Site icon Mohona TV

বিদ্যুতের দাম বাড়ল খুচরায় ৮.৫%, পাইকারিতে ৫%

ছবি: সংগৃহীত

ভর্তুকি সমন্বয়ের অংশ হিসেবে বিদ্যুতের পাইকারি ও খুচরা মূল্য বাড়িয়েছে সরকার। নির্বাহী আদেশে পাইকারিতে ৫.০৭ শতাংশ (ইউনিট প্রতি ৩৪ পয়সা) এবং গ্রাহক পর্যায়ে গড়ে সাড়ে ৮ শতাংশ (ইউনিটপ্রতি ৭০ পয়সা) বাড়িয়ে বিদ্যুতের নতুন মূল্যহার নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার।

বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় বিদ্যুৎ বিভাগ এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের বিল থেকেই নতুন এ দাম কার্যকর করা হবে। ফলে মার্চে গ্রাহক যে বিদ্যুৎ বিল দেবেন, তার সঙ্গেই বাড়তি বিল যোগ হবে।

বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে গ্রাহক পর্যায়ে গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম দাঁড়াবে ৮ টাকা ৯৫ পয়সা, যা আগে ৮ টাকা ২৫ পয়সা ছিল। পাইকারি পর্যায়ে গড়ে প্রতি ইউনিটের নতুন দাম হবে ৭ টাকা ৪ পয়সা, যা আগে ছিল ৬ টাকা ৭০ পয়সা।

বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, নতুন করে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সবচেয়ে কম ব্যবহারকারী লাইফ লাইন গ্রাহকদের (শূন্য থেকে ৫০ ইউনিট ব্যবহারকারী) প্রতি ইউনিটে ২৮ পয়সা করে বাড়বে। এতে মাসিক সর্বোচ্চ বিল বাড়বে ১৪ টাকা। শূন্য থেকে ৭৫ ইউনিট ব্যবহারকারী একজন আবাসিক গ্রাহকের প্রতি ইউনিট প্রতি ৪১ পয়সা বাড়বে। এতে তার মাসিক বিদ্যুৎ বিল বাবদ সর্বোচ্চ খরচ বাড়বে ৩১ টাকা।

২০০ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারী আবাসিক গ্রাহকের প্রতি ইউনিটে ৫৭ পয়সা খরচ বাড়বে। এতে তার মাসিক বিল বাড়বে সর্বোচ্চ ১১৪ টাকা। একইভাবে ৩০০ ইউনিট ব্যবহারকারী গ্রাহকদের মাসে সর্বোচ্চ খরচ বাড়বে ১৯২ টাকা, ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারী গ্রাহকের মাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুতে খরচ বাড়বে ২৭২ টাকা, মাসে ৬০০ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী গ্রাহকের সর্বোচ্চ খরচ বাড়বে ৬৯৬ টাকা। সেচ গ্রাহকদের প্রতি ইউনিটে ৪৩ পয়সা করে বাড়বে। ফলে এক হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী একজন সেচ গ্রাহকের মাসিক সর্বোচ্চ বিল বাড়বে ৪৩০ টাকা।

বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ আজ সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখন বিদ্যুতের গড় উৎপাদন খরচ পড়ছে ১২ টাকার মতো আর ৭ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। চলতি বছর বিদ্যুতে ৪৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। ধীরে ধীরে কয়েক বছর ধরে সমন্বয় করা হবে। কম ব্যবহারকারী গ্রাহকের বিদ্যুতের দাম কম বাড়বে আর ওপরের দিকে বেশি বাড়বে।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয়েছে ডলারের দর বেড়ে যাওয়ায়। জ্বালানি তেল ও এলএনজি ও কয়লার আন্তর্জাতিক বাজারদর ক্ষেত্রবিশেষে একই থাকলেও আগের চেয়ে ডলারপ্রতি ৪০ টাকার বেশি খরচ হচ্ছে। এখানেই বিশাল গ্যাপ তৈরি হয়েছে। ডলারের সঙ্গে সমন্বয় করার জন্য কাজ করছি।’

জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম আধুনিক প্রাইসিংয়ে যাচ্ছি। ইনডেক্স ও ফর্মুলা করা হয়েছে প্রতি মাসে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় হবে, প্রতিবেশী দেশ প্রতিদিন সমন্বয় করে। সেখানে অতিরিক্ত বেড়ে গেলে সরকার অন্যভাবে সহায়তা করে।’

নিম্ন আয়ের মানুষকে সুলভ মূল্যে বিদ্যুৎ সুবিধা দিতে সরকার ‘লাইফ লাইন গ্রাহক’ নামকরণ করেন। বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ প্রথায় প্রথম ৫০ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারীদের লাইফ লাইন গ্রাহক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গত ১৪ বছরে লাইফ লাইন গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল প্রায় দ্বিগুণ বাড়ানো হয়েছে। ২০১০ সালের ১ মার্চে লাইফ লাইন গ্রাহকরা প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য ২ টাকা ৫০ পয়সা করে দিতেন। তবে ২০২৪ সালের মার্চে এসে প্রতি ইউনিট ৪ টাকা ৬৩ পয়সা করা হয়েছে। বিদ্যুতের বাড়তি এই বিলের কারণে মাস শেষে তাদের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে জীবনযাপনের ব্যয় নির্বাহে দুর্ভোগে আছে সাধারণ মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি তাদের জীবনসংগ্রামকে আরো কঠিনতর করে তুলবে।

Exit mobile version