অর্থনীতি

ইভ্যালির অর্থ প্রকৃত পাওনাদাররা ফেরত পেতে পারেন : হাইকোর্ট

মোহনা অনলাইন

আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির অবসায়ন ও পাওনা অর্থ ফেরত চেয়ে রিট মামলায় পক্ষভুক্ত হতে এক গ্রাহকের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।

সম্প্রতি এ আবেদন খারিজ করে আদালত পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির কোনো গ্রাহক যদি প্রকৃত পাওনাদার প্রমাণিত হন তাহলে ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের অধীনে সেই পাওনা আদায়যোগ্য। তিনি পাওনা পেতে পারেন। তবে এই মুহূর্তে পাওনা ফেরত চেয়ে রিটে কোনো আবেদনকারীকে পক্ষভুক্ত করলে ফ্লাডগেট (রেসট্রিকশন তুলে নেওয়া) খুলে যাবে। এতে সমস্যা বহুগুণ বেড়ে যাবে।

মো. মোহসান হোসেন নামে ওই গ্রাহকের পক্ষভুক্ত হওয়ার আবেদন খারিজ করে বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ পর্যবেক্ষণ দেন।

এ বছরের জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে এ সংক্রান্ত আবেদন করা হয়। আদালত আবেদন খারিজ করে আদেশ দেন ২৩ জুলাই। পর্যবেক্ষণসহ ওই আদেশটি প্রকাশ করা হয় গত ১৬ অক্টোবর (সোমবার)। আদেশের কপি ঢাকা পোস্টের হাতে এসেছে।

আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছেন, যদি আবেদনকারীকে এই রিট মামলায় পক্ষভুক্ত করা হয় তাহলে অসংখ্য গ্রাহক আদালতে এ ধরনের আবেদন নিয়ে আসবে। এতে সমস্যা বহুগুণ বেড়ে যাবে। যা মূল রিট মামলার যথাযথ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

হাইকোর্ট আবেদনকারীকে আশ্বস্ত করে আদেশের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, এটা স্পষ্ট যে আবেদনকারী যদি প্রকৃত পাওনাদার হন এবং যদি তা প্রমাণিত হয় তবে কোম্পানি আইন ১৯৯৪-এর বিধান অনুযায়ী আবেদনকারী তার পাওনা পেতে পারেন। তার দাবি আদায়যোগ্য হতে পারে। তবে এই মুহূর্তে পাওনা চেয়ে আবেদন বিবেচনাযোগ্য নয়।

বিষয়ে মূল রিট মামলার আইনজীবী ব্যারিস্টার এ এম মাসুম ও ব্যারিস্টার মাহসিব হোসেন তাদের শুনানিতে বলেছেন, যদি আবেদনকারী একজন পাওনাদার হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে পারেন তাহলে তার দাবি কোম্পানি আইন ১৯৯৪-এর প্রাসঙ্গিক বিধানের অধীনে বাস্তবায়িত হবে। তাকে রিট মামলায় পক্ষভুক্ত করার কোনো প্রয়োজন নেই।

তারা আদালতে বলেন, শেষ পর্যন্ত যদি কোম্পানিটির অবসায়ন হয় সেক্ষেত্রে আবেদনকারীরা তাদের পাওনা দাবি করে লিকুইডেটরের (কোম্পানির বিষয় দেখাশোনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি) কাছে যাবেন এবং এই আবেদনকারী তার পাওনা কোম্পানি আইনের বিধান অনুযায়ী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেতে পারেন।

আবেদনকারী মো. মোহসান হোসেন ইভ্যালির অনলাইন শপিংয়ের ওয়েবসাইটে একটি গ্রাহক অ্যাকাউন্ট খোলেন এবং একটি বাজাজ পালসার নিয়ন মোটরবাইক কেনার অর্ডার দেন। সেই অনুযায়ী ৯৭ হাজার ৪৪৮ টাকা পেমেন্ট করেন। কিন্তু পরে বিভিন্ন প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া থেকে জানতে পারেন যে, ইভ্যালি কোম্পানি তার গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করে জনসাধারণের অর্থ প্রতারণা করেছে।

আবেদনে আরো বলা হয়েছে, আবেদনকারী ইভ্যালি কর্তৃপক্ষের কাছে অর্থ দাবি করেছিলেন। কিন্তু তারা আবেদনকারীর বৈধ দাবি নিষ্পত্তির জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এরপর আবেদনকারী কোম্পানি আইন ১৯৯৪ এর অধীনে ইভ্যালিকে নোটিশ দেন। নোটিশে কোম্পানিকে ২ লাখ ৫৫ হাজার ৪১৪ টাকার সুদের সঙ্গে অর্থ প্রদানের জন্য অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু ইভ্যালির চেয়ারম্যান-এমডি ব্যর্থ হয়েছে। আবেদনকারী ইভ্যালি কোম্পানির পাওনাদার, তাই তাকে রিট মামলায় পক্ষভুক্ত করা উচিত। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, বিদ্যমান আবেদনকারী এবং আবেদনকারী মো. মোহসান হোসেনের মধ্যে স্বার্থের কোনো দ্বন্দ্ব নেই এবং বিরোধের যথাযথ বিচারের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে আবেদনকারীকে পক্ষভুক্ত করা উচিত। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা ও অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান।

মূল রিট মামলায় মো. মোহসান হোসেনকে পক্ষভুক্ত করার বিরোধিতা করে লিখিত সাবমিশনে বলা হয়, আবেদনকারী মো. মোহসান হোসেন এই প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় পক্ষ নন। একই বিষয়ে আগে আবেদনকারীদের দাখিল করা আবেদনও আদালত প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং একই প্রকৃতির বর্তমান আবেদনটিও খারিজযোগ্য। যদি আবেদনকারীকে পক্ষভুক্ত করা হয়, তাহলে তাৎক্ষণিক প্রক্রিয়ায় ফ্লাডগেট খুলে যাবে। কারণ কোম্পানির কাছে প্রচুর পাওনাদার তাদের পাওনা দাবি করছেন। তাই আবেদনটি প্রত্যাখ্যান করা উচিত। যদি আবেদনকারী একজন পাওনাদার হিসেবে প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে তার দাবি কোম্পানি আইন, ১৯৯৪-এর প্রাসঙ্গিক বিধানের অধীনে বাস্তবায়িত হবে। যার জন্য আবেদনকারীকে তাৎক্ষণিক কার্যক্রমে পক্ষভুক্ত হিসেবে যুক্ত করার প্রয়োজন নেই। পক্ষভুক্ত করার বিরোধিতা করে আদালতে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এ এম মাসুম, ব্যারিস্টার সৈয়দ মাহসিবে হোসাইন ও ব্যারিস্টার শামীম আহমেদ মেহেদী।

হাইকোর্টের নির্দেশে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন শামীমা নাসরিন।

এর আগে শামীমা নাসরিন এবং তার মা ও বোন জামাইকে নতুন পরিচালনা বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এই পরিচালনা পর্ষদে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবের নিচে নয় এমন কর্মকর্তাকে স্বাধীন পরিচালক হিসেবে রাখতে বলা হয়। এছাড়া নতুন বোর্ডে ই-ক্যাবের একজন প্রতিনিধি আছেন।

গত বছরের ১০ আগস্ট ইভ্যালি পুনরায় চালু করতে আদালতের মাধ্যমে গঠিত বোর্ডের কাছে আবেদন করেন শামীমা নাসরিন।

তার আগে ১৯ এপ্রিল ইভ্যালির অবসায়ন চেয়ে করা রিট মামলায় পক্ষভুক্ত হতে সংস্থাটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের আবেদন গ্রহণ করেন হাইকোর্ট।

২০২১ সালের ১৮ অক্টোবর ইভ্যালি পরিচালনার জন্য আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের বোর্ড গঠন করে দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বোর্ড গঠন করেন। পরে এই পরিচালনা বোর্ড শামীমা নাসরিনের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করে পদত্যাগ করে।

প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আরিফ বাকের নামের এক গ্রাহক গুলশান থানায় ইভ্যালির মো. রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরদিন বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডের বাসা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

এরইমধ্যে ইভ্যালির অবসায়ন চেয়ে হাইকোর্টের কোম্পানি আদালতে আবেদন করেন ইভ্যালির গ্রাহক ফরহাদ হোসেন। এতে ইভ্যালি নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠনেরও আবেদন জানান। ওই আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি ও হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট।

গত বছরের ২১ এপ্রিল চেক প্রতারণার ৯ মামলায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেলকে জামিন দেন আদালত। ওই দিন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে জামিন পান তিনি। তবে তার বিরুদ্ধে আরও মামলা থাকায় কারামুক্ত হতে পারেননি রাসেল। শামীমা নাসরিন বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।

author avatar
Delowar Hossain Litu
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button