জাতীয়

বাংলাদেশি জাহাজে নাবিকদের বাড়ছে মুক্তির অপেক্ষা

মোহনা অনলাইন

সোমালিয়ার উপকূলে ২৩ নাবিকসহ জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর মুক্তির বিষয়ে জলদস্যুরা এখনো যোগাযোগ করেনি। যোগাযোগ না করায় দস্যুদের সঙ্গে সমঝোতা করার জন্য অপেক্ষা বাড়ছে। 

মালিকপক্ষ জানায়, সর্বশেষ শনিবার (১৬ মার্চ) রাতে যোগাযোগ করে জাহাজটি একই অবস্থানে থাকার তথ্য নিশ্চিত করেছে মালিকপক্ষ। গতকাল রোববার (১৭ মার্চ) সন্ধ্যা পর্যন্ত যোগাযোগের তথ্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘নাবিকেরা সুস্থ আছেন, এতটুকু বলতে পারি। জাহাজও একই অবস্থানে রয়েছে। তবে দস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি এখনো, যদিও আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।’

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী জানান, এমভি আবদুল্লাহ সোমালিয়ার উপকূলের একেবারে কাছেই রয়েছে। যুদ্ধ ছাড়া এ রকম উপকূলীয় এলাকায় আরেক দেশের সীমানায় অভিযান চালানো যায় না।

দস্যুরা কখন যোগাযোগ করতে পারে জানতে চাইলে ১৩ বছর আগে সোমালিয়ার দস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়া এমভি জাহান মণি জাহাজের মাস্টার ক্যাপ্টেন ফরিদ আহমেদ শনিবার (১৬ মার্চ) রাতে জানান, ‘দস্যুরা নিজেদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় নেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই সাধারণত যোগাযোগ করে। যোগাযোগের জন্য তাদের প্রতিনিধি থাকে। স্যাটেলাইট ফোনেই তারা যোগাযোগ করে। ক্যাপ্টেন ফরিদ আহমেদ বর্তমানে কানাডায় অবস্থান করছেন’।

আগের ঘটনাগুলোতে দস্যুরা মুক্তিপণ দাবি করার জন্য এক থেকে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত সময় নিয়েছে। এ সময় তারা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে। মুক্তিপণ দাবি করার জন্য আসল অঙ্ক যা ঠিক হবে, তার চেয়ে বেশি দাবি করে থাকে দস্যুরা। দর–কষাকষি কিংবা আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছাতে হয়। দস্যুরা মুক্তিপণ দাবি করার পরই আলোচনার পরিবেশ তৈরি হবে।

এদিকে জিম্মি জাহাজে থাকা ২৩ নাবিকের খাবার ও পানি কমে আসছে। জলদস্যুদের কবলে পড়ার সময় এমভি আবদুল্লাহে ২৫ দিনের খাবার ও পানি মজুত ছিলো। সেই হিসাবে এখন ওই জাহাজে যে পরিমাণ খাবার ও পানি আছে, তাতে আরও ২০ থেকে ২১ দিন চলার কথা। তবে এখন জিম্মি নাবিকদের পাশাপাশি জলদস্যুরা জাহাজে অবস্থান করছে।

কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, নাবিকেরা সুস্থ আছেন, এতটুকু বলতে পারি। জাহাজও একই অবস্থানে রয়েছে। তবে দস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি এখনো, যদিও আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।

অন্যদিকে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের মালিক বাংলাদেশি, নাবিকেরাও বাংলাদেশি। জাহাজের মালিকপক্ষ নাবিকদের জীবন বাঁচানোকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশি জিম্মি জাহাজ ছিনতাই করার সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেভাল ফোর্সের একটি জাহাজ পিছু নিয়েছিল। তবে কোনো অভিযান পরিচালনা করেনি। কারণ, নাবিকদের জীবনের শঙ্কা থাকায় বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ জিম্মি জাহাজে অভিযানের জন্য অনুমতি দেয়নি।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, ‘এমভি আবদুল্লাহ সোমালিয়ার উপকূলের একেবারে কাছেই রয়েছে। যুদ্ধ ছাড়া এ রকম উপকূলীয় এলাকায় আরেক দেশের সীমানায় অভিযান চালানো যায় না। আবার দস্যুরা যেহেতু নাবিকদের জিম্মি করে রেখেছে, এখন কোনো অভিযান হলে নাবিকদের জীবন বিপন্ন হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। নাবিকদের প্রাধান্য দিতে গেলে সমঝোতার বিকল্প নেই। মালিকপক্ষ যেহেতু নাবিকদের জীবনকে প্রাধান্য দিচ্ছে, তাই এখানে দস্যুদের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে ছাড়িয়ে আনা সম্ভব’।

জিম্মি নাবিক ও জাহাজ উদ্ধারে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, গত শনিবার চট্টগ্রাম নগরের দেওয়ানজি পুকুর লেনের ওয়াইএনটি সেন্টারে মতবিনিময়কালে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের টেলিভিশনে কী দেখাচ্ছে, কী হচ্ছে—সেটি কিন্তু যারা হাইজ্যাক করেছে তারা দেখে, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশের সব টেলিভিশন দেখার সুযোগ আছে। যখন এই বিষয়কে অতি গুরুত্ব দেওয়া হয়, জিম্মিদের পরিবারের প্রতিক্রিয়া যখন ওরা দেখে, তখন হাইজ্যাককারীদের অবস্থান আরও অনমনীয় হয় এবং হচ্ছে। এই নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট (নেতিবাচক প্রভাব) হচ্ছে।’

author avatar
Online Editor SEO
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button