Site icon Mohona TV

নাটোরে নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলন, ঝুঁকিতে জনপদ

নাটোরের সিংড়ায় আত্রাই নদী থেকে বৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে স্থানীয় শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান লুৎফুল হাবীব রুবেল। এবিষয়ে রুবেল চেয়ারম্যানের ম্যানেজার জাহিদ হাসান বালু তোলার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন তারা হাইটেক পার্কের জন্য বালু উত্তোলন করছেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ অপরিকল্পিত ও অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে মানুষের সহায়-সম্পদ, জমিজিরাত, এবং বাজারঘাট, স্থাপনা, ব্রিজ, রাস্তা ইত্যাদি হুমকির মুখে পড়ছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রচলিত আইন তোয়াক্কা করেই চলছে দিনের পর দিন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেখেও না দেখার ভান করছে।

শনিবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় শেরকোল ইউনিয়নের ভাগনাগরকান্দি এলাকায় দিনরাত ধরে অবেধভাবে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। দুটি ড্রেজার দিয়ে বালু তোলার কাজ করছে স্থানীয় শ্রমিকরা। নদীতে বালুবাহি প্রলার আসলে ড্রেজার দিয়ে বালু তুলে ট্রলারগুলো ভরাট করা হচ্ছে। তারপর সেই বালু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সিংড়া শহরে। সেখান থেকে অন্য ড্রেজারের মাধ্যমে পাপন লাইনে করে পাঠছানো হচ্ছে হাইটেক পার্কে।

শেরকোল ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার রন্জু মিয়া বলেন, প্রভাবশারী লোকেরা বালু উত্তোলন করে। বছর দুয়েক আগে বালু তোলার বিষয়ে বাঁধা দিতে গিয়ে তিনিসহ আরো তিনজন আহত হয়েছেন। প্রভাবশালীদের ভয়ে কেউ কথা বলার সাহস পায় না বলেও জানান তিনি। প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এসব বালু উত্তোলন করা হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

একই গ্রামের রাজু আহমেদ বলেন, বালু তোলার ফলে নদীর পাড় ভেঙ্গে মানুষের ভোগান্তি তৈরী হয়। কিন্তু বালু উত্তোলনকারীরা খুবই প্রভাবশালী হওয়ার ফলে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না। কেউ কথা বললেই তাদেরকে পড়তে হয় বিপদে।

নাটোরের পরিবেশ আন্দোলনকারী সাজিদ আলী ঝর্ণা বলেন, নদীতে কোথায় কি পরিমাণ বালু তোলা যায় তা খতিয়ে দেখে পরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করা হলে বালুর চাহিদা যেমন পুরণ হতে পারে, তেমনি নদনদীর নাব্যতা ফেরাতেও এর বিকল্প নেই। বালু ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে বালু তুললে রাষ্ট্র মোটা অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে।

সিংড়া উপজেলার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা আল ইমরান বলেন, সিংড়া উপজেলায় কোন বালুমহল নেই। নদী থেকে যারা বালু তুলছে তারা অবৈধভাবে তুলছে।

তিনি বলেন, ভাগনাগরকান্দি এলাকায় নদী থেকে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে সেখানে পাঠিয়ে ড্রেজার মালিক আতাহার আলীকে শুক্রবার বালু উত্তোলন বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এবং মোবাইল ফোনে শেরকোল ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে ফোন দিয়ে বন্ধ পাওয়ায় তিনি চেয়ারম্যানের জাহিদ হাসানকে ফোন দিয়ে নিষেধ করেছেন।

নিষেধ করার পর শনিবারেও কিভাবে বালু তুলছে জানতে চাইলে তিনি বলেন পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। প্রয়োজন হলে তিনি নিজে গিয়ে বন্ধ করবেন। তবে প্রশাসনের জোগসাজোসের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

বালু উতোলনকারী ড্রেজার মালিক আতাহার আলী বলেন, “বালু তোলার সাথে আমি জড়িত নয়। রুবেল চেয়ারম্যান আমার ড্রেজার ভাঁড়া নিয়েছে। প্রতি ট্রলার বালুতে তারা আমাকে ড্রেজার ভাঁড়া দেয় মাত্র ৩০০০ টাকা।“

তবে প্রশসানের কোন লোক বা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা তাকে কোন নিষেধ করেনি বলেও মন্তব্য করেন আতাহার আলী।

এসব বিষয়ে শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান লুৎফুল হাবীব রুবেলের সাথে বারবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে রুবেলের ম্যানেজার বলেন, হাইটেক পার্কের জন্য বালু উত্তোলন করছেন। হাইটেক পার্কের বালু সরবরাহকারী হেলাল উদ্দিনকে তারা বালু সরবরাহ করছেন।

হাইটেক পার্কের বালু সরবরাহকারী হেলাল উদ্দিন বলেন, রুবেল চেয়ারম্যানের প্রতিষ্ঠান ‘অর্ক বালুমহল’ এর সাথে তার চুক্তি হয়েছে। তারা হাইটেক পার্কে ১৫ লাখ ঘনফুট বালু সরবরাহ করবে। চুক্তি অনুযায়ী তাদেরকে টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে। তারা কোথা থেকে বালু সররাহ করছে এটা তার জানার বিষয় নয় বলেও মন্তব্য করেন হেলাল উদ্দিন।

 

author avatar
Editor Online
Exit mobile version