Top Newsরাজনীতি

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ‘হস্তক্ষেপ’ নিয়ে চিন্তিত প্রার্থীরা

মোহনা অনলাইন

সবার নজর এবার প্রথম অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া স্থানীয় সরকারের উপজেলা নির্বাচনের দিকে । ৮ মে অনুষ্ঠিত হবে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপ। আসন্ন নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে দলীয় প্রতীক ও সমর্থন ছাড়াই করার কৌশল নিয়েছে আওয়ামী লীগ। যেহেতু দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে না, তাই এবার দল থেকে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না।

আওয়ামী লীগের নেতাদের মতে, এমন কর্মকৌশল নিয়ে গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর বিপরীতে দলেরই স্বতন্ত্রদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মাধ্যমে প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে আওয়ামী লীগ। যার ফলে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের সমমনা দলগুলো নির্বাচন অংশ না নিলেও নির্বাচন তুলনামূলক গ্রহণযোগ্য হয়েছে বলে মনে করেন দলটির নেতারা।

একই কৌশল হিসেবে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন দলীয় প্রতীক ছাড়াই করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে বেশির ভাগ উপজেলায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মাঠে নেমেছেন। অর্থাৎ তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগের বিপরীতে আওয়ামী লীগের নেতারাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই অবস্থায় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘাত ও সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীদের অপহরণসহ মারধরের ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি গড়িয়েছে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যন্ত।

 অন্যদিকে, স্থানীয় সংসদ সদস্যরা (এমপি) তাদের নিজস্ব বলয়ে রাখতে চাইছেন উপজেলাগুলো। আবার ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও চাচ্ছেন, তাদের বলয়ের মধ্যে থাকুক উপজেলার চেয়ার। এমন এক বা একাধিক বলয়ের বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে প্রার্থীদের। তবে, একাধিক প্রার্থী জানিয়েছেন, তারা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রী কিংবা কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপ চান না। কোনো রকম প্রভাব ছাড়াই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন প্রত্যাশা তাদের।

আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে বিভিন্ন জায়গায় নিকটাত্মীয়দের মনোনয়ন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন উন্মুক্ত মানে উন্মুক্ত পরিবেশে নির্বাচন করার ইচ্ছা-বাসনা অনেকেরই থাকতে পারে। আমাদের বক্তব্য হলো, এমপি সাহেবরা বা মন্ত্রী-মহোদয়রা কোথাও কোনো প্রভাব বিস্তার করবেন না। প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকবে। প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কেউ হস্তক্ষেপ করলে তা যেন সফল করতে না পারে। আর প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর কেউ দলীয় নির্দেশ অমান্য করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নিকটাত্মীয়ের মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মো. আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে উপজেলা আওয়ামী লীগের অভিযোগ প্রসঙ্গে কাদের বলেন, ‘আমরা এগুলো জানি। তদন্ত করে খোঁজখবর নিচ্ছি।’

আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন নেতাকর্মীরা। কারণ, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দল থেকে প্রতীক ও কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়া হচ্ছে না। এতে যে যার মতো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

বর্তমান সংসদ সদস্য ও তার আশেপাশের নেতাকর্মীরা উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে পারে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থী ব্যারিস্টার সোহরাব খান চৌধুরী বলেন, “তারা (ক্ষমতাসীন দল) একশ ভাগ প্রভাব বিস্তার করবে। আমি নিরপেক্ষ নির্বাচন চাচ্ছি, প্রভাবমুক্ত নির্বাচন চাচ্ছি, যেখানে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে। ভোট দিতে পারে।”

মঙ্গলবার (১৭ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, মন্ত্রী-এমপিরা যেন প্রভাব বিস্তার না করেন। নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে হয়, কেউ কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করবে না। প্রশাসন কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করবে না। নির্বিঘ্নে ভোটদানের ব্যবস্থা করেছে নির্বাচন কমিশন। বিএনপি প্রকাশ্যে উপজেলা নির্বাচনের বিরোধিতা করলেও আমাদের জানা মতে তাদের অনেকেই অংশগ্রহণ করবেন।”

২০১৫ সালে আইন সংশোধন করে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দেওয়ার বিধান যুক্ত করা হয়। ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এখনও আইনে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বিধান আছে। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনও বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।

তাদের অনুপস্থিতিতে নির্বাচনকে প্রতিযোগিতামূলক করতে আওয়ামী লীগ এবার উপজেলায় দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দিচ্ছে না। দলটির নেতারা প্রার্থী হচ্ছেন। অন্যদিকে, শুরুতে এ নির্বাচনে কিছু জায়গায় প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও শেষ পর্যন্ত সেখান থেকে সরে এসেছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির যেসব নেতা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন, তাদের তা প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

author avatar
Online Editor SEO
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button