সর্বশেষ বাজার পরিস্থিতি ও বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় পোশাক কর্মীদের ন্যূনতম মজুরি কাঠামো বেঁধে দিয়েছে সরকার। তবে সেই কাঠামো অনুযায়ী বেতন না পাওয়ায় ফুসে উঠেছে গাজীপুরের শ্রীপুরের এক পোশাক কারখানার কর্মীরা।
সরকারনির্ধারিত বর্ধিত বেতনের দাবিতে মঙ্গলবার মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শ্রীপুরের আবদার এলাকার জমজম স্পিনিং মিলস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা।
কারখানা শ্রমিক ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোর ছয়টা থেকে ঢাকা – ময়মনসিংহ মহাসড়কের জৈনাবাজার এলাকায় দুই পাশের লেন দখল করে অবস্থান নেন হাজারো শ্রমিক । এতে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে পুলিশ ও কারখানা কর্মকর্তাদের আশ্বাসে সকাল পৌনে আটটার দিকে শ্রমিকরা সড়ক থেকে চলে যায়।
আন্দোলনরত শ্রমিকদের ভাষ্য, ওই কারখানা কর্তৃপক্ষ গত জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও সর্বশেষ মার্চ মাস পর্যন্ত বর্ধিত বেতন পরিশোধ করার আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন করেনি । তাই গত তিন মাসের বর্ধিত বেতন ও প্রতিমাসের ৭ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধের দাবি আদায়ে তারা রাস্তায় নেমেছেন।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের মধ্যে মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, শ্রীপুরের প্রায় সব কারখানা সরকার নির্ধারিত বেতন কাঠামো অনুযায়ী শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করছে। কিন্তু জমজম স্পিনিং কারখানাটি সেই নিয়ম মানছে না। অপর শ্রমিক আব্দুল জলিল বলেন, তিন মাস ধরে বর্ধিত বেতনের শুধু আশ্বাস পেয়েছেন তারা। কিন্তু পূর্বের কাঠামো অনুযায়ী বেতন পরিশোধ করা হচ্ছে। আন্দোলনরত শ্রমিক মোসা. নাজনিন আক্তার বলেন, সরকার বেতন বাড়ালেও কারখানা থেকে তারা আগের বেতন পাচ্ছেন। এতে তাদের ঘর ভাড়া, খাওয়া খরচ সহ জীবন নির্বাহ করতে সমস্যা হচ্ছে । গত তিন মাসের বকেয়া বর্ধিত বেতন একসাথে পরিশোধ করার দাবী তাদের।
জমজম স্পিনিং মিলস লিমিটেড কারখানার প্রশাসন বিভাগের কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, আলোচনার ভিত্তিতে সমস্যার সমাধানের জন্য শ্রমিকদের কারখানায় ফেরত আসতে বলেছি। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে শান্তিপূর্ণ সমাধান হবে।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ্ জামান মোহনা টেলিভিশনকে বলেন, “শ্রমিকরা রাস্তা ছেড়ে কারখানায় গেছেন। কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে আলোচনা করে দাবিদাওয়ার বিষয়টি সমাধান করবেন বলে জানিয়েছেন। বর্তমানে সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক।
উল্লেখ্য, গত বছরের শেষের দিকে শ্রমিকদের বিভিন্ন সময়ে দাবিদাওয়ার প্রেক্ষিতে সরকার পোশাক খাতে ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করে। মোট চারটি গ্রেডে এই বেতন পরিশোধে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। নিম্নতম মজুরি বোর্ড (এম ডব্লিউ বি) শ্রমিকদের নতুন এই বেতন কাঠামো নিয়ে শিল্প মালিক ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে। তবে দেশের সুতা উৎপাদনকারী স্পিনিং কারখানাগুলো এই সিদ্ধান্তের আওতায় পড়ে কি না, তা নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়। মজুরি বৃদ্ধির পর থেকে এই সমন্বয়হীনতার কারণে দেশজুড়ে দফায় দফায় শ্রমিক বিক্ষোভ হতে দেখা গেছে।