চট্টগ্রামসংবাদ সারাদেশ

খুললো কক্সবাজারে রেল যোগাযোগের দ্বার, জেলা জুড়ে খুশির জোয়ার

আমানুল হক বাবুল, কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রথমবারের মতো আজ চট্টগ্রাম – দোহাজারী থেকে কক্সবাজার চলাচল করছে পরীক্ষামূলক ট্রেন।
আজ রোববার (৫ নভেম্বর ) সকাল ৯টা ২০মিনিটের দিকে চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ছেড়েছে পরীক্ষণমূলক ট্রেনটি। জিআইবিআর স্পেশাল টেনটি বিকেল ৫টার দিকে কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশন পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক আকাশ পথের পর রেলপথেও যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ায় উচ্ছ্বসিত কক্সবাজারের মানুষ। আগামী ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইকনিক রেল স্টেশন শুভ উদ্বোধন করবেন। স্থানীয়রা জানান, রেল চলাচলের মাধ্যমে  যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করা গেলে পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ঘটবে। বিশেষত বিদেশি পর্যটক সমাগত আরও কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। যাত্রীবাহী ট্রেন ছাড়াও পণ্যবাহী ট্রেন চালু হলে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের পণ্য আনা-নেয়া সহজ হবে। আবার দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ কক্সবাজারে নানা ধরণের শিল্প কারখানা গড়ে তুলতেও সহায়ক হবে।
ঝিনুক  আকৃতির আইকনিক রেল স্টেশন দেখতে আসা কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন (কক্সবাজার) টুয়াকের সাধারণ সম্পাদক লায়ন নুরুল করির পাশা বলেন, ট্রেন চালু হলে যোগাযোগ ব্যাবস্থা যেমন সহজ হবে। তেমনি পর্যটক শিল্পেও উন্নয়ন ঘটবে। কক্সবাজার সড়ক পথ,আকাশ পথের পর বাকী ছিল রেল যোগাযোগ এটি আজ বাস্তবে পরিণত হচ্ছে। শুনেছি আজ প্রথম পরীক্ষামূলক ট্রেন কক্সবাজারে আসবে। সেটি দেখার জন্য আসছি।
ঝিনুক আকৃতির আইকনিক রেল স্টেশন ছবি সংগৃহীত
কক্সবাজার চেম্বারের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করা গেলে পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ঘটবে। বিশেষত বিদেশি পর্যটক সমাগত আরও কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। যাত্রীবাহী ট্রেন ছাড়াও পণ্যবাহী ট্রেন চালু হলে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের পণ্য আনা-নেয়া সহজ হবে। আবার দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ কক্সবাজারে নানা ধরণের শিল্প কারখানা গড়ে তুলতেও সহায়ক হবে।
তিনি আরও বলেন, এ রেল  যোগাযোগে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসবে। আর যোগাযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। যখন পরিবহনে খরচ ও সময় কমছে, তখন শিল্প কারাখানা গড়ে ওঠা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
দেশের অন্যতম পর্যটন স্পট  হিমছড়ির  ইজারাদার অধ্যাপক নুরুল আমিন সিকদার ভুট্টো বলেন, ট্রেন যুগে প্রবেশ করাটা আমাদের জন্য বিশাল ব্যাপার। এটির মাধ্যমে পর্যটক বিকাশ ঘটবে যেমন তেমনি যোগাযোগ মাধ্যম সহজ করবে। এটি আমাদের জন্য ঈদের মত খুশি বিরাজ করছে।
রেলপথ পরিদর্শন অধিদপ্তরের সরকারি রেল পরিদর্শক রুহুল কাদের আজাদ বলেন, জিআইবিআর স্পেশাল ট্রেন সকাল ৯টা ২০মিনিটের সময় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়েছে। সর্বোচ্চ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। উন্নত যত প্রযুক্তি রয়েছে সবগুলোই এই রেলপথে ব্যবহার করা হয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় রেল ভায়াডাক্ট এ পথে নির্মাণ করা হয়েছে। এতে করে রেললাইন হয়ে হয়েছে সুপার ট্র্যাক। ১২০ কিলোমিটার গতিতে এ রেলপথে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। এ প্রকল্পে যুক্ত থাকতে পেরে খুব ভালো লাগছে। সবাই আনন্দিত।
স্থানীয়রা আরও জানান, কক্সবাজারে আগে কোনো রেলপথ ছিল না। স্বাধীনতার অর্ধশতবর্ষ পর কক্সবাজার রেল আসছে। আজ প্রথমবারের মতো ট্রেন চট্টগ্রাম  থেকে কক্সবাজারে আসছে যেটি একটি বড় আনন্দের বিষয়।
দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মো. সুবক্তগীন বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের ইন্সপেকশন টিম দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ পরিদর্শন করবেন। রোববার সকাল ৮টায় চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের পথে ট্রেন চলবে। এই ট্রেনে করে তারা এই রেলপথের বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়াবে এবং আস্তে আস্তে আসবে। একই সঙ্গে বিভিন্ন এই নব-নির্মিত রেলপথের ব্রীজগুলোতেও দাঁড়াবে। মূলত উদ্বোধনের আগে দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ খুঁটিনাটি সব বিষয় পর্যবেক্ষণ করবেন বাংলাদেশ রেলওয়ের ইন্সপেকশন টিম। সকালে ট্রেনটি ছাড়লেও কক্সবাজার পৌছাতে পৌছাতে বিকেল হয়ে যাবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১১ নভেম্বর কক্সবাজার থেকে প্রধানমন্ত্রী দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করবেন।
সম্ভব্য ট্রেনের সময় নির্ধারণ
ঢাকা থেকে রাত ৯টা ১০ মিনিটে যাত্রা করে সকাল সাড়ে ৬টায় কক্সবাজারে পৌঁছাবে। কক্সবাজার থেকে দুপুর ১টায় যাত্রা করে রাত ৯টা ১০ মিনিটে ঢাকায় ফিরবে। ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ঢাকা থেকে কক্সবাজারের সর্বোনিম্ন ৫১৫ টাকা। সর্বোচ্চ এসি বার্থে ভাড়া পড়বে ২,০৩৬ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে সর্বনিম্ন ৫৫ থেকে সর্বোচ্চ ৭৭৮ টাকা।
চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) ও বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এবং চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) ও বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড পৃথক দুই ভাগে কাজটি করছে।
দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের আওতায় ৩৯টি বড় সেতু, ২২৩টি ছোট সেতু ও কালভার্ট, বিভিন্ন শ্রেণির ৯৬টি লেভেল ক্রসিং। হাতি চলাচলের জন্য রয়েছে আন্ডারপাস।  দুইটি আন্ডারপাস আছে। নির্মাণ করা হয়েছে ৯টি স্টেশন। স্টেশনগুলো হলো- দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজরা, ইসলামাবাদ, রামু ও কক্সবাজার।
author avatar
Delowar Hossain Litu
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button