জাতীয়

ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে ১০ লাখ ৭০ হাজার শিশু

মোহনা অনলাইন

শিশুশ্রম বন্ধ করা যাচ্ছে না কোনভাবেই। দেশে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ৩৫ লাখ ৪০ হাজার। এদের মধ্যে ১০ লাখ ৭ হাজার ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত। আর ঝুঁকিপূর্ণ ৪৩ খাতের মধ্যে পাঁচটিতেই নিয়োজিত রয়েছে ৩৮ হাজার ৮ জন। 

এই শিশুদের বয়স ৫ থেকে ১৭ বছর। এর মধ্যে শহরে রয়েছে দুই লাখ ৫০ হাজার এবং পল্লী এলাকায় আট লাখ ২০ হাজার শিশু। তবে দেশে সার্বিকভাবে ৩৫ লাখ ৪০ হাজার শ্রমজীবী শিশু রয়েছে। এর মধ্যে শ্রমের বাইরে আছে ১৭ লাখ ৬০ হাজার।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) পৃথক দুটি জরিপ প্রতিবেদন থেকে এই পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে জরিপ প্রতিবেদন দুটি প্রকাশ করা হয়। জরিপে ৫ থেকে ১৭ বছরের বয়সী শিশুদের শিশুশ্রমিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নীতি অনুসরণে এ জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

জরিপ প্রকাশ উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার এতে প্রধান অতিথি ছিলেন। আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশে আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর টোমু পোটিয়াইনেন, ঢাকায় যুক্তরাজ্যের ডেপুটি হাইকমিশনার মাতো ক্যানেল, পরিসংখ্যান ও তথ্য বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন প্রমুখ। বিবিএসের মহাপরিচালক মিজানুর রহমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

বিবিএস বলছে, সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ৪৩টি খাতকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আর পাঁচটি খাতে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে ৩৮ হাজার আটজন শ্রমজীবী শিশু। এসব শিশু ৪০ হাজার ৫২৫টি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। তবে অটোমোবাইল ওয়ার্কশপে রয়েছে ২৪ হাজার ৯২৩ জন শিশু। আর আগুন, গরম যন্ত্রপাতি, বিপজ্জনক বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এসবের সংস্পর্শে আসে ২০ দশমিক দুই শতাংশ শিশু।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিবিএসের অডিটোরিয়ামে গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। বিবিএস মহাপরিচালক মো: মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো: শহীদুজ্জামান সরকার। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন, ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার ম্যাট ক্যানেল এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কান্ট্রি ডিরেক্টর তমো পুটিয়ানিন। মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন খান।

বিবিএস বলছে, প্রতিবেদনে জাতীয় গণনার সাথে শ্রমজীবী শিশু, শিশুশ্রম এবং ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ ২০২২ অনুসারে পাঁচ থেকে ১৭ বছর বয়সী ৩৫ লাখ ৪০ হাজার শ্রমজীবী শিশু রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা পল্লী এলাকায় বেশি। বলা হয়েছে, বাংলাদেশে পাঁচ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের জনসংখ্যার পরিসংখ্যানবিষয়ক তথ্য রয়েছে। এই বয়সের মোট শিশু জনসংখ্যা তিন কোটি ৯৯ লাখ ৬০ হাজার। যেখানে পাঁচ থেকে ১১ বছর বয়সী ৫৫.২ শতাংশ। দেশে দুই কোটি ৭৬ লাখ ৩০ হাজার খানায় (পরিবারে) পাঁচ থেকে ১৭ বছর শ্রমজীবী শিশু রয়েছে। স্কুলে উপস্থিতির হার বর্তমানে ৩৪ দশমিক ৮১ শতাংশ।

জরিপ থেকে প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যায়, শিশুশ্রমিকের ৮২ শতাংশ তাদের নিজস্ব বাড়িতে বসবাস করে। উৎপাদনে ৩৩ দশমিক ৩ শতাংশ এবং কৃষি, বনায়ন ও মাছ ধরায় ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ শিশু নিযুক্ত রয়েছে। সামগ্রিকভাবে শিশুশ্রমিক কর্মচারী হিসেবে শ্রেণিভুক্ত ৬৮ দশমিক ৮ শতাংশ। আর স্কুলে যায় ৫২ দশমিক দুই শতাংশ। শিশুশ্রমিকের গড় মাসিক আয় ৬ হাজার ৬৭৫ টাকা। এছাড়াও ২০ লাখ ১০ হাজার শিশু গৃহকর্মী রয়েছে। যাদের পারিশ্রমিক দেয়া হয় না। ৮০ হাজার শিশু শ্রমিক যারা পারিশ্রমিক প্রাপ্ত। উভয় ক্ষেত্রেই পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি। তিনটি প্রাথমিক সেক্টর যেখানে কৃষি ১০ লাখ ৭০ হাজার, শিল্প ১১ লাখ ৯০ হাজার এবং পরিষেবা ১২ লাখ ৭০ হাজার শিশুশ্রমিক রয়েছে।

জরিপের প্রাক্কলিত ফলাফল পাওয়া যায় পাঁচ থেকে ১৭ বছর বয়সী মোট ৩৮ হাজার আটজন শ্রমজীবী শিশু উল্লিখিত সেক্টরগুলোর অন্তর্গত ৪০ হাজার ৫২৫টি প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত রয়েছে। এই ঝুঁকিপূর্ণ সেক্টরগুলোতে কর্মরত সব শ্রমজীবী শিশুদের মধ্যে ৯৭ দশমিক ৬ শতাংশ ছেলে এবং দুই দশমিক ৪ শতাংশ মেয়ে। পাঁচটি সেক্টরের মোট শ্রমজীবীর শিশুদের মধ্যে শুঁটকি মাছ উৎপাদনে রয়েছে ৮৯৮ জন, চামড়াজাত পাদুকা শিল্পে রয়েছে পাঁচ হাজার ২৮১ জন, ওয়েল্ডিং কাজ বা গ্যাস বার্নার মেকানিকের কাজে চার হাজার ৯৯ জন, অটোমোবাইল ওয়ার্কশপে রয়েছে ২৪ হাজার ৯২৩ জন, অনানুষ্ঠানিক স্থানীয় টেইলারিং এবং পোশাক খাতে দুই হাজার ৮০৫ জন শ্রমজীবী শিশু রয়েছে। শ্রমজীবী শিশুদের মধ্যে অটোমোবাইল ওয়ার্কশপে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিশু নিযুক্ত রয়েছে।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিবিএসের পক্ষ থেকে আমরা শুধু তথ্য তুলে ধরছি। আমরা মাঠ থেকে সত্য তথ্য তুলে এনে তা প্রকাশ করছি। সরকার শিশুশ্রম নিরসনে আন্তরিকতার সাথে কাজ করছে। আশা করা হচ্ছে ২০২৫ সালের মধ্যে দেশ থেকে শিশুশ্রম নিরসন করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, বিবিএস সত্য তথ্য দেয়। এর ওপর ভিত্তি করে সরকার পরিকল্পনা প্রণয়ন ও মূল্যায়ন করবে। আমাদের কাজ হলো মাঠ থেকে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য তুলে নিয়ে আসা। শিশুরা আমাদের ভবিষ্যৎ। তাই এটি খুব স্পর্শকাতর বিষয়। কিন্তু সব কিছু করতে গেলে একটা প্রক্রিয়া দরকার। আমরা আশা করব দ্রুত কর্মতৎপরতা চালিয়ে দেশ থেকে শিশুশ্রম নিরসন সম্ভব হবে।

author avatar
Online Editor SEO
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button