বেপরোয়া আনসার সদস্যরা, শজিমেক হাসপাতালে বাড়ছে ভোগান্তি!

আতিক রহমান, বগুড়া প্রতিনিধি

কথায় কথায় বেপরোয়া আচরণ! সাংবাদিক, পুলিশ, সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সাথেও হরহামেশা অসৌজন্যমূলক আচরণ করছেন বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা। বিভিন্ন সময়ে অতি তুচ্ছ কারণে রোগী বা রোগীর স্বজনদের সাথে অমানবিক আচরণেরও অভিযোগ উঠেছে শজিমেকে কর্মরত অনেক আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে। এমন আচরণে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীদের ভোগান্তি বাড়ছে।  রোগীর স্বজনদের পড়তে হচ্ছে বিব্রতকর অবস্থায়।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত কয়েক দিন থেকেই রোগী নিতে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না আনসার সদস্যরা- এমন অভিযোগ করা হয়েছে বাংলাদেশ অ্যাম্বুলেন্স মালিক কল্যাণ সমিতি বগুড়া জেলা শাখা থেকে। অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ভিতরে ঢুকলে গাড়ীর লুকিং গ্লাস ভাংচুর, চাকা পাংচার করে দেয়া হয়। এছাড়া অ্যাম্বুলেন্স চালক এবং সহযোগীদের সাথে দুর্ব্যবহার করা হয়। যে কারণে গত ক’দিন যাবৎ তারা অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতালের বাইরে থেকে রেফার্ড রোগী এবং লাশ বহন করে নিয়ে যাচ্ছে।

গুগল নিউজে ফলো করুন Mohona TV গুগল নিউজে ফলো করুন Mohona TV

তাদের অভিযোগ, তাদেরকে হাসপাতালে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না অথচ ভেতরে সিএনজি স্ট্যান্ড করা হয়েছে। সেখান থেকে সিরিয়াল মেইনটেন করে সিএনজিতে করে রোগী বহন করা হচ্ছে। যে রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সে নিতে হবে তাকে বাধ্য হয়ে রোগীরা সিএনজি অটোরিকশায় করে নিয়ে যাচ্ছে। এদিকে হাসপাতালের ভেতর অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে না দেয়ায় রোগী নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে স্বজনদের। লাশ কিংবা রেফার্ড রোগী অন্যত্র নিয়ে যেতে মুখে অক্সিজেন লাগানো অবস্থায় ট্রলিতে করে হাসপাতালের মূল দরজার বাইরে নিয়ে আসতে হচ্ছে রোগীকে। এরপর অ্যাম্বুলেন্সের সাথে চুক্তি করে রোগীকে উঠানো হচ্ছে।  এতে করে করে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। রোগী এবং স্বজনদের। বাদ যায়নি পুলিশ কর্মকর্তাও।

গত ২৪ অক্টোবর সোমবার অসুস্থ সন্তানের চিকিৎসা করাতে এসে আনসার সদস্যদের হাতে মারধরের শিকার হন পুলিশ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম ও তার স্ত্রী রুমা আকতার। ঘটনাটি হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডের সামনে ঘটে। শহিদুল ইসলাম সিরাজগঞ্জের জেলার চৌহালী থানায় সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) পদে কর্মরত। শহিদুল দম্পতির শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ২১ অক্টোবর শুক্রবার শজিমেক হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়।

ঘটনার দিন সোমবার ১০টার দিকে চিকিৎসক ওয়ার্ডে প্রবেশ করে ভর্তিকৃত শিশুদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নিচ্ছিলেন। এ সময় শিশুর মা ছাড়া সবাইকে ওয়ার্ড থেকে বের করে দেয়া হয়। শহিদুল ইসলাম ওয়ার্ডের দরজায় দাঁড়িয়ে তার স্ত্রীর মোবাইল ফোন ও ব্যাগ জানালার সাথে রেখে পাহারা দিচ্ছিলেন। সেখানে ডিউটিরত আনসার সদস্য রুবেল দরজার সামনে থেকে শহিদুল ইসলামকে সরে যেতে বলেন। শহিদুল ইসলাম নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন, দরজার সামনে থেকে সরে গেলে ফোন এবং ব্যাগ হারিয়ে যেতে পারে। এ কথায় আনসার সদস্য রুবেল পুলিশ কর্মকর্তার সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন।

একপর্যায় সহকারী আনসার কমান্ডার মেজবাহ ঘটনাস্থলে এসে পুলিশ কর্মকর্তা শহিদুলকে ধরে উপপরিচালকের কক্ষের সামনে নিয়ে মারধর শুরু করেন। স্বামীকে ধরে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে স্ত্রী রুমা আকতার উদ্ধার করতে গেলে আনসার সদস্যরা তাকেও মারধর করেন বলে জানান শহিদুল ইসলাম। শজিমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা খবর পেয়ে পুলিশ কর্মকর্তা শহিদুল ও তার স্ত্রীকে আনসার সদস্যদের কবল থেকে উদ্ধার করেন।

এছাড়াও গত ১ জুন বুধবার বিকালে হাসপাতাল প্রাঙ্গনে মিনারুল নামে এক আনসার সদস্য ছুরিকাহত হন। হাসপাতালে বহিঃবিভাগের ১ নম্বর গেটে মাস্ক পরা নিয়ে এক ব্যক্তির সাথে আনসার সদস্যদের বাকবিতণ্ডা হয়।  একপর্যায়ে ওই ব্যক্তির পক্ষ নিয়ে আরো কয়েকজন সেই বাকবিতণ্ডায় যোগ দেন। পরে সেখানে তাদের অতিরিক্ত আনসার সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং বাকবিতণ্ডতায় জড়িত যুবকরা ভুল স্বীকার করলে তখনই তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

কিন্তু সেই ঘটনার জের ধরে বুধবার তারা শজিমেকে এসে মিনারুলের পেটে ও হাতে ছুরিকাঘাত করে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বাজে আচরণ করে মাস্ক পড়তে বলাতেই ঘটনার সময় বাকবিতন্ডা শুরু হয়। এর জেরে পরদিন ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে।

বাদ যায়নি সাংবাদিকরাওঃ গত ২৩ সেপ্টেম্বর মারধরের শিকার সদর উপজেলা প্রকৌশল দপ্তরের নৈশপ্রহরীর সাথে কথা বলতে হাসপাতালে প্রবেশ করেছিলেন একাত্তর টেলিভিশনের রিপোর্টার শাহজাহান আলী ও মোহনা টেলিভিশনের বগুড়া প্রতিনিধি আতিক রহমান সহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিকবৃন্দ। ঐ প্রহরীর কাছে যাওয়ার আগেই তাদের থামিয়ে দেন আনসার সদস্যরা। এরপর কথা বলার এক পর্যায়ে তাদের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন তারা। এসময় সাংবাদিকদের সাথে চরম অসৌজন্যমুলক আচরণ করেন কয়েকজন আনসার সদস্য।

বাংলাদেশ অ্যাম্বুলেন্স মালিক কল্যাণ সমিতি বগুড়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বাকিরুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালের ভেতরে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে গেলে কিছুক্ষণ দেরি হতেই আনসার সদস্যরা চালকদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন। চাকা পাংচার করে দেন। এছাড়া ৩/৪টা গাড়ির লুকিং গ্লাস এর আগে ভাংচুর করা হয়েছে। রোগীকে নিচে নামাতে তো সময় লাগে তাই না। কিন্তু তাদের কথা ৫ মিনিটের মধ্যে গাড়ী সরাতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলেই অ্যাম্বুলেন্স এবং চালকদের সাথে তারা দুর্ব্যবহার শুরু করে দেন।

বগুড়া আনসার-ভিডিপির জেলা কমান্ড্যান্ট শেখ ফিরোজ আহমেদ বলেন, আমি হাসপাতালে গিয়ে প্রতি ১৫ দিনে একবার করে তাদের ব্রিফ করে আসি। তাদেরকে বোঝানো হয় ‘একজন লোক যখন সার্ভিস নিতে আসে তখন তাদের মাথা থাকে গরম, তারা থাকে অসুস্থ তারা যা বলুক আপনারা কিছু বলবেন না। আপনাদের কেউ যদি পেটায়, আপনারা কিছু বলতে পারবেন না’ আমাদের ডিজি স্যারের নির্দেশনা আছে সেবাগ্রহিতাদের কেউ যেন লাঞ্ছিত না হয়। বঞ্চিত না হয়। কিন্তু আসলে আমরা কেউ নিয়মের মধ্যে দিয়ে যেতে চাই না। সবাই আসলে মারমুখী। তিনি বলেন, অন্যান্য মেডিকেলের চেয়ে জিয়া মেডিকেলের আনসার সদস্যদের আচরণ তুলনামূলক অনেক ভালো।

বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডাঃ আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, হাসপাতালে কোন স্ট্যান্ড করা হয়নি। তবে রোগী নিয়ে এসে হাসপাতালের ভেতরে অনেক সময় তারা অপেক্ষা করে। রোগীর স্বজনদের সাথে হাসপাতালে দায়িত্বপ্রাপ্ত আনসার সদস্যদের যাচ্ছেতাই আচরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অ্যাগ্রেসিভ তেমন না, আসলে অ্যাটেডেন্স অনেক বেশি থাকে। তাদেরকে নির্দেশনা দেয়া আছে এরপরেও অনেকে আছেন স্বল্পশিক্ষিত যে কারণে একটু সমস্যা হয়।

author avatar
Editor Online
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button