জীবনধারা

সব সময় খুশি থাকার গোপন রহস্য জেনে নিন

মোহনা অনলাইন

দুইদিনের জীবন! খুশি থাকো, খুশি রাখো। এই হাসিখুশি জীবন এর রহস্য কী জানেন? আসলে আমাদের আনন্দ কষ্ট ভালো খারাপ সবই নির্ভর করে পরিপার্শ্বিক পরিস্থিতির ওপরে। কিন্তু তা বলে যাঁরা গরিব, যাঁদের কাছে টাকার অভাব তাঁরা কী জীবনে খুশি থাকেন না? একদম ঠিক থাকেন। বরং বেশিই থাকেন। যাঁদের টাকা আছে তাঁরাও ভাবেন, ওদের মতো এত না পেয়েও খুশি থাকা যায় কী করে? আসলে বাইরে থেকে আমাদের সুখ দুখ পরিপার্শ্বিক পরিস্থিতি কন্ট্রোল করলেও পুরো ব্যাপারটাই ঘটে আমাদের অন্দরে। আর তাতে বিশেষ ভূমিকা থাকে হরমোনের।

হরমোন মূলত রাসায়নিক বার্তাবাহক, যা আপনার শরীর জুড়ে বেশ কয়েকটি গ্রন্থি দ্বারা নিঃসৃত হয়। প্রতিটি হরমোন শরীরের সামগ্রিক কার্যকারিতায় তার নিজস্ব ও অনন্য ভূমিকা আছে। আমাদের মেজাজ এবং অনুভূতিও এই হরমোনের উপর অত্যন্ত নির্ভরশীল। চারটি মৌলিক হরমোন আছে যা আমাদের মেজাজ নিয়ন্ত্রণ এবং আমাদের খুশি রাখার জন্য দায়ী। এগুলিকে বলা হয় হ্যাপি হরমোন-

ডোপামিন- ডোপামিন সমস্ত আনন্দদায়ক সংবেদন, স্মৃতি, শিক্ষা এবং অন্যান্য সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত। এটি ‘ফিল-গুড’ হরমোন হিসাবেও পরিচিত। আমাদের রক্তপ্রবাহে ডোপামিন নিঃসরণ হলে এটি তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের মেজাজকে উন্নত করে এবং আমরা সুখী বোধ করে।

সেরোটোনিন- আরেকটি হ্যাপি হরমোন হল সেরোটোনিন, যা শুধু আমাদের মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে না, বরং তার সঙ্গে আমাদের ঘুম, হজম ক্ষমতা, শিক্ষা এবং একটি ভাল খিদে বজায় রাখতেও সহায়তা করে।

অক্সিটোসিন- অক্সিটোসিন হরমোনের অন্য নাম ‘লাভ হরমোন’। এটি সন্তান প্রসবের পর থেকে মা বাবা ওসন্তানের বন্ধন তৈরিতে একটি ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও এই হরমোনটি আলিঙ্গন বা চুম্বনের সময়ও ট্রিগার হয়ে যায় এবং একটি সম্পর্কের উপর বিশ্বাস এবং ভালবাসাকেও প্রচার করে।

এন্ডোরফিন- এন্ডোরফিন যখন আপনার রক্তে মুক্তি পায়, তখন আপনি উৎপাদনকারী ক্রিয়াকলাপে জড়িত হন, যেমন খাওয়া, মদ্যপান বা যোগব্যায়াম ইত্যাদি। এটি আমাদের শরীরের প্রাকৃতিক ব্যথা উপশম করে এবং যখন আমরা ব্যথা বা অস্বস্তির মুখোমুখি হই তখন এটি ট্রিগার হয়।

এই হ্যাপি হরমোনের পরিমাণ বৃদ্ধি করবেন কীভাবে –

  • যোগব্যায়াম শুধু আমাদের শরীরকে ফিট রাখতে সাহায্য করে না। এটি আমাদের শরীরের পাশাপাশি মস্তিষ্ক ও মনের ওপরও প্রভাব ফেলে। তার কারণ যোগব্যায়ামের সময় প্রচুর পরিমাণে নিঃসৃত হয় হ্যাপি হরমোন, যার জন্য যোগব্যায়াম করলে মানসিক চাপ কমে।
  • জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল স্কুলের একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে হাসলে আয়ু বাড়ে, হার্ট ভাল থাকে, ওজন কমে, শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, হজম ক্ষমতা উন্নত হয় এবং তার সঙ্গে ভাল থাকে আপনার মন। সুতরাং মন খুলে হাসুন।
  • দাঁত ও হাড়ের স্বাস্থ্য মজবুত করতে প্রয়োজন ভিটামিন ডি। অন্যদিকে এই ভিটামিন ডি হ্যাপি হরমোন তৈরি করতে সাহায্য করে। তাই শরীরে ভিটামিন ডি-এর চাহিদা পূরণ করতে সূর্যের আলোর নীচে থাকুন কিছুক্ষণ।
  • সপ্তাহে ১-২ বার চকোলেট খেলেও বাড়বে হ্যাপি হরমোনের পরিমাণ।
  • প্রিয়জনের আলিঙ্গনে এবং চুম্বনেও বাড়তে পারে হ্যাপি হরমোনের পরিমাণ।

    লাভ হরমোন অর্থাৎ অক্সিটোসিন সকল মানবের প্রেম সংক্রান্ত মনোভাব পরিচালনা করে। নারী পুরুষের জীবনে এই হরমোনের ব্যালান্স বজায় রাখতে যেমন দরকার ব্যক্তি অভ্যাস তেমনি একটা সুষম খাদ্যাভ্যাসের দরকার।

    কী খেলে অক্সিটোসিনের মাত্রা বাড়বে –

    স্যামন মাছ-
    স্যামন মাছে ভিটামিন ডি এবং ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আছে, যা প্রাকৃতিকভাবে অক্সিটোসিন বাড়াতে সহায়তা করে। এই সী-ফুডটি স্ট্রেস মোকাবিলায় সক্রিয় ভূমিকা গ্রহন করে। মাতৃসুলভ আচরণের বজায় রাখতে খুব উপকার করে এই মাছ, যা প্রমাণিত হয়েছে।

    কমলার শরবত-
    প্রেমরস বৃদ্ধি করতে কমলার শরবত ভালো বিকল্প। আসলে কমলার রসে আছে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট যা সেবনে মেজাজ ও ইতিবাচক আবেগগুলি বজায় থাকে।

    চীয়া বীজ –
    আমরা জানি চীয়া বীজ কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আবার অক্সিটোসিনের মাত্রা বৃদ্ধিতেও এই বীজ কার্যকরী। শরীরে এই হর্মোনের অভাব দেখা দিলে চীয়া বীজ খান, উপকার পাবেনই। মন চনমনে, মানসিক চাপ কমাতে এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

    ডিমের কুসুম-
    প্রেমিক প্রেমিকারা নিয়ম করে ডিমের কুসুম খেলে অক্সিটোসিনের মাত্রা শরীরে বৃদ্ধি পায়। এই কুসুমে ভিটামিন ডি রয়েছে। ভিটামিন ডি টেস্টোস্টেরন উত্পাদন এবং পুরুষদের মধ্যে শুক্রাণু বৃদ্ধিতে কার্যকারিতা ভূমিকা পালন করে।

    ডার্ক চকোলেট-
    ডার্ক চকোলেটে ম্যাগনেসিয়াম আছে। যা হাইপোথ্যালামাস থেকে অক্সিটোসিন হরমোন বের করতে সহায়তা করে। ডায়েটের মাধ্যমে অক্সিটোসিন গর্ভবতী মহিলাদের প্রিক্ল্যাম্পসিয়া এবং প্রাক-প্রসবকালীন শ্রমের ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়ক।

author avatar
Online Editor SEO
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button