জীবনধারা

গরমে শিশুর বিশেষ যত্ন

মোহনা অনলাইন

ঋতু বৈচিত্র্যের দেশ বাংলাদেশ। চলছে গরমের মৌসুম। তাপমাত্রার এই ব্যাপক তারতম্যের স্বাস্থ্যঝুঁকির প্রথম শিকার হয় শিশুরা। তাপপ্রবাহে যে কোনও বয়সের মানুষেরই সতর্ক থাকা প্রয়োজন। বিশেষত ছোটদের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া দরকার।

প্রচণ্ড গরমে শিশুদের বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়। যেমন ডায়রিয়া হলে দ্রুত পানিশূন্যতা হওয়া, ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা, অতিরিক্ত ঘাম থেকে সর্দি–কাশি, জ্বর, খাবারে অনীহা ইত্যাদি। এ সময় হাসপাতালে শিশুসহ নানা বয়সী ডায়রিয়ার রোগীর আধিক্য দেখা যায়। শিশুদের কিছু অসুস্থতার সঙ্গে তাদের মেজাজও খিটটিটে হয়ে যায়। গরমে শিশুদের সুস্থ রাখতে প্রয়োজন বাড়তি যত্ন। এক্ষেত্রে  যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে পারেন-

পর্যাপ্ত পানি পান: গরমে শিশুর পানিশূন্যতা যেন না হয় সেজন্য নির্দিষ্ট সময় পর পর পানি অথবা ফলের রস খাওয়ান। শিশুর পছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন সিজনাল ফলও খাওয়াতে পারেন। চাইলে ডাক্তারের পরামর্শে স্যালাইন কিংবা গ্লুকোজ খাওয়াতে পারেন। তবে যেসব শিশুদের বয়স ৬ মাসের কম, তাদের ক্ষেত্রে মায়ের বুকের দুধই একমাত্র খাদ্য। সেক্ষেত্রে বার বার বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।

সুতি কাপড়: বর্তমান সময়ে মা বাবারা তাদের সন্তানের ফ্যাশন নিয়ে যথেষ্ট চিন্তা ভাবনা করেন। তবে গরমের ক্ষেত্রে যে কোনো ফ্যাশনেবল পোশাকের চেয়ে সুতি ঢিলাঢালা আরামদায়ক জামা শিশুর জন্য উপযুক্ত। কেননা গরমে বাচ্চারা ঘামে, সুতি কাপড়ের পানি শোষণ ক্ষমতা বেশি। আর কোনোভাবেই সিনথেটিক কাপড় ব্যবহার করা যাবে না।

শিশুর প্রসাধনী: গরমের সময়টাও শিশুদের জন্য খুবই ঝুঁকির। কারণ আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়। গরমে সূর্যের তাপ বেশি। তাই শিশুর ত্বক নরম ও কোমল রাখতে বাড়তি যত্নের দরকার। গরমে শিশুর স্বস্তির জন্য কিছু প্রসাধনীর প্রয়োজন পড়ে। এ বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে- যেন শিশুর প্রসাধনী মানসম্পন্ন হয়।

নরম খাবার দিন: যেসব শিশুর বয়স ৬ মাসের বেশি তাদের জন্য পরিপূরক খাবার নির্বাচন করতে হবে। সহজে পরিপাক ও শোষণ হবে এমন শাক সবজি, মাছ, খিচুড়ি বাচ্চাকে দিতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয়, যদি একজন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পুষ্টিকর সহজপাচ্য খাবার খাওয়ানো যায়।

ঘরের মধ্যে খেলার ব্যবস্থা: খেলাধুলা শারীরিক মানসিক বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ । তবে প্রচণ্ড গরমে দৌড়াদৌড়ি ছোটাছুটি করলে শিশু ঘেমে গিয়ে ঠান্ডা লাগতে পারে। তাই ঘরেই ফ্যানের নিচে শিশুর খেলার ব্যবস্থা করুন। তার জন্য বিভিন্ন ইনডোর গেমস যা শারীরিক পরিশ্রম ছাড়াই ঘরে বসেই খেলা যায় তার ব্যবস্থা করুন।

নিয়মিত গোসল: গরমে শিশুদের খুব দ্রম্নতর্ যাশ ও ঘামাচি উঠে। তাই গরমের দিনে শিশুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। গোসলের সময় ভাঁজযুক্ত জায়গা যত্ন সহকারে পরিষ্কার করতে হবে। গোসলের পানিতে ডেটলও দিতে পারেন।

দূরপাল্লার ভ্রমণ পরিহার করুন: শিশুদের শরীর বড়দের চেয়ে নাজুক হয়। তাই গরমে বাচ্চাকে নিয়ে দূর পাল্লার ভ্রমণে না যাওয়াটাই ভালো হবে। বিশেষ করে বদ্ধ গাড়ি কিংবা বাসে ভ্রমণ করা একেবারেই উচিত না।

শিশুর চুলের যত্ন: এই গরমে আদরের ছোট্ট সোনামণির চুলের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। গরমে শিশুর বেশির ভাগ চুলের গোড়া ঘেমে যায়। এতে মাথায় খুশকি ও ঘামাচি বের হয়। তাই গরমের শুরুতেই শিশুর চুল ছোট রাখতে হবে। তাই যতটা সম্ভব চুল কেটে ছোট করে দিন।

কড়া রোদ পরিহার: কড়া রোদ যে কোন বয়সী মানুষের জন্য ক্ষতিকর। তাই শিশুকে নিয়ে বাইরে বের হলে হাতে ছাতা নিয়ে বের হওয়া ভালো। সম্ভব হলে হালকা টুপি বা পাতলা স্কার্ফ দিয়ে শিশুর মাথা ঢেকে দিন। সাথে পানি রাখুন। একটু পর পর শিশুকে পানি খাওয়াতে থাকুন।

ঘরে আলো-বাতাস চলাচল: শিশুর ঘরে যেন পর্যাপ্ত আলো বাতাস চলাচল করে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। দরজা জানালা যতটা সম্ভব খোলা রাখতে হবে। সম্ভব হলে শিশুকে বারান্দায় বসিয়ে খেলার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এসি বা ফ্যানের বাতাস আরামদায়ক হলেও প্রাকৃতিক আলো বাতাসই উত্তম।

author avatar
Online Editor SEO
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button