জীবনধারা

দীর্ঘদিন গ্যাস্ট্রিকের ঔষুধ খেলে কি হয় ?

মোহনা অনলাইন

অম্লের (অ্যাসিড) জ্বালাপোড়াকে গ্যাস্ট্রিক বলা হয়। বাজারে এ রোগের ওষুধের গ্রুপগুলো হলো ওমিপ্রাজল, প্যান্টোপ্রাজল, ইসোমিপ্রাজল, লানসোপ্রাজল, রেবিপ্রাজল এবং অতিসাম্প্রতিক কালের ভোনোপ্রাজান। এসব ওষুধ পাকস্থলীর অম্ল প্রশমনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। তবে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি অপব্যবহার হয় এই ওষুধের। আমরা কারণে-অকারণে যখন-তখন এই ওষুধ খাই। অথচ এতে ভয়ানক বিপদ হতে পারে। 

দীর্ঘদিন গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবনের কারণে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। যেমন—

নিউমোনিয়া: এ ওষুধ সেবনে পাকস্থলীর অম্লীয় পরিবেশ বদলে যায়। এতে জীবাণুর বংশবিস্তার সহজতর হয়। বিশেষত হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি নামক একধরনের ব্যাকটেরিয়ার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়। এসব জীবাণু একসময় পাকস্থলী থেকে বসত গড়ে ফুসফুসে। ফলে নিউমোনিয়ার প্রকোপ বেড়ে যায়।

কোষ স্ফীত: এ ওষুধের কারণে গ্যাস্ট্রিন নামক একটি উৎসেচকের (জৈব অনুঘটক) পরিমাণ বাড়তে থাকে। ফলে ওষুধ ছেড়ে দিলে হঠাৎ আবার অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস্ট্রিন নামক উৎসেচকের প্রভাবে একধরনের কোষ স্ফীত হয়ে যায়। কালক্রমে সেটি ক্যানসারে রূপ নিতে পারে।

হাড় ক্ষয়: গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবনের ফলে অন্ত্রে ক্যালসিয়াম শোষণ ব্যাহত হয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, দুই সপ্তাহ ওমিপ্রাজল ওষুধ সেবন করলে অন্ত্রে ক্যালসিয়াম শোষণ ৪১ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। ফলে হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি বাড়ে। দীর্ঘদিন এমন চলতে থাকলে একসময় হাড় ভেঙে যায়।

মাংসে কামড়ানো: দীর্ঘদিন গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবনের ফলে রক্তে ম্যাগনেশিয়ামের পরিমাণ কমে যায়। এর অভাবে মাংসে কামড়ানো ব্যথা, দুর্বলতা, টাটানি, খিঁচুনি, রক্তচাপ বৃদ্ধির মতো ঘটনা ঘটে।

স্নায়ুবৈকল্য: দীর্ঘদিন এই ওষুধ সেবনের ফলে ভিটামিন বি-১২-এ ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এর অভাবে রক্তশূন্যতা, স্নায়ুবৈকল্য দেখা দেয়। বিশেষত বয়স্কদের এসব সমস্যা আরও বেশি হতে পারে। দীর্ঘদিন এই ওষুধ সেবনের সঙ্গে স্মৃতিভ্রমের যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা।

কিডনি রোগ: গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবনের ফলে অ্যাকুইট ইন্টারেস্টেসিয়াল নেফ্রাইটিস নামক কিডনির মারাত্মক ব্যাধি হতে পারে। এই ওষুধ সেবনের প্রথম থেকে শুরু করে ১৮ মাস সময়ের মধ্যে এই ব্যাধি দানা বাঁধতে পারে। এতে ক্ষুধামান্দ্য, বমি, জ্বর, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তক্ষরণ পর্যন্ত হতে পারে।

● চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করবেন না। চিকিৎসক হয়তো সাময়িক গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ দিয়েছিলেন, সেটা দিনের পর দিন খাবেন না।

● অ্যাসিডিটি বা গ্যাস কমানোর প্রাকৃতিক পদ্ধতি অবলম্বন করুন। যেমন অতিরিক্ত তেল–মসলা ও ধূমপান বর্জন, সময়মতো আহার, আহারের পরপরই শুয়ে না পড়া, আহারের সময় বেশি পানি পান না করা ইত্যাদি।

author avatar
Online Editor SEO
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button