জাতীয়

শত বাধায় দেশে কমছে বিদেশি পর্যটক

মোহনা অনলাইন

অবারিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ বাংলাদেশ। এই দেশে রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার, সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন; আছে পাহাড়, পর্বত ও হাওর। এতকিছুর পরও ঋতুবৈচিত্র্যের এ দেশে পর্যটনশিল্পের বিকাশ তলানিতে।

ঈদে মিলাদুন্নবী এবং সাপ্তাহিক দুই দিনের ছুটি যোগ করে মোট তিন দিনের ছুটি এবং একই সময়ে বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে দেশের প্রায় প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্রের হোটেল-মোটেলের সিংহভাগ এরইমধ্যে বুকিং হয়ে গেছে। দেশীয় পর্যটকদের চাপ বরাবরই লক্ষ্য করা গেলেও, বাংলাদেশে বিদেশি পর্যটকদের সমারোহ এখনও চোখে পড়ার মতো না।

ইমিগ্রেশন পুলিশের দেয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী বিগত ছয় বছরে সবচেয়ে বেশি বিদেশি পর্যটক এসেছে ২০১৯ সালে। সে বছর প্রায় সাড়ে ছয় লাখ পর্যটক বাংলাদেশে ঘুরতে আসেন।
 
পরবর্তীতে করোনার প্রকোপ শুরু হলে ২০২০-২১ সালে পর্যটকের সংখ্যা দেড় লাখ থেকে এক লাখের মধ্যে নেমে আসে। করোনা পরবর্তী সময়ে গত বছর দেশে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ছবি সংগৃহীত
দিন দিন কমছে বিদেশি পর্যটক। সঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের অভাব, দুর্বল অবকাঠামো, প্রশাসন ও স্থানীয় অধিবাসীদের পর্যটনমনস্ক না হওয়া, পর্যটনের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাবে ভ্রমণপিপাসুদের টানতে পারছে না বাংলাদেশ। ফলে কম খরচে ভ্রমণ ও বিনোদনের সুবিধা পেয়েও পর্যটকরা দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশে চলে যাচ্ছেন। এমনকি বাংলাদেশের পর্যটকরাও দেশের গন্তব্য এড়িয়ে আশপাশের দেশে ছুটছেন।
এদিকে বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) পালিত হচ্ছে বিশ্ব পর্যটন দিবস। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘পর্যটনে পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ’। দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের আয়োজনে চার দিনের ‘বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল’ আজ শুরু হচ্ছে।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি পর্যটক আসে বাংলাদেশে। এছাড়া এশিয়ার মধ্যে চীন, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং জাপানের পর্যটকদের আকর্ষণের জায়গা বাংলাদেশ। এশিয়ার বাইরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, তুরস্ক এবং রাশিয়া থেকেও বড়সংখ্যক পর্যটক বাংলাদেশে ঘুরতে আসেন।
চায়ের রাজ্য সিলেট ছবি সংগৃহীত
বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা কমের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তাহের মুহম্মদ জাবের সময় সংবাদকে বলেন, বাংলাদেশের পর্যটনকেন্দ্র হয় প্রকৃতিকেন্দ্রিক, আর না হলে প্রত্নতত্ত্বকেন্দ্রিক। শুধু এই দুটির আকর্ষণ দেখিয়ে ট্যুরিস্ট টানা যাবে না। এই দুইয়ের সঙ্গে সেবার মান যোগ করতে হবে।
তার মতে, প্রতিবছর বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক হাজার শিক্ষার্থী ট্যুরিজম এবং হসপিটালিটি বিভাগে পড়াশোনা করে চাকরির বাজারে প্রবেশ করে। কিন্তু এদের জন্য এ সংশ্লিষ্ট চাকরির বাজার এখনও তৈরি করা সম্ভব হয়নি।
তাহের বলেন, বিদেশি পর্যটক বাড়াতে সেবার মান বাড়ানোর বিকল্প নেই। আর এ জন্য দক্ষ জনশক্তির ব্যবহারও নিশ্চিত করতে হবে। সাধারণ গড়পড়তা সেবা দিয়ে দেশের পর্যটন খাতকে উন্নত করা যাবে না। যারা এ সংশ্লিষ্ট বিভাগে পড়াশোনা করছেন হয় তাদের পর্যটনকেন্দ্রিক উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ দিতে হবে, আর না হলে তাদের এ সংক্রান্ত খাতে ভালো চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে।
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার ছবি সংগৃহীত
তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বাংলাদেশের পর্যটনের বড় একটি আয় আসে দেশের ভেতরে থাকা পর্যটক থেকে। বিদেশি পর্যটক থেকে বাংলাদেশ গড়ে আড়াই থেকে তিন হাজার কোটি টাকা প্রতিবছর আয় করে; যা একটি মজবুত পর্যটন খাতের জন্য অপ্রতুল।
ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তাহের বলেন, বাংলাদেশে পর্যটনের সবচেয় বড় চ্যালেঞ্জ যথেষ্ট পরিমাণে বিনিয়োগ না পাওয়া। বিনিয়োগের অপ্রতুলতার কারণে দেশের পর্যটনখাতগুলোকে ঢেলে সাজানো যাচ্ছে না। দেশের পর্যটনখাতগুলোতে প্রযুক্তি এবং নতুন নতুন উদ্ভাবনের ছোঁয়া না লাগলে এ খাতের সম্ভাবনা স্থিমিত হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন ছবি সংগৃহীত
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে ঘুরতে আসা আট সদস্যের একটি দলের ট্যুর গাইড হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন সানোয়ার হোসেন। সানোয়ারের বরাত দিয়ে বিদেশি পর্যটকদের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানা যায়, মূলত এখানে ঘুরে দেখা ছাড়া আরাম করে বসে ভ্রমণ উপভোগের সুযোগ খুবই কম। এছাড়া পোশাক এবং পানীয়র বিষয়ে অনেকক্ষেত্রে নানা রকমের নিয়ম-কানুনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
পাঁচ দশক পেরিয়ে গেলেও দেশের পর্যটন শিল্প কীভাবে এগিয়ে যাবে, তার কোনো মহাপরিকল্পনা এখনও হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার এক বছর পর জন্ম নেওয়া বাপক প্রায় চার দশকে মহাপরিকল্পনা করতে পারেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পর্যটন শিল্পকে তাদের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে রূপান্তর করলেও বাংলাদেশ সেই তুলনায় অনেকটা পিছিয়ে। পর্যটন সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট, ফেসবুক ও ইউটিউবগুলোকে এখনও পর্যটকবান্ধব করা যায়নি।
author avatar
Delowar Hossain Litu
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button