Site icon Mohona TV

সন্তান জন্মের পর মা বিষণ্ণতায় কেন ভোগেন?

ছবি: সংগৃহীত

সন্তান জন্মের পর কখনো কখনো নতুন মা  ‘প্রসব পরবর্তী বিষণ্নতা ‘ বা পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকেন। এই সময় নতুন মায়ের কিছুই ভালো লাগে না, মনে আনন্দ থাকে না। তারা রাত জাগতে থাকেন। কেউ কেউ গর্ভকালীন সময়েও বিষণ্নতায় আক্রান্ত হন। একে অ্যান্টি পার্টাম ডিপ্রেশন বলে।

গর্ভকালীন ও প্রসব-পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন হরমোনের পরিবর্তনের মনোদৈহিক প্রভাবে এই বিষণ্নতা তৈরি হয়। যা চূড়ান্ত পর্যায়ে পোস্ট পার্টাম সাইকোসিস পর্যন্ত গড়ায়। আমরা তখন খবরে পড়ি, মা সন্তানকে মেরে ফেলছেন বা দুধ খাওয়াচ্ছেন না অথবা নিজেই আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছেন।

পিকাসো বলেছিলেন, বেদনার রং নীল। সেই নীলের সাথে সঙ্গতি মিলিয়েই হয়তবা অধিকাংশ নতুন মা সন্তান জন্মের পরে ‘বেবি’স ব্লু’ তে আক্রান্ত হন।

‘বেবি’স ব্লু’ সাধারণত সন্তান জন্মদানের দুই-তিন দিন পর থেকে শুরু হয়ে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত থাকে। এটা গর্ভকালীন বা গর্ভপরবর্তী সময়ে সব থেকে বেশি পরিলক্ষিত হয়। অল্প সময় থেকে নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায়। এর বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কারণের মধ্যে আছে, মাসিকের সঙ্গে মুড বদলের ইতিহাস, গর্ভাবস্থায় মুড পরিবর্তন, বিষণ্নতা, একাধিক গর্ভধারণ অথবা পরিবারের অন্যদের পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশনে ভোগার ইতিহাস। হরমোনের পরিবর্তন এ ক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা পালন করে। ৫০ শতাংশের বেশি নারী সন্তান জন্ম দেওয়ার পর প্রথম কয়েক সপ্তাহ বেবি’স ব্লু’তে ভোগেন।

বেবি’স ব্লু-এর লক্ষণ

১. মুড সুইং
২. দুশ্চিন্তা ও দুঃখবোধ
৩. অস্থিরতা
৪. অল্পতেই ভেঙে পড়া ও কাঁদা
৫. মনোযোগ কমে যাওয়া ও ক্ষুধামন্দা
৬. ঘুমের সমস্যা ইত্যাদি।

বেবি’স ব্লু-তে করণীয়

১. নবজাতকের পাশাপাশি মায়ের যত্ন নিতে হবে।
২. অনেক সময় বাবার অফিসের সমস্যা হবে দেখে আলাদা রুমে ঘুমাতে নতুন মা ও তার সন্তানকে। এটা করা যাবে না।
৩. নবজাতকের যত্নের দায়িত্ব পরিবারের সবাইকে ভাগাভাগি করে নিতে হবে। নতুন মায়ের ওপর সব দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।
৪. প্রসূতি মাকে প্রচুর বিশ্রাম ও ঘুমাতে দিতে হবে।

কিন্তু পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশন একটি তিক্ত অদৃশ্য অভিজ্ঞতা। মনে রাখতে হবে এটা মায়ের মনোদৈহিক দুর্বলতা নয়। এটা সন্তান জন্মদানের একটি জটিলতা।

পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশন

দেখা গেছে, প্রতি ৭ জন মায়ের ১ জন সন্তান জন্মদানের পর পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশনে ভোগেন। এর আসল সুস্পষ্ট কারণ এখনো অজানা। তবে জেনেটিক, হরমোনাল, মানসিক ও সামাজিক জীবনের চাপ এখানে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। কাজেই নতুন মায়ের ওপর শারীরিক ও মানসিক চাপ কমানো জরুরি।  এখানে পরিবারের ভূমিকা অপরিসীম।

পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশনের লক্ষণ

১. বিষণ্নতা, তীব্র মুড সুইং
২. অল্পতেই সন্তানের ওপর বিরক্ত হওয়া
৩. পরিবার ও বন্ধুদের থেকে নিজেকে গুটিয়ে ফেলা
৪. একদম ক্ষুধা কমে যাওয়া অথবা অস্বাভাবিক হারে ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া
৫. নিদ্রাহীনতা অথবা প্রচণ্ড ঘুমানো, প্রচণ্ড ক্লান্তিবোধ
৬. প্রচণ্ড রাগ ও খিটখিটে মেজাজ
৭. ক্রমাগত ভয় পাওয়া। ভালো মা হতে না পারার মনোভাব তৈরি হওয়া
৮. হতাশায় আক্রান্ত হওয়া
৯. নিজেকে অযোগ্য, অক্ষম ভেবে অপরাধবোধে ভুগতে থাকা
১০. অস্থিরতা
১১. সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কমে যাওয়া
১২. প্রচণ্ড দুশ্চিন্তা ও প্যানিক অ্যাটাকে ভুগতে থাকা
১৩. নিজের অথবা নবজাতকের ক্ষতি করতে পারি – এমন ভাবনা তৈরি হওয়া
১৪. বারবার মৃত্যু অথবা আত্মহত্যার কথা ভাবা

করণীয়: উল্লেখ্য এই সবগুলো লক্ষণই যে থাকতে হবে, তা নয়। তবে চিকিৎসা না হলে এই সমস্যা মাস গড়িয়ে বছর পার হয়ে যেতে পারে। কাজেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন

১. যদি লক্ষণগুলো দুই সপ্তাহের মধ্যে না কমে
২. যদি দিনে দিনে লক্ষণের মাত্রা আরো খারাপ হয়
৩. যদি বাচ্চার দৈনন্দিন যত্ন নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে
৪. যদি প্রাত্যহিক কাজকর্মগুলো করা মুশকিল হয়ে যায়
৫. যদি নিজের অথবা নবজাতকের ক্ষতি করার ভাবনা মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে

author avatar
Online Editor SEO
Exit mobile version