বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ এর ইতিহাস ও সফলতার গল্প

মোহনা অনলাইন

সফলতা কারো একদিনের  কাজের ফল না। সফলতা অর্জন করতে হলে আমাদের প্রচুর পরিমাণে পরিশ্রম করতে হয়।এবং অনেক কিছু ত্যাগ করতে হয়। পৃথিবীতে যারা আজ পর্যন্ত সফল হয়েছে তাদের সফলতার পেছনে রয়েছে  অক্লান্ত পরিশ্রম কষ্ট দুঃখ এবং দুঃসহ জীবন যাপন। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক। এর প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। তার পুরো নাম মার্ক এলিয়ট জাকারবার্গ। মাত্র ২০ বছর বয়সে ফেসবুক তৈরি করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিলেন তিনি। তার এই সফলতার স্বপ্ন বুনেছিলেন ছোট থেকেই।

আর্ডসেলি হাই স্কুলে জাকারবার্গ গ্রিক এবং ল্যাটিন ভাষায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। তিনি ফিলিপস এক্সটার একাডেমিতে স্থানান্তরিত হন। সেখানে তিনি বিজ্ঞান এবং ক্লাসিক্যাল শিক্ষায় পুরস্কৃত হন। অসিক্রীড়া তারকাও ছিলেন মার্ক এবং অসিক্রীড়া দলের অধিনায়ক ছিলেন। কলেজে পড়াকালীন তিনি মহাকাব্যিক কবিতার লাইন থেকে আবৃত্তি করার জন্য পরিচিত ছিলেন।

তবে সেখানেই থেমে থাকেননি মার্ক। ক্লাসিক সাহিত্যে বিশেষ ডিপ্লোমাও অর্জন করেছিলেন। তবে বরাবরই ঝোঁক ছিল কম্পিউটারের প্রতি। বিশ্বের অন্যতম বিদ্যাপীঠ হাভার্ডে ভর্তি হন কম্পিউটার সায়েন্সে। সেখানেও তিনি অল্প সময়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। তবে একজন ভালো ছাত্র হিসেবে নয়, একজন প্রোগ্রামের হিসেবে। কারো যদি কোনো সফটওয়্যার তৈরির প্রয়োজন হতো সবাই একসঙ্গে আঙুল তুলত জুকারবার্গের দিকে। বলতো এ তো জুকারবার্গের বাঁ হাতের কাজ।

প্রোগ্রামিংয়ে তার আগ্রহ ছিল স্কুল জীবন থেকেই। মার্কের বয়স যখন প্রায় ১২ বছর, তখন তিনি অ্যাটারি বেসিক ব্যবহার করে একটি মেসেজিং প্রোগ্রাম তৈরি করেছিলেন। মার্ক যার নাম দিয়েছিলেন ‘জুকনেট’। মার্কের এই জুকনেট বাবার অফিসে ব্যবহার করতেন যাতে রুমে চিৎকার না করে একটি নতুন রোগীর নোটিশ দেওয়া যায়। মার্ক এটি পরিবারের সঙ্গে ভাব বিনিময়ের জন্যেও ব্যবহার করতেন। পরে বন্ধুদের সঙ্গে মজা করতে ব্যবহার করতে শুরু করেছিলেন জুকনেট। সেটি তার বন্ধু মহলেও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।

মার্কের কম্পিউটারের প্রতি আগ্রহ দেখে তার বাবা-মা একজন ব্যক্তিগত কম্পিউটার শিক্ষক রাখেন। ডেভিড নিউমা নামের সেই শিক্ষক বাড়িতে এসে সপ্তাহে একদিন মার্ককে কম্পিউটার শেখাতেন। মার্ক তার উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে থাকতে একটি এমপি থ্রি মিডিয়া প্লেয়ারও তৈরি করেছিলেন।২০০৩ সালের ২৮ অক্টোবর মার্ক এলিয়ট জুকারবার্গ ফেসম্যাশ ডটকম নামে একটি ওয়েবসাইট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আর ঐ সাইটের জন্য নিজের কলেজের ডাটাবেজও হ্যাক করেছিলেন তিনি। হ্যাক করা হার্ভার্ড কলেজের ডাটাবেজ থেকে ছাত্রদের ছবি নিয়ে তা ফেসম্যাশে ব্যবহার করে ভিজিটরদের ‘হট’ অথবা ‘নট’ ভোটিংয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি।

মূলত ঐ ফেসম্যাশ ওয়েবসাইট থেকেই ফেসবুকের চিন্তা মাথায় আসে জুকারবার্গের। এরপর ২০০৪ সালে তার রুমমেট ও কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়ের ছাত্র এডওয়ার্ডো সেভারিন, ডাস্টিন মস্কোভিত্স এবং ক্রিস হিউজেসের সাহায্য নিয়ে ফেসবুক নির্মাণ করেন।

২০০৪ সালের ১১ জানুয়ারি দ্য ফেসবুক ডটকম ডোমেইন কিনে ফেলেন তিনি। মার্ক জুকারবার্গ যখন ‘দ্য ফেসবুক’ নামে নতুন সাইটটি চালু করেন তার পরবর্তী ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ১২০০ জন শিক্ষার্থী এতে রেজিস্ট্রেশন করেন। প্রথমদিকে এটি শুধুমাত্র হার্ভার্ড কলেজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলেও ২ মাসের মাথায় আরও এটি বোস্টন শহরের অন্যান্য কলেজ, আইভি লীগ এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়।

জুন মাসের মধ্যে সাইটে প্রায় দেড় লাখ মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করা শুরু করে এবং ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ১ মিলিয়নে। তবে এ সময় শুধু ১৩ বছরের উপরের বয়সের ছেলে ও মেয়েরাই এটি ব্যবহার করতে পারতেন। এসময় ফেসবুকে কোনো ছবি আপলোড করা, ওয়াল, নিউজ ফিড, ইভেন্ট, পেজ ইত্যাদি ফিচার ছিল না। অবশেষে ২০০৫ সালের আগস্ট মাসে জুকারবার্গ শ্রুতিমধুর নামের কারণে ‘দ্য ফেসবুক’ কে সংক্ষিপ্ত করে ‘ফেসবুক’ রাখেন এবং এই নামে একটি ডোমেইন কেনেন। তবে এজন্য খরচ হয়েছিল দুই লাখ মার্কিন ডলার। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।

বর্তমানে তিনি মেটার মালিক। মেটা হচ্ছে ফেসবুকের নতুন নাম। তবে এখনো ফেসবুক পুরোনো নামেই পরিচিত হচ্ছে। মেটাকে করা হয়েছে ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপসহ আরও বেশ কিছু প্ল্যাটফর্মের অভিভাবক প্রতিষ্ঠান।

এখন সারা বিশ্বে সক্রিয় ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৩০০ কোটি। যারা মাসে একবার হলেও ফেসবুকে ঢুঁ মারেন। মার্ক জাকারবার্গ এখন মেটার মালিক। যার আওতায় ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপসহ আরও বেশকিছু প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। সবটির মালিকই ৩৮ বছর বয়সী জাকারবার্গ। এক সময় বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের তালিকায় উপরের দিকে থাকলেও এখন তার অবস্থান ১৬তম। ফোর্বস ম্যাগাজিনের তথ্য অনুযায়ী, জাকারবার্গের মোট সম্পদের পরিমাণ ৬৪ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

author avatar
Online Editor SEO
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button