জীবনধারা

প্রাত্যহিক কিছু কাজ অজান্তেই কমিয়ে দিচ্ছে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা

মোহনা অনলাইন

মস্তিষ্ক মানবদেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। মস্তিষ্ক আমাদের স্মৃতি, অনুভূতি এবং চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করে। মস্তিষ্ক যতই ব্যবহৃত হয়, ততই শক্তিশালী আর কার্যকর হয়। কিন্তু আপনি জানেন কি? আপনার প্রতিদিনের কিছু কাজ আপনার অজান্তেই আপনার বুদ্ধি কমিয়ে দিচ্ছে?

যদি এই কাজগুলো আপনি নিয়মিত করেই যান তাহলে মস্তিষ্কের ক্ষতি হতে পারে। যা অজান্তেই কমিয়ে দিতে পারে আপনার মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা যেমন-

১. অতিরিক্ত চিনি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া: অতিরিক্ত চিনি এবং চিনি সমৃদ্ধ খাবার শুধু আপনার ওজন বাড়িয়েই থেমে থাকে না, এই কাজটি আপনার মস্তিষ্কের টিস্যু ড্যামেজ করতে থাকে। ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার একটি গবেষণায় দেখা যায় টানা ৬ সপ্তাহ একই ধরণের চিনি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার অভ্যাস আপনার মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা একেবারেই কমিয়ে দেয়। যার প্রভাব দেখা যায় আপনার স্মৃতিশক্তি, চিন্তা করার ক্ষমতা এবং মনোযোগ প্রদানের উপর। তাই আজ থেকেই অতিরিক্ত চিনি খাওয়া একেবারেই কমিয়ে নিন।

২. স্ক্রিন আসক্তি: অনেকের দিনের বেশিরভাগ সময় কাটে ফোন কিংবা কম্পিউটারের স্ক্রিনে তাকিয়ে থেকে। অফিসের কাজে বা অবসরে বিনোদনের জন্য কিংবা প্রয়োজন বা অপ্রয়োজনে স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকি। এতে করে চোখের ক্ষতি তো হচ্ছেই, সঙ্গে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতাও কমে যাচ্ছে। স্ক্রিন টাইম যত বেশি হবে, ততই আমরা চুপচাপ থাকি এবং অন্য কাজে মনোযোগ কম দেই। ফলে মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে অচল হয়ে পড়ে। বড়দের মতো শিশুরাও যদি স্ক্রিনে অতিরিক্ত সময় কাটায় তাহলে তা তাদের মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে। এ কারণে সবারই স্ক্রিন টাইম সীমিত করা প্রয়োজন।

৩. অপর্যাপ্ত ঘুম: ব্যস্ত জীবনে অনেকেই ঘুমের মূল্য উপেক্ষা করেন। কিন্তু পর্যাপ্ত ঘুম স্মৃতিশক্তি উন্নত করে, সারাদিন কর্মক্ষম রাখে। ভালো ঘুমের জন্য সময়মতো ঘুমানো, ঘুমানোর অন্তত এক ঘন্টা আগে অ্যালকোহল এবং ক্যাফেইন থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে ঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে সব ধরনের ডিভাইস থেকে দূরে থাকতে হবে। রাত জেগে কাজ করা কিংবা নাটক সিনেমা দেখার অভ্যাস আছে অনেকের। তাছাড়া অনেকে রাত জেগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক সময় ব্যয় করেন। ফলে ঘুম ঠিকঠাক হয় না। মস্তিষ্ককে সঠিকভাবে চালানোর জন্য প্রতিদিন সাত থেকে আট ঘণ্টার ঘুম প্রয়োজন। ঘুমের অভাব প্রভাব ফেলে স্মৃতিশক্তির ওপর।

৪. উচ্চশব্দে গান শোনা: যদিও সঙ্গীত আমাদের মন ভালো রাখে, তারপরও অতিরিক্ত জোরে গান শোনা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। হেডফোনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা উচ্চস্বরে গান শোনা মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর। দীর্ঘদিনের এই অভ্যাসের কারণে শ্রবণশক্তি সম্পূর্ণরূপে লোপ পেতে পারে। শ্রবণশক্তি লোপ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের টিস্যু নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এর প্রভাব স্মৃতিশক্তির ওপরেও পড়তে পারে।

৫. ধূমপান করা ও ধূমপায়ীর সাথে বন্ধুত্ব: নিকোটিন ধিরে ধিরে মস্তিষ্কের কোষ নষ্ট করতে থাকে যার কারণে ধূমপায়ীদের অনেককেই খুব অল্প বয়সে স্মৃতিশক্তি নষ্ট হতে দেখা যায়। অনেকে বলেন ধূমপান করার ফলে সৃজনশীল কাজ করার ক্ষমতা বাড়ে, সে কারণে গায়ক, আঁকিয়ে, লেখক ধরণের মানুষকে বেশী ধূমপান করতে দেখা যায়। কিন্তু এটি পুরোপুরি ভ্রান্ত ধারণা। বরং ধূমপানের ফলে আপনার সৃজনশীলতা কমতে থাকে এবং আইকিউ কমে যায়। এছাড়াও আপনার যদি ধূমপায়ী বন্ধু থাকে এবং তারা আপনার পাশেই ধূমপান করতে থাকেন অনবরত, তাহলে আপনি নিজে ধূমপায়ী না হয়েও একই সমস্যায় পড়ে নিজের বুদ্ধি এবং সৃজনশীলতা হারিয়ে ফেলবেন। সুতরাং সতর্ক হোন।

৬. মানসিক চাপ: অতিরিক্ত মানসিক চাপ নেয়ার কারণে আপনার আইকিউ কমে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। কারণ মানসিক চাপের কারণে মস্তিষ্কের নিউরনে অতিরিক্ত চাপ পড়ে থাকে যার ফলে স্থায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয় মস্তিষ্কের টিস্যু। মানসিক চাপের কারণেই অনেকে অ্যালঝেইমার রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়।

৭. কম পানি খাওয়া: পানি মস্তিষ্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। অনেকেই দিনে পর্যাপ্ত পানি পান করেন না। এই অভ্যাস আপনার স্মৃতিশক্তি এবং মনোযোগকে প্রভাবিত করতে পারে। এ কারণে সারা দিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। বিশেষ করে শারীরিক কার্যকলাপের আগে এবং পরে,মস্তিষ্ককে উজ্জীবিত রাখতে পানি পান প্রয়োজন।

author avatar
Online Editor SEO
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button