সংবাদ সারাদেশ

নাটোরে গরুর মাংস প্রতি কেজি ৩৫০ টাকায় বিক্রি

মোঃ রাশেদুল ইসলাম, নাটোর প্রতিনিধি

নাটোরে গরুর মাংস প্রতি কেজি ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কোরবানির ঈদের মাংস সংগ্রহ করে গরীব মানুষেরা তা বিক্রি করে মসলা ও সন্তানদের জন্য নতুন জামা কিনছেন। যদিও জেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক মোহাম্মদ ইমামুল ইসলাম জানান, ‘ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী কোরবানির মাংস কেনাবেচা করার কোন নিয়ম নেই।

নাটোরের স্টেশন বাজার এলাকায় ঈদের দিনে বিকাল থেকে রাতভর খোলাবাজারে চলছে কোরবানির গরু এবং খাসির মাংস বেচাকেনা।

অল্প আয়ের মানুষ সারাদিন কোরবানির মাংস সংগ্রহ করে, প্রায় অর্ধেক পরিমাণ বিক্রি করে দিচ্ছেন স্টেশন বাজার এলাকার মহাজনদের কাছে। তারা বলছেন, পরিবারের মসলার চাহিদা পূরণ করতে এই মাংস বিক্রি করছেন।

অল্প আয়ের মানুষ, যাদের কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য নেই তারা ক্রয় করছে এই মাংস। দাম কম হওয়ায় ঈদের দিন পরিবারে মাংসের চাহিদা পূরণ করতে পেরে তারা খুশি। তবে এই কেনা বেচার আড়ালে মহাজনদের রয়েছে সিন্ডিকেট। ৩ থেকে ৪ শত টাকা কেজি দিয়ে জোরপূর্বক কিনে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে মহাজনদের বিরুদ্ধে।

নাটোর সদর উপজেলার তেবাড়িয়া ইউনিয়নের হুগোলবাড়িয়া এলাকার দিনমজুর জমির উদ্দিন বলেন, ‘সারাদিন গ্রামের ভিতরে অনেক মানুষের বাড়িতে গিয়ে, প্রায় ১০ কেজি গরু এবং খাসির মাংস সংগ্রহ করেছি। সেখান থেকে ৪ কেজি গরুর মাংস, ৩ শত ৫০ টাকা দরে বিক্রি করে দিলাম।’

নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী ইউনিয়নের পণ্ডিত গ্রাম এলাকার ইয়াসিন আলী বলেন, ‘প্রায় ৮ কেজি কোরবানির মাংস বাড়ি বাড়ি গিয়ে তুলেছিলাম। কিছু মাংস এখানে বিক্রি করতে এসেছিলাম। একজন মহাজন জোরপূর্ব ৩ শত টাকা কেজি দরে ৮ কেজি গরুর মাংস নিয়ে নিল। এই টাকা দিয়ে মসলা ও বাচ্চার জন্য কাপড় কিনব।’

নাটোর স্টেশন বাজার এলাকার মো. মহসিন মিয়া বলেন, ‘আমার কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য নেই। বাড়ি বাড়ি গিয়ে কোরবানির মাংস তোলাও আমার দ্বারা সম্ভব না। তাই এখান থেকে ৬ শত টাকা কেজি দরে গরুর মাংস ক্রয় করলাম। এতে করে পরিবারের সবাই খুশিতে মাংস খেয়ে ঈদ আনন্দ উদযাপন করবে।’

অনেকে এই স্টেশন বাজার এলাকায় মহাজন সেজে বসেছেন মাংস ক্রয়-বিক্রয় করতে। তারা বলছেন- গরুর মাংস ৬ শত টাকা কেজি কিনে ৬ শত ৫০ টাকায় এবং খাসির মাংস ৬ শত ৫০ টাকায় কিনে ৭ শত টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।

নাটোর স্টেশন বাজারের মাংস বিক্রেতা মহাজন মো. ইসমাইল আলী বলেন, ‘গরিব মানুষদের মাংস নিয়ে গিয়ে রান্না করতে মসলার প্রয়োজন। তাই কিছু মাংস তারা বিক্রি করছে। গরুর মাংস ৬ শত টাকা কিনে ৬ শত ৫০ টাকা এবং খাসির মাংস ৬ শত ৫০ টাকায় কিনে ৭ শত টাকায় বিক্রি করছি। কেজিতে আমার ৫০ টাকা লাভ হচ্ছে। এই দামের বাইরে কারো কাছে কম দামে বা জোরপূর্বক মাংস নেওয়া হয়নি।’

নাটোর স্টেশন বাজার এলাকার সচেতন নাগরিক মো. ইমরান আলী বলেন, ‘কোরবানির এই মাংস কেনা বেচা করে তিন দিক থেকে তিন শ্রেণীর মানুষ লাভবান। গ্রামগঞ্জ থেকে মানুষ মাংস তুলে নিয়ে এসে বিক্রি করছেন। মহাজনরা সেই মাংস কিনে নিচ্ছেন এবং স্বল্প আয়ের মানুষ তা আবার ক্রয় করছেন। স্টেশন বাজার এলাকায় বিগত প্রায় ৪ থেকে ৫ বছর ধরে, এই কেনা বাঁচা আমরা দেখতে পাচ্ছি।’

জেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর উপপরিচালক মোহাম্মদ ইমামুল ইসলাম জানান, ‘ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী কোরবানির মাংস কেনাবেচা করার কোন নিয়ম নেই। নিয়ম বহির্ভূত এ কর্মকান্ড থেকে আমরা সবাই বিরত থাকি। যিনি কোরবানি দিচ্ছেন তিনি তার কোরবানির মাংস কার হাতে তুলে দিচ্ছেন তা সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা দরকার।

author avatar
Editor Online
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button