খেলাধুলা

ব্রাজিলের গোল উৎসব

মোহনা অনলাইন

কাতার বিশ্বকাপে ব্রাজিলের লক্ষ্য ছিল ২০ বছর পর দেশকে আবার বিশ্বকাপ উপহার দেওয়া। তবে শেষ চার বিশ্বকাপের মতো হতাশা দিয়েই শেষ হয়েছে সেই মিশন। সেই হতাশা ভুলে আরও একটি বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছে ব্রাজিল। নিজেদের মাঠে হওয়া বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্রথম ম্যাচে বলিভিয়াকে উড়িয়ে দিয়েছে সেলেসাওরা। ম্যাচে গোলের দেখা পেয়েছেন দীর্ঘদিন পর জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়ানো নেইমার।

শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) ভোরে বেলেমে অনুষ্ঠিত ম্যাচ পূর্ববর্তী সকল আলোচনাই ছিল নেইমার পেলের রেকর্ড ভাঙতে পারবেন কি না তা নিয়ে। প্রথমে পেনাল্টি মিস করলেও জোড়া গোল করে নেইমার বুঝিয়ে দেন দিনটা ছিল তারই। জোড়া গোল করেছেন, করিয়েছেনও। নেইমারের জাদুকরী দিনে ব্রাজিলের কাছে বলিভিয়া উড়ে গেছে ৫-১ গোলে। নেইমারের মতো জোড়া গোল করেছেন রদ্রিগো। অন্য গোলটি রাফিনিয়ার। আর এদিন গোল করে নেইমার ছাড়িয়ে গেছেন পেলেকেও। ব্রাজিলের হয়ে সর্বোচ্চ গোল এখন নেইমারের (৭৮)।

ঘরের মাঠে বলিভিয়ার বিপক্ষে ব্রাজিল শুরুটা ছিল ব্রাজিলের মতোই দাপুটে। বল দখল ও আক্রমণ দুটিতেই এগিয়ে ছিল সেলেসাওরা। মাত্র ২ মিনিটের মাথায় নিজের উপস্থিতির জানান দেন নেইমার। ১০ মিনিটে গোলের সুযোগও তৈরি করে ব্রাজিল। কিন্তু ব্রুনো গিমারায়েস সঠিক সময়ে বল পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হওয়ায় গোল পাওয়া হয়নি ব্রাজিলের। ম্যাচের ১৫ মিনিটে রদ্রিগো-নেইমারের সমন্বিত আক্রমণের চাপ সামলাতে না পেরে ব্রাজিলকে পেনাল্টি উপহার দেয় বলিভিয়া। আর এই পেনাল্টি নেইমারের সামনে সুযোগ করে দেয় ব্রাজিল জাতীয় দলের হয়ে গোলে পেলেকে ছাড়িয়ে সবার ওপরে ওঠার। কিন্তু সেই সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেননি নেইমার। তার মাটি কামড়ানো দুর্বল শট সহজেই ঠেকিয়ে দেন বলিভিয়া গোলরক্ষক ভিসকারা।

নেইমার না পারলেও অবশ্য গোল পেতে সমস্যা হয়নি ব্রাজিলের। ২৪ মিনিটে রাফিনিয়ার শট ঠেকান প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক। সেই বল বলিভিয়ার এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে চলে আসে রদ্রিগোর সামনে। কাছাকাছি জায়গা থেকে লক্ষ্যভেদ করে দলকে এগিয়ে দিতে বেগ পেতে হয়নি রদ্রিগোকে। ৩৩ মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ এসেছিল ব্রাজিলের সামনে কিন্তু সেই সুযোগ গোলে রূপান্তরিত হয়নি। ৪০ মিনিটে জাদু দেখান নেইমার। দারুণভাবে ড্রিবল করে ঢুকে পড়েন প্রতিপক্ষ বক্সের ভেতর। কিন্তু শেষ বাঁধাটি আর পার করতে পারেননি। তার প্রচেষ্টা ফের ঠেকিয়ে দেন ভিসকারা। শেষ পর্যন্ত আর কোনো গোল না হওয়ায় এক গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় ব্রাজিল।

বিরতির পর ব্রাজিল যেন আরও ধারাল। একের পর এক আক্রমণে প্রতিপক্ষ রক্ষণকে ব্যস্ত রাখে তারা। ৪৭ মিনিটে নেইমারের কাছ থেকে বল পেয়ে ডান প্রান্ত দিয়ে দারুণ ফিনিশিংয়ে ব্রাজিলকে ২-০ গোলের লিড এনে দেন রাফিনিয়া। ৫৪ মিনিটে নেইমারের দারুণ এক চিপ শট থেকে তৈরি হওয়া আক্রমণে গিমারায়েসের কাছ থেকে বল পেয়ে গোল করেন রদ্রিগো। কিন্তু অফসাইড পজিশনে থাকা রিচার্লিসন বলিভিয়ান খেলোয়াড়কে বাধা দিয়েছেন কিনা সেটা লম্বা সময় ধরে ভিআরের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই গোলের সিদ্ধান্ত দেন রেফারি।

৩-০ গোলে এগিয়ে গিয়ে তখন রীতিমতো উড়ছিল ব্রাজিল। ব্রাজিলের খেলাতেও ফুটে উঠছিল সেই আত্মবিশ্বাস। যার ধারাবাহিকতায় নেইমার পেয়ে যান পেলেকে ছাড়িয়ে যাওয়া গোলটিও। ম্যাচের ৬১ মিনিটে দুর্দান্ত এক দলীয় আক্রমণ থেকে লক্ষ্যভেদ করে ব্রাজিলকে ৪-০ ব্যবধানে এগিয়ে দেন নেইমার। এই গোলটি করে ব্রাজিলের জার্সিতে সর্বোচ্চ গোলে এককভাবে চূড়ায় উঠেছেন এই ফরোয়ার্ড। এর ফলে পেলের ৭৭ গোল ছাড়িয়ে নেইমারের গোল এখন ৭৮। চার গোলে পিছিয়ে পড়া বলিভিয়া সান্ত্বনার একটি গোল পায় ৭৮ মিনিটে। যদিও সেই গোল ম্যাচের ভাগ্যে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। উল্টো যোগ করা সময়ে নিজের দ্বিতীয় গোলটিও আদায় করে নেন নেইমার। যার ফলে ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্রথম ম্যাচটিতে দাপটের সঙ্গে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ল সেলেসাওরা।

author avatar
Mohona Online
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button