Site icon Mohona TV

ভুল চিকিৎসার দুই অভিযোগ শ্রীপুরের এক হাসপাতালের বিরুদ্ধে!   

গাজীপুরের শ্রীপুরে অন্তঃসত্ত্বা নারীকে ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে ভুল চিকিৎসা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে জায়েদা মাল্টিকেয়ার হাসপাতালের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারীর স্বামী ওই হাসপাতালের চিকিৎসক শাকিলা শাহরিন ও তার স্বামী হাসপাতালের পরিচালক রফিকুল ইসলামকে অভিযুক্ত করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

অভিযোগে জানা যায়, অন্তঃসত্ত্বা পরীক্ষার জন্য  গত ১৪ই জুন ঐ হাসপাতালে গেলে চিকিৎসক জানান এখনও তিনি অন্তঃসত্ত্বা হননি। পরে ৩ জুলাই দ্বিতীয় বারের মতো চিকিৎসকের কাছে গেলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নারীকে অন্তঃসত্ত্বা জানিয়ে ব্যবস্থা পত্র লিখে দেন ডাক্তার । এর ১৫ দিন পর পূনরায় ব্রুনটি ভালো অবস্থানে নেই জানিয়ে জরায়ুর ভিতরে থাকা ভ্রুণটি নষ্ট করে বের করার জন্য ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হয় । সর্বশেষ ১ আগষ্ট হাসপাতালে গেলে পরীক্ষা নিরীক্ষায় ভিতরে কিছু নাই বলে জানান ডাক্তার । তবে, কিছু ঔষধ খাওয়ানোর পর থাকলেও পরিষ্কার হয়ে বের হয়ে গিয়ে স্বাভাবিক হয়ে গেছে বলেও জানানো হয়। এরপর থেকে ওই নারীর শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এক পর্যায়ে গত ৮ সেপ্টেম্বর ভোর রাত থেকে পেটে প্রচন্ড ব্যথায় কাতরাতে থাকলে সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যান ভুক্তভোগীর স্বামী। পরে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক নষ্ট হওয়া ভ্রুণ জরায়ু থেকে উদ্ধার করে।

ভুক্তভোগীর স্বামী আরিফ অভিযোগ করে বলেন, ভুল রিপোর্ট ও চিকিৎসার জন্য আমার স্ত্রী অনেক দিন যাবৎ অসুস্থতায় ভুগছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু  তদন্তের মাধ্যমে ন্যায় বিচার দাবি করছি।

এদিকে ১৩ সেপ্টেম্বর রায়হান নামে আরেকজন ভুক্তভোগী জায়েদা মাল্টিকেয়ার হাসপাতালের বিরুদ্ধে  ভুল চিকিৎসায় তার স্ত্রীর গর্ভের সন্তান হত্যার অভিযোগ দায়ের করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে।

রায়হান জানান, তার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হবার পর থেকেই নিয়মিত ঐ হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে থাকেন। গত ৪ জুলাই চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ১৮ জুলাই সন্তানের সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের কথা জানিয়ে যেতে বলেন। চিকিৎসকের কথা অনুযায়ী তারা ১৮ তারিখের অপেক্ষায় থাকেন। এরই মধ্যে ১৫ জুলাই তার স্ত্রী লক্ষ্য করেন গর্ভের সন্তান নাড়াচাড়া বন্ধ করে দিয়েছে। রায়হান হাসপাতালের পরিচালককে ফোন দিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ চাইলে তিনি চিকিৎসকের সাথে কথা না বলতে দিয়ে তিনি  নিজেই হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে গ্যাস দেওয়ার কথা বলেন। রায়হান সাথে সাথে তার স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসক কাওকে না পেয়ে বাড়িতে ফিরে যান। পর দিন হাসপাতালে গেলে চিকিৎসক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানান তার স্ত্রীর গর্ভের সন্তান মারা গেছে। সুস্থ স্বাভাবিক সন্তান কিভাবে মারা গেলো জানতে চাইলে কোন আশানুরূপ উত্তর দিতে পারেনি। এবং তাদের সহযোগিতা চাইলেও তারা তালবাহানা শুরু করে কোন চিকিৎসাও সহযোগিতা করেনি। বাধ্য হয়ে ঐ হাসপাতাল থেকে বের হয়ে মাওনা আলহেরা হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করান। এবং তার স্ত্রী মৃত সন্তান প্রসব করেন।

আলহেরা হাসপাতালের চিকিৎসকগন জানান, গত ৪ জুলাই সন্তান প্রসবের সঠিক সময় ছিলো, দেরিতে হওয়ায় সন্তানটি মারা যেতে পারে। তিনি অভিযোগে আরও উল্লেখ করেন, চিকিৎসক কখনও সনোলজিষ্ট কখনও প্যাথলজিষ্ট  হিসাবে বিভিন্ন রিপোর্টে সাক্ষর করেন। হাসপাতালের পরিচালক রফিকুল  চিকিৎসক না হয়েও হাসপাতালের রোগীদের চিকিৎসক সেজে ভুল চিকিৎসা ও পরামর্শ দিয়ে বিভ্রান্ত করেন। এছাড়াও হাসপাতালের নার্স ও স্টাফরা রোগীদের সাথে খারাপ আচরণ করে থাকে।

আরো পড়ুন :  এক পুলিশ সদস্যসহ ৮ ডাকাত গ্রেফতার

প্রথম অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে হাসপাতালের পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, নিয়মের মধ্যে থেকেই চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ঔষধের মাধ্যমে আগের ভ্রুণ বের করা হয়েছে। পরে আবার গর্ভবতী হওয়ায় নতুন করে ভ্রুণ সৃষ্টি হয়েছে। এতে আমাদের করার কিছুই নেই।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ তরিকুল ইসলাম মোহনা টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

author avatar
Editor Online
Exit mobile version