অর্থনীতি

৩৮টি ব্যাংককে দুর্বল ব্যাংক হিসেবে চিহ্নিত: বাংলাদেশ ব্যাংক

মোহনা অনলাইন

দেশের ৫৪টি ব্যাংকের অবস্থা বিশ্লেষণ করে ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ মোট ৩৮টি ব্যাংককে দুর্বল ব্যাংক হিসেবে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক গোপন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ব্যাংক এখন দুর্বল। 

৫৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১২টির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক, যার ৯টি ইতিমধ্যে রেড জোনে চলে গেছে। ‘রেড জোনের’ ব্যাংকগুলো সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে। ইয়েলো জোনে আছে ২৯টি ব্যাংক; এর মধ্যে ৩টি ব্যাংক রেড জোনের খুব কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে। ইয়েলো জোনের ব্যাংকগুলো দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। অন্যদিকে মাত্র ১৬টি ব্যাংক গ্রিন জোনে স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে ৮টিই বিদেশি ব্যাংক। অর্থাৎ গ্রিন জোনে দেশীয় ব্যাংকের সংখ্যা মাত্র ৮টি।

২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বিগত ছয়টি অর্ধবার্ষিক সময়ে ৫৪টি ব্যাংকের তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। দেশে সবল ব্যাংকের সঙ্গে যখন দুর্বল ব্যাংক একীভূত করার আলোচনা জোরালো হচ্ছে, তখনই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গোপন প্রতিবেদনে এমন ভয়াবহ তথ্য উঠে এল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ টিবিএসকে বলেন, অর্থনীতির আকারের তুলনায় দেশে ব্যাংকের সংখ্যা বেশি। ‘আর যেগুলো বেশি দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর বেশিরভাগই রাজনৈতিক বিবেচনায় অথবা ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা কেউ নিয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাংকগুলো দক্ষতার সঙ্গে ভালোভাবে চালালে কোনো প্রশ্ন উঠত না। বরং সময়মতো এগুলোকে মনিটরিং না করে উল্টো বিভিন্ন সময় নানা ছাড় দেওয়া হয়েছে। তখন ব্যবস্থা নিলে এই তালিকা এত দীর্ঘ হতো না।’

ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে চারটি ব্যাংক (বেসিক ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংক), চারটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক (পদ্মা ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও এবি ব্যাংক) এবং একটি বিদেশি ব্যাংক (ন্যাশনাল ব্যাংক অভ পাকিস্তান) রেড জোনে পড়েছে।

৩টি বাণিজ্যিক ব্যাংক ইয়েলো জোনে পড়েছে (বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং সোনালী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক)। এই ব্যাংকগুলোর অবস্থান রেড জোনের কাছাকাছি।

ইয়েলো জোনে থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে ৩টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, ১৯টি প্রচলিত বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং ৮টি শরিয়াহভিত্তিক ইসলামী ব্যাংক রয়েছে।

এই ব্যাংকগুলো হলো: সোনালী ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ওয়ান ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এনআরবিসি ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক ও পূবালী ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিল্প গড়ের তুলনায় এ ব্যাংকগুলোর স্বাস্থ্য তুলনামূলক খারাপ হওয়ায় এসব ব্যাংকে তদারকি প্রয়োজন। আর রেড জোনে পড়া ব্যাংকগুলোর জন্য বিশেষ মনোযোগ প্রয়োজন।

গ্রিন জোনে থাকা ব্যাংকগুলো হলো: প্রাইম ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, হাবিব ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, ব্যাংক আলফালাহ, ব্যাংক এশিয়া, সীমান্ত ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, উরি ব্যাংক, এইচএসবিসি, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, সিটি ব্যাংক এনএ, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশ ও স্টেট ব্যাংক অভ ইন্ডিয়া।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণ রয়েছে ১.৪৫ লাখ কোটি টাকা। রেড জোনে থাকা ১২টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা মোট খেলাপি ঋণের ৬২ শতাংশ।

 

 

author avatar
Online Editor SEO
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button