বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

সিমকার্ডের আবিষ্কার ও বিবর্তন

মোহনা অনলাইন

আমরা মোবাইলে যে সকল সিমকার্ড ব্যবহার করি কখনও কি জানতে চেয়েছি সিমকার্ড কে আবিষ্কার করেছেন? তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক সিমকার্ড সর্বপ্রথম কে আবিষ্কার করেছেন এর পুরো নাম কি এবং সিমকার্ডের ইতিহাস সম্পর্কে।

সিম কার্ডের পুরো নাম সাবস্ক্রাইবার আইডেন্টিফিকেশন মডিউল ( গ্রাহক সনাক্তকরণ মডিউল)। অর্থাৎ এর নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে সিমকার্ড মূলত সেসব তথ্য বহন করে যেগুলো দ্বারা কোনো ব্যবহারকারীকে শনাক্ত করা যায়।

সিমকার্ডের আরেকটি মূল কাজ হলো ব্যবহারকারীকে ‘গ্লোবাল সিস্টেম অব মোবাইল কমিউনিকেশন’ সংক্ষেপে জিএসএম-এ সংযুক্ত করা। দ্বিতীয় জেনারেশনের নেটওয়ার্ক, সংক্ষেপে টু-জি, আবিষ্কারের পর থেকে জিএসএম-ই হচ্ছে সেলুলার যোগাযোগ ব্যবস্থার মূল ভিত্তি। এরপর এই নেটওয়ার্কগুলোর যত উন্নয়ন এবং অগ্রগতি সাধিত হয়েছে যেমন থ্রি-জি, ফোর-জি; এগুলো হচ্ছে মূলত জিএসএম-এরই উন্নত রূপ। চলুন আজ সিমকার্ডের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যাক।

সিমকার্ডের ধারণাটি নিয়ে আসে সর্বপ্রথম ‘ইউরোপিয়ান টেলিকমিউনিকেশনস স্ট্যান্ডার্ড ইন্সটিটিউট’। তারপর এটির মানোন্নয়ন এবং বাস্তবরূপ প্রদান করে ‘জাইসেক অ্যান্ড ডেভরিয়েন্ট’ নামক ব্যাংকনোট সিকিউরিটি এবং স্মার্টকার্ড নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বিশেষজ্ঞ একটি জার্মান কোম্পানি।

প্রথম আবিষ্কার হওয়া সেই সিমকার্ডগুলোর আকার ছিলো একটি কার্ডের সমান। বর্তমানে সিম ক্রয় করার পর যে বড় কার্ডটির মাঝে মূল সিমের বিভিন্ন আকারের অংশগুলো থাকে ঠিক সেই কার্ডটির আকারের সমানই ছিলো প্রথমে বের হওয়া সিমকার্ডগুলো। কার্ডগুলোতে তথ্য ধারণক্ষমতা ছিলো ৩২ থেকে ১২৮ কিলোবাইট পর্যন্ত। যেখানে এসএমএস-এর মেসেজ এবং ফোনবুকের কন্টাক্ট নম্বরগুলো সংরক্ষণ করে রাখা যেত।

ছবি সংগৃহীত

এরপর দিনে দিনে সিমকার্ডগুলো আকার ও আকৃতির মাঝে এসেছে অনেক পরিবর্তন, হয়েছে বিবর্তন। যত দিন গিয়েছে সিমকার্ডের আকার তত ছোট হয়েছে। আসুন এবার দেখা যাক সিমকার্ডগুলোর আকৃতি পরিবর্তনের ধারাটি।

 

ছবি সংগৃহীত

মিনি সিম : ১৯৯৬ সালে ক্রেডিট কার্ড আকৃতির সিমগুলোর (যেগুলোকে বর্তমানে ‘ফুল-সাইজড’ বা 1FF বলা হয়) জায়গা দখল করে নেয় মিনি-সিম। ১৯৯০ সালের শেষের দিক থেকে পরবর্তী এক যুগ যাদের কাছে মুঠোফোন ছিলো তাদের কাছে মিনি-সিমগুলো ছিলো পরিচিত একটি বস্তু। তখনকার প্রত্যেকটি মুঠোফোনে মিনি-সিম ব্যবহার করার মতো উপযোগী ট্রে থাকতো। মিনি-সিম যে বিশেষ সুবিধা বয়ে এনেছিলো ব্যবহারকারীদের জন্য তা হলো তারা খুব সহজেই অন্য বা নতুন ফোনে নিজেদের সিমকার্ডটি তুলে ব্যবহার করতে পারতেন।

 

Micro Sim ছবি সংগৃহীত

মাইক্রো সিম : স্মার্টফোনের প্রচলন শুরু হওয়ার পর থেকে মাইক্রো-সিমের প্রচলনও শুরু হয়ে যায়। তবে মাইক্রো-সিমের ছডিয়ে পড়ার পেছনে অ্যাপলের ভূমিকাই সবথেকে বেশি। অ্যাপলের তাদের নতুন জেনারেশনের স্মার্টফোনের জন্য ফোনের ভেতরে কিছুটা স্থান ফাঁকা রাখার প্রয়োজন ছিলো। এজন্য অ্যাপল তাদের আইফোন ৪ বের করার পাশাপাশি মিনি-সিম থেকে মাইক্রো-সিমে চলে আসে। তবে মাইক্রো-সিম কিন্তু ২০১০ সালে আবিষ্কার হয়নি। এটি আবিষ্কার হয়েছে তার অনেক আগেই; ২০০৩ সালে। মাইক্রো-সিম তৈরি করা হয়েছিলো সেসব ক্ষুদ্র ডিভাইসের কথা মাথায় রেখে যেগুলো আকারে ছোট হওয়ায় মিনি-সিম ব্যবহারে উপযোগী ছিলো না।

তবে এই সিমকার্ডটি ২০১০ সালের আগপর্যন্ত ব্যবহার করা হয়নি। অ্যাপল তাদের আইফোনে সর্বপ্রথম মাইক্রো-সিম ব্যবহার করা শুরু করার পর থেকে প্রায় সকল স্মার্টফোনেই মাইক্রো-সিম ব্যবহারের প্রচলন শুরু হয়ে যায়।

Neno sim ছবি সংগৃহীত

ন্যানো সিম : স্মার্টফোন আবিষ্কারের পর প্রতিবছরই কোম্পানিগুলো তাদের মডেলগুলোর মানোন্নয়ন করে থাকে। অ্যাপল তাদের আইফোন ৫ বের করার সাথে সাথে ফোনটিতে আকারে আরো ছোট সিমকার্ড ব্যবহার করা সিদ্ধান্ত নেয়। যার ফলে সৃষ্টি হয় ন্যানো-সিমকার্ডের। তবে অ্যাপলের এই সিদ্ধান্তে প্রথমদিকে ক্রেতাদের একটু সমস্যার মুখেই পড়তে হয়। কারণ পুরনো আইফোন থেকে নতুন আইফোন ৫-এ আসতে বা অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের আইফোন ৫ ব্যবহার করতে ন্যানো-সিমের দরকার ছিলো। এজন্য হয় তাদেরকে নতুন সিম কিনতে হয়েছিলো বা অ্যাডাপটার ব্যবহার করে পুরনো সিম ন্যানো আকৃতিতে কেটে ফেলতে হয়েছিলো।

eSim ছবি সংগৃহীত

ই-সিম : ই-সিম হচ্ছে ফোনে ইনস্টল করা ভার্চুয়াল সিম। ই-সিমের পুরো নাম এমবেডেড সাবস্ক্রাইবার আইডেন্টিটি মডিউল। এটি ফিজিক্যাল সিম কার্ডের মতো নয়। আপনি একটি ই-সিম কিনলে কলিং ও মেসেজিংসহ সব কাজই করবে। তবে আপনাকে এটি ফোনে রাখতে হবে না। এটি টেলিকম কোম্পানির মাধ্যমে ওভার-দ্য-এয়ার সক্রিয় থাকে।

ই-সিমের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, আপনি যদি সিম কোম্পানি পরিবর্তন করেন। তবে আপনাকে সিম কার্ড পরিবর্তন করতে হবে না। এমনকি ফোন ভিজে গেলেও এ সিমের কোনো সমস্যা হবে না। বারবার খোলার ঝামেলাই যেহেতু নেই, তাই এ সিম নষ্ট হওয়ারও আশঙ্কা নেই।

৭ মার্চ ২০২২ সালে সর্বপ্রথম পরিবেশবান্ধব ই-সিমের দুনিয়ায় প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। টেক সার্ভিস লিডার ও ডিজিটাল বাংলাদেশের কানেক্টিভিটি পার্টনার গ্রামীণফোন দেশে প্রথমবারের মতো এই সিম চালু করেছে। প্রিপেইড (নিশ্চিন্ত), পোস্টপেইড (মাই প্ল্যান), মাইগ্রেশন (প্রিপেইড এবং পোস্টপেইড) তিনভাবেই ব্যবহিৃত হচ্ছে গ্রামীণফোনের ই-সিম। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে ই-সিমের ব্যবহার বেড়ে হবে ৩.৪ বিলিয়ন।

author avatar
Online Editor SEO
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button