জীবন সায়াহ্নে এসেও নির্যাতনের শেষ হয়নি বীরঙ্গনাদের,মৃত্যুর আগেই তালিকাভুক্ত করে নেওয়ার দাবি
রাজশাহীর চারঘাটার বীরাঙ্গনা সফুরা শারীরিকভাবে অসুস্থ। চিকিৎসা করাতো দূরের কথা, ক্ষুধা নিবারণের প্রস্তুতি থাকে না কখনও কখনও। উপরন্তু কোথাও গেলে উপহাসের পাত্রী হতে হয় তাকে।
যেদিন থেকে তাঁর আত্মত্যাগের কথা চারপাশের মানুষ জেনেছে, সেদিন থেকে বীরাঙ্গনা শব্দটা তাঁর কাছে গালি হয়ে উঠেছে। এখন তাঁর শরীরের ক্ষত বহনের সাথে সাথে এ অপমান বইতে হচ্ছে তাঁকে। এর অবসান চান শুধু সফুরাই নন, আসমা বেগম, খাদিজা বেগম, শাহরুনসহ আরো ষাটের অধিক বীরাঙ্গনা। মৃত্যুর আগে তাঁরা চান রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। চান মুক্তিযোদ্ধার সম্মান।
গতকাল বৃহস্পতিবার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন যৌন সহিংসতার শিকার বীরাঙ্গনা নারীদের প্রথম সংহতি সম্মিলনে তাঁরা এ দাবি জানান। সম্মেলন শেষে উন্নয়ন সংস্থা নারীপক্ষের নাসরিন হক মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে তাদের দাবি ও বর্তমান প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন সংস্থার সদস্য ও নারীনেত্রী শিরীন হক। এসময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সদস্য সাফিয়া আজিম ও আইনজীবী আফরোজা পারভীন।
শিরীন হক বলেন, ২০১১ সালে স্বাধীনতার ৪০ বছর পরে নারী নির্যাতন পক্ষে আমরা মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতনের শিকার নারীদের নিয়ে কাজ শুরু করি। আমরা মনে করি, নির্যাতনের শিকার নারীর অধিকার আদায়ের প্রশ্ন এলে সবার আগে বীরাঙ্গনাদের অধিকার ও সম্মান নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমান সরকার এই নারীদের ‘মুক্তিযোদ্ধা’র সম্মান দিলেও সবাই এখনও তালিকাভুক্ত হতে পারেনি। তাদের স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, খাদ্য ও বাসস্থান নিশ্চিত হয়নি ৫০ বছরেও। বয়সের ভারে তাদের অনেকেই এখন আর কোনো কাজ করতে না পেরে ভিক্ষাবৃত্তির জড়িয়ে পড়েছে।
তিনি জানান, কুড়িগ্রাম, রাজশাহী ও ময়মনসিংহের ৮৫জন বীরাঙ্গনার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নারীপক্ষ। এদের কেউ কেউ এখন মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেলেও অনেকেই দীর্ঘদিন আবেদন করে কোনো সুরাহা করতে পারছে না। সরকারি ভাতা কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো উৎস থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে বীরাঙ্গনাদের কয়েকজন তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য ও চিকিৎসার খরচ বহন করতে পারছিলেন, বর্তমানে আর পারছেন না বলে জানান তিনি।
যারা তালিকাভুক্ত আছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই নিয়মিত ভাতা প্রাপ্তিতে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন। তাদের বয়স এবং নিরক্ষরতার কারনে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যাংকে অর্থ উত্তোলনের জন্য পরিবারের অন্য সদস্যদের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। বয়স এবং জীবন অভিজ্ঞতার কারণে অনেকেই আবার মানসিকভাবে বিপর্যন্ত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের ছেলেমেয়েরা মোট অর্থ না দিয়ে, না জানিয়ে নিজের খরচ বাবদ কিছু অংশ রেখে দেয়।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নারীপক্ষ ৪৬জন বীরাঙ্গনাকে ৫০০০ টাকা করে অনুদান দিলে পরিবারে তাদের অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হয়। তাদের গ্রহনযোগ্যতা বাড়ে। কিন্তু মূল্যস্ফীতির কারণে এ অবস্থা ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। বিজয় দিবসকে সামনে রেখে শিরীন হক সকল নারী মুক্তিযোদ্ধার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দাবি করেন। পাশাপাশি নারী মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কথা সম্মানজনক ভাবে উপস্থাপন করার আহ্বান জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, এদিন সকালে অনলাইনে সম্মিলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে তিন জেলার বীরা ঙ্গনা নারী এবং মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দ্বারা যৌন সহিংসতার শিকার রোহিঙ্গা নারীরা অংশগ্রহণ করেন।