Site icon Mohona TV

সরাসরি লেনদেনে যাচ্ছে বাংলাদেশ-চীন

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় অন্য যে কোনো দেশের লেনদেন নিষ্পত্তির বার্তা পাঠানোর একমাত্র উপায় ‘সুইফট’। এ জন্য দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক পিপলস ব্যাংক অব চায়নায় অ্যাকাউন্ট খুলছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কারণ এবার চীনের সঙ্গে সরাসরি লেনদেন চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

এসব উদ্যোগের অন্যতম উদ্দেশ্য রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণ চীনের মাধ্যমে পরিশোধ করা। সংশ্লিষ্টরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের প্রাথমিক কাজের জন্য নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না বাংলাদেশ। যে কারণে দেশটির পাওনা প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার সোনালী ব্যাংকে একটি ‘স্ক্রো’ হিসাব খুলে সেখানে জমা করা হচ্ছে।

রাশিয়ার অর্থায়নে বাস্তবায়ন হতে যাওয়া এ প্রকল্পে চুক্তিমূল্যের ৯০ শতাংশ তথা ১ হাজার ১৩৮ কোটি ডলার অর্থায়ন করছে দেশটি। প্রকল্পের মূল ঋণ পরিশোধ শুরু হবে ২০২৭ সালের মার্চ থেকে। চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলা ও দেশটির লেনদেন ব্যবস্থায় যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে রাশিয়ার ঋণ পরিশোধের চিন্তা করা হচ্ছে।

গত এপ্রিলে রূপপুরের পাওনা সরাসরি রাশিয়াকে পরিশোধ না করে পিপলস ব্যাংক অব চায়নার মাধ্যমে পরিশোধের জন্য একটি প্রটোকল চুক্তি সই হয়। তবে বাংলাদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় অন্য যে কোনো দেশের লেনদেন নিষ্পত্তির বার্তা পাঠানোর একমাত্র উপায় ‘সুইফট’। ফলে এভাবে অর্থ পরিশোধের বিষয়টি সুইফট যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কায় ওই পরিশোধ করা হয়নি।

চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য হলেও দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো অ্যাকাউন্ট নেই। যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, বড় ব্যবসায়িক সহযোগী বেশির ভাগ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট রয়েছে।

তবে চীনের মুদ্রা ইউয়ান অফিসিয়াল কারেন্সি হওয়ার পর সরাসরি আমদানি ও রপ্তানি করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। কেউ ইউয়ানে এলসি নিষ্পত্তি করতে চাইলে করতে পারে। এখন দুই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি যেন নিষ্পত্তি করতে পারে, সে জন্য এ রকম সিদ্ধান্ত হয়েছে।

গত ৫ থেকে ১০ মার্চ চীনের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল দেশটি সফর করে। এ সময় তারা দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করে অ্যাকাউন্ট খোলা ও লেনদেনের বার্তা প্রেরণের মাধ্যম দ্য ক্রসবর্ডার ইন্টারব্যাংক পেমেন্ট সিস্টেমে (সিআইপিএস) যুক্ত হওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে চীন থেকে আমদানি হয়েছে ১ হাজার ৭৮৩ কোটি ডলার। মোট আমদানির যা ২৬ দশমিক ১০ শতাংশ। এর বিপরীতে দেশটিতে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৬৮ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরে দেশটি থেকে ২ হাজার ৮৮ কোটি ডলারের আমদানি হয়েছিল, যা ছিল মোট আমদানির ২৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। তবে রপ্তানি আয় এসেছিল এক বিলিয়ন ডলারের কম।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান সমকালকে বলেন, বিকল্প মুদ্রা প্রচলনের চেষ্টা ভালো উদ্যোগ। তবে চীনের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যের যে পার্থক্য, তাতে করে এটি কতটুকু কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে বিকল্প মুদ্রায় লেনদেন নিষ্পত্তিতে কেবল দুটি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে অনেক দেশ মিলে করতে পারলে কার্যকর হবে।

author avatar
Online Editor SEO
Exit mobile version