জাতীয়

মেয়ের বিয়ে বলে সাহায্য নেয়া ভাইরাল ওয়াহিদের কোন মেয়েই নেই

মোহনা অনলাইন

‘এক দিন পরেই মেয়ের বিয়ে’ রাস্তায় রাস্তায় এই দুঃখের কথা আর কান্নাকাটি করে জনসাধারণকে বোকা বানিয়ে টাকা নেওয়া। তারপর সেই টাকা দিয়েই করতেন নেশা। তার এমন আবেগী কান্নায় শুধু সে কাঁদেনি, কাঁদিয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কোটি কোটি মানুষকেও। তাকে সহযোগিতা করার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের হাজার হাজার গ্রুপে পোস্ট করা হয়েছিল তার সেই ভিডিও।

এমন ঘটনার জন্য সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ওই ব্যক্তির আসল নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। তার আসল নাম ওয়াহিদ মোল্লা। তিনি পাবনা জেলার বেড়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পাইখন্দ এলাকার মৃত বাহের উদ্দিন ব্যাপারীর ছেলে। তারা ৭ ভাই, ১ বোন, এর মধ্যে সবার ছোট ওয়াহিদ। ২০ বছর আগে তার মা নূর খাতুন মারা যান। ১১ বছর আগে বাবার মৃত্যু হয়।

জানা যায়, দেশের নানা প্রান্তে এমন প্রতারণা করা ওয়াহিদ মোল্লা আগে থেকেই নেশাগ্রস্ত ও প্রতারক ধরনের ছিল। মানুষের সঙ্গে প্রতারণা সে ছোটবেলা থেকেই করে আসছে। তার নেশা ও প্রতারণার কারণে তার দুই স্ত্রী তাকে তালাক দেয়। প্রথম স্ত্রী তাকে তালাক দিয়ে চলে যাওয়ার ছয় মাস পর দ্বিতীয় বিয়ে করলে কিছুদিন পর সেই স্ত্রীও তাকে তালাক দিয়ে বাবার বাড়িতে ফিরে যায়। এরপর বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয় ওয়াহিদ।

সোমবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে পাবনার বেড়া পৌরসভার পাইখন্দ এলাকায় গিয়ে এমন সব তথ্য পাওয়া যায়। ছোটবেলা থেকেই তার প্রতারণা ও জীবনীর বর্ণনা দিয়েছেন তার পরিবার ও এলাকাবাসী।

ওয়াহিদের পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৮ বছর পূর্বে বাড়ি থেকে হঠাৎ নিরুদ্দেশ হয় ওয়াহিদ। এর মধ্যে দু’একদিনের জন্য বাড়িতে এসেছে, তবে রাতটুকুও থাকেনি সে। সর্বশেষ গত ৭ বছর আগে বাড়িতে এসেছিলেন পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ৩ শতাংশ জমি বিক্রি করার জন্য এবং পরবর্তীতে তিন বছর পরে বাড়ি এসে ভাইদের কাছে একটি ঘর তোলার জায়গা দাবি করে বলেন, সে এখন ভালো হয়ে গেছেন। পরে কৌশলে ঘরসহ সেই জায়গা বিক্রি করে ঢাকায় ফিরে যায়। তারপর আর বাড়িতে আসেনি। গত দুই-তিন দিন আগে মেয়ের বিয়ের কথা বলে মানুষের থেকে টাকা চায় ও এরপর টাকা নিয়ে মদ খাওয়ার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে এলাকাবাসী বিষয়টি জানতে পারেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে এলাকায় বেশ চাঞ্চল্য পরিবেশ তৈরি হয়। এ নিয়ে এলাকাজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

ওয়াহিদের ভাই শহিদুল ইসলাম বলেন, ছোটবেলা থেকেই সে অন্যরকম ছিল। স্কুলে দিয়ে আসতাম সেখান থেকে পালিয়ে কোথাও চলে যেত। কোনোভাবেই পড়াশোনা করাতে পারিনি। এরপর যখন একটু বড় হলো তখন এলাকা থেকে ভ্যান ভাড়া করে টাকা উপার্জনের জন্য দিতাম। সেই ভ্যান বাজারে নিয়ে বিক্রি করে নিরুদ্দেশ হয়ে যেত। কিছুদিন পর আবার বাড়িতে ফিরে আসত। এরপর আবারও একটি ভ্যানগাড়ি কিনে দেওয়া হলো সেটিও সে বিক্রি করে চলে যায়। এরপর বাবার সাথে ভাঙারির ব্যবসায় পাঠালাম। ভাঙারির মালামাল কিনে দিয়ে গ্রামে পাঠাতাম বিক্রির জন্য। সেগুলোও সে মানুষের কাছে বিক্রি না করে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে পালিয়ে যেত।

তিনি আরও বলেন, নেশাগ্রস্ত হওয়ায় বিয়ের দেড় দুই বছর পর তার প্রথম স্ত্রী তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যায়। পরে দ্বিতীয় বিয়ে করে, সে স্ত্রীও ডিভোর্স দিয়ে চলে যায়। তার একটি মাত্র ছেলে আছে তাকে নিয়ে কিছু লিখবেন না। ৭ বছর আগে একবার বাড়িতে এসেছিল। এখন আমাদের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখে আমরা বিষয়টি জানতে পারি। মূলত সে গ্রামের কিছু খারাপ মানুষের সঙ্গে মিশে ধূমপান করতে করতে বড় ধরনের নেশার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। জেনেছি ঢাকার মিরপুরের হযরত শাহ আলীর মাজারে অধিকাংশ দিন থাকে। সেখানেই খাওয়া-দাওয়া করে। মাঝে মধ্যে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ও মাওনায় দিন অতিবাহিত করে।

বেড়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সহেল মোল্লা বলেন, আমরাও তাকে চিনতাম না। মেয়ের বিয়ের কথা বলে টাকা নিয়ে মদ খাওয়ার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পরে আমরা জানতে পারি, ওই ওয়াহিদের বাড়ি আমাদের বেড়ার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে। এরপর আমরা বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারি, সে আগে থেকেই মাদকাসক্ত ও অর্ধপাগল ধরনের ছিল। খোঁজখবর করে তাকে বের করে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।

বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোরশেদুল ইসলাম জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হবার পর বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছি। তবে জেনেছি ঘটনাটি ঢাকায় ঘটেছে। তবে তার বাড়ি যে এখানে সেটা জানতাম না। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এমনই একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। সেই ভিডিওতে দেখা যায়, অসহায় এক ব্যক্তি তার মেয়ের বিয়ের জন্য পাঁচ হাজার টাকা দরকার বলে জানাচ্ছেন। ভিডিওতে তিনি সিরাজগঞ্জের বাসিন্দা বলেও পরিচয় দিয়েছেন। ঢাকার এক আত্মীয়র কাছে টাকা চেয়ে শূন্য হাতে বাড়ি ফিরছেন জানালে মানবিকতা দেখিয়ে ভিডিও করা এক ব্যক্তি তাকে ৬ হাজার টাকা দেন। পরে ওইদিন সন্ধ্যায় মাওয়া ফেরিঘাট এলাকায় মদপান করা অবস্থায় এলাকাবাসী আটক করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে জানায় যে, তার বউ মারা গেছে। সে দুঃখে সে মদ খাচ্ছে। এমনকি তাকে যেন ছেড়ে দেওয়া হয়। সেই আঁকুতিও জানান তিনি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে ব্যাপক সমালোচনা।

author avatar
Online Editor SEO
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button