দিয়েছিলেন। ভারতের মতো দেশ চুক্তির চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছালেও বিশ্লেষকদের মতে, এসব চুক্তিতে কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হচ্ছে, যা বাস্তবায়নে জটিলতা তৈরি করতে পারে।

বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্র, এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন কারখানার ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে—এমন তথ্য উঠে এসেছে সম্প্রতি প্রকাশিত একাধিক জরিপে। তবে রয়টার্স জানিয়েছে, কিছু প্রতিষ্ঠান এই অনিশ্চয়তার মধ্যেও প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।

বাংলাদেশও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি পারস্পরিক শুল্ক চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য আলোচনায় অংশ নিচ্ছে। আজ (৩ জুলাই, স্থানীয় সময়) ওয়াশিংটনে ইউএসটিআর-এর সঙ্গে বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

বৈঠকে অংশ নিতে বাণিজ্য উপদেষ্টা এস কে বশীর উদ্দিন ইতোমধ্যে ওয়াশিংটনে পৌঁছেছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেবেন।

সূত্র জানায়, ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের উপর ৩৭ শতাংশ পারস্পরিক শুল্কহার নির্ধারণ করেছে, যা পূর্বের ১৬ শতাংশের চেয়ে ২১ শতাংশ বেশি। ফলে মোট শুল্কহার দাঁড়িয়েছে ৫৩ শতাংশ। এই হার বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।

তবে, আলোচনার স্থবির অবস্থার কারণে ট্রাম্প প্রশাসন এই শুল্ক বিরতির সময়সীমা আরও ৯০ দিন বাড়াতে পারে বলে জানিয়েছেন আলোচনার সঙ্গে যুক্ত এক ব্যবসায়ী। তার ভাষায়, “অনেক দেশ এখনো খসড়া চুক্তির বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি, ফলে সময় বাড়ানো প্রয়োজন হতে পারে।”

ওই ব্যবসায়ী আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া কঠোর শর্তগুলো শুল্ক, প্যারাশুল্ক ও জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে গঠিত। তাই চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছাতে এসব শর্ত বিশ্লেষণের প্রয়োজন রয়েছে।

বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান জানান, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে তৃতীয় দফায় খসড়া চুক্তির ওপর মতামত জমা দিয়েছে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এখনো মতভেদ থাকায় আলোচনা অব্যাহত থাকবে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, চলতি বছরের প্রবর্তিত ১০ শতাংশ বেসলাইন শুল্কের সঙ্গে পূর্ববর্তী ১৬ শতাংশ শুল্ক যোগ করে মোট ২৬ শতাংশ হার নির্ধারণ করা হোক। এই প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭ শতাংশ শুল্কহারের একটি ‘পাল্টা প্রস্তাব’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

তবে মূল দ্বন্দ্বের জায়গা হলো, বাংলাদেশ চুক্তিতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বহুপাক্ষিক নীতিমালা অনুসরণ করতে চায়, যেখানে ‘সর্বাধিক সুবিধাপ্রাপ্ত দেশ’ (MFN) নীতির আওতায় শুল্কহার কমানো হলে সেটি অন্য দেশেও প্রযোজ্য হয়। যুক্তরাষ্ট্র চায় দ্বিপাক্ষিকভাবে মার্কিন পণ্যের শুল্ক কমানোর নিশ্চয়তা, যাতে চীন বা অন্যান্য দেশের ওপর সেই সুবিধা না পড়ে।

উল্লেখ্য, ইউএসটিআর গত ১৪ জুন প্রথম খসড়া চুক্তি বাংলাদেশকে পাঠায়। এরপর বাংলাদেশ দুই দফা মতামত দিলেও এখনো চূড়ান্ত ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি।

ইউএসটিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মোট দ্বিপাক্ষিক পণ্য বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল আনুমানিক ১০.৬ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল ৮.৪ বিলিয়ন ডলার এবং যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি ছিল ২.২ বিলিয়ন ডলার।

ফলে চলতি বছরে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬.২ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ২ শতাংশ বেশি।

বাণিজ্য উপদেষ্টা বশীর উদ্দিন বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্য। দুই দেশের পারস্পরিক নির্ভরতা অনেক। তাই আলোচনার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছাতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে গত সপ্তাহে জানানো হয়েছে, আলোচনায় “ভালো অগ্রগতি” হয়েছে এবং উভয় পক্ষ একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button