Site icon Mohona TV

আমার ঘর আনন্দে ভরে থাকতো, আজ আমার ঘর শূন্য!

ছবি: সংগৃহীত

ফৌজিয়া আফরিন রিয়া ও সাদিয়া আফরিন আলিশা দুই বোন। আজ শুক্রবারই দেশ ছেড়ে মালয়েশিয়ায় চলে যাওয়ার কথা ছিল রিয়ার। তিনি পড়তেন মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছিলেন এমবিএ শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। ছোট বোন সাদিয়া আফরিন আলিশা পড়ত ভিকারুননিসা নূন স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে। কিন্তু সব স্বপ্ন নিমিশেই অঙ্গার হয়ে গেল।

রাজধানীর বেইলে রোডে কাচ্চি ভাইএ খেতে গিয়ে আগুনে প্রাণ হারিয়েছে তিন বোন। তারা হলোফৌজিয়া আফরিন রিয়া ও সাদিয়া আফরিন আলিশা এবং খালাতো বোন নুসরাত জাহান নিমু। তারা একই সঙ্গে শপিং করতে গিয়েছিলেন। ফাঁকে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে খেতে ঢোকেন।

বেইলি রোডের বহুতল ভবনে লাগা আগুনে মারা যাওয়া ৪৬ জনের মধ্যে দুজন হলেন রিয়া ও আলিশা। তারা কুমিল্লার লালমাই উপজেলার পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়নের চরবাড়িয়া এলাকার হাজী কোরবান আলীর মেয়ে। ফৌজিয়া আফরিন রিয়া মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। আর সাদিয়া আফরিন আলিশা ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। একই ঘটনায় মারা গেছে তাদের খালাতো বোন নুসরাত জাহান নিমু। সে সদর উপজেলার হাতিগড়া এলাকার আব্দুল কুদ্দুসের মেয়ে ও ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থী।

রিয়ার বাবা কোরবান আলী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আজ (গতকাল) শুক্রবার রাতে রিয়ার মালয়েশিয়া যাওয়ার ফ্লাইট ছিল। আগের দিন গিয়েছিল শপিং করতে ও তাদের এক আন্টির সঙ্গে দেখা করতে। সেখানে গিয়ে আর ফেরেনি আমার দুই মা। যাওয়ার আগে বলেছিল বাবা আমরা তাড়াতাড়ি ফিরব।’ এ কথা বলে কেঁদে ওঠেন।

কোরবান আলী আরও বলেন, ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে তারা এলাকায় এসেছিল। সে কয়েক দিন বাড়িতে থেকে চলে গেছে। তিনি বলেন, শুক্রবার (১ মার্চ) রাতে আমিসহ রিয়ার মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা ছিল। টিকিটও কাটা হয়। কিন্তু গত রাতেই সে মারা গেছে। নিমুও তাদের খালাতো বোন। একই সঙ্গে গিয়ে আর ফেরেনি। আমার কাকরাইলের বাসায় থেকে নিমু পড়াশোনা করত। আমার ঘর আনন্দে ভরে থাকত। আজ আমার ঘর শূন্য।

কাঁদতে কাঁদতে কোরবান আলী বলেন, ‘যখন জীবিত মানুষ উদ্ধার শেষ হলো তখন আমার শরীর কাঁপছিল। আমি ঘামাচ্ছিলাম। বুকের ভেতর কেমন জানি হয়েছিল। আমার চোখে পানি আর বুক ভারী হয়ে আসছিল। রাত যখন ১০টার কাছাকাছিতখন আমাদের লাশ বুঝিয়ে দেওয়া হলো। যে মেয়েকে সন্ধ্যায় ভালোভাবে বিদায় দিয়েছি তার পোড়া লাশ দিয়েছে আমাকে। আমি আমার দুই স্বপ্নের লাশ দিয়ে বাড়ি এসেছি। বিকালে পুকুর পাশের কবরস্থানে রেখে আসবো আমার দুই স্বপ্ন।’

তিনি সরকারকে দায়ী করে বলেনআমরা যারা ঢাকায় থাকিসবসময় আতঙ্কে থাকি। কেউ নিরাপদ নই। একটা দুর্ঘটনা ঘটলে সবাই নড়েচড়ে বসে। আবার কদিন পরে আগের মতো হয়ে যায়। তারা কেউ তেমন পুড়ে মারা যায়নি। শ্বাসকষ্টে মারা গেছে। তারা বের হতে পারেনি। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছে ফায়ার সার্ভিস। কিন্তু ডিশ লাইনের ক্যাবলইন্টারনেট ক্যাবল আর বৈদ্যুতিক ক্যাবলের জন্য তাদের গাড়িও ঠিক জায়গায় স্থাপন করে পানি দিতে পারেনি। আর ফলাফল হলো লাশের পর লাশ।

author avatar
Online Editor SEO
Exit mobile version