বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

মহাকাশে নতুন ‘সৌরজগতের’ সন্ধান দিল কেপলার

মোহনা অনলাইন

সূর্যের চেয়েও বড় নক্ষত্র। গনগনে আগুনের আঁচ। আকারে আয়তনে পেল্লায় সেই দানব নক্ষত্রকে ঘিরে পাক খাচ্ছে সাত সাতটি গ্রহ। চলন, বলন ঠিক নাকি পৃথিবীরই মতো। কিন্তু পৃথিবীর থেকেও আকারে বড়। ওই সাতটি গ্রহ আর তাদের সূর্যকে নিয়ে মহাকাশে আরও এক সৌরজগতের সন্ধান পেল নাসা।

ই সৌরমণ্ডলের নাম কেপলার-৩৮৫ সিস্টেম। নাসার শিকারি টেলিস্কোপ এই নতুন সৌরজগতের হদিশ দিয়েছে। খোঁজ মিলেছে সাত সাতটি ভিনগ্রহের যারা নাকি পৃথিবীরই মতো।

মহাকাশে প্রাণের খোঁজ করতে গিয়ে বারে বারেই অবাক হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই হয়তো পৃথিবীর মতোই নীল গ্রহের খোঁজ মিলল। আবার এমন গ্রহ দেখা গেল যার পিঠ থেকে ভসভস করে উঠে আসছে জলের ধোঁয়া। অতএব ভিন গ্রহেও যে প্রাণ থাকতে পারে তা একপ্রকার নিশ্চিত বিজ্ঞানীরা। অপেক্ষা শুধু হাতে নাতে প্রমাণের। দিনকয়েক আগে বিজ্ঞানীদের একটি খোঁজ রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছিল। আমাদের সৌরমণ্ডলের মতোই নাকি আরও একটা সৌরজগত আছে। সেখানে লাল বামন নক্ষত্রকে ঘিরে পাক খাচ্ছে দুটি যমজ গ্রহ।

নাসার কেপলার স্পেস টেলিস্কোপে আবিষ্কার হয়েছে কেপলার-৩৮৫ সিস্টেমের কেন্দ্রে রয়েছে দানব নক্ষত্র আর তাকে ঘিরে চক্কর কাটছে সাতটি গ্রহ। নক্ষত্রের একদম কাছের দুটি গ্রহ আকারে আয়তনে পৃথিবীর থেকে বড়। তাদের পাথুরে জমি, রুক্ষ-বন্ধুর পরিবেশ। বাকি পাঁচটি গ্রহ আকারে আরও বড়। পৃথিবীর চেয়ে ভর প্রায় দ্বিগুণ। ওই পাঁচটি গ্রহকে ঘিরে রয়েছে রহস্যময় মেঘ।

নাসার বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এখনও পর্যন্ত ৪৪০০ গ্রহের খোঁজ দিয়েছে কেপলার। এর মধ্যে ৭০০টি মাল্টি-প্ল্যানেট সিস্টেম (নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণকারী একাধিক গ্রহের সংসার)। কিন্তু একই পরিবারে ছ’টি বা তার বেশি গ্রহ রয়েছে, এমন সংসার খুব কমই দেখতে পেয়েছে কেপলার। ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালিতে নাসার ‘এমস রিসার্চ সেন্টার’-এর বিজ্ঞানী জ্যাক লিসাউয়ের বলেন, ‘‘কেপলারের সন্ধান দেওয়া গ্রহগুলি নিয়ে একটি ক্যাটালগ তৈরি করছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের চরিত্র, বৈশিষ্ট্য… এ সব উল্লেখ রাখা হচ্ছে তাতে। এ বারে ওই তালিকায় কেপলার-৩৮৫-র নাম সংযোজন হল।’’ তিনি জানাচ্ছেন, কেপলার-৩৮৫-এর কেন্দ্রস্থলে রয়েছে সূর্যের মতো একটি তারা। তবে সূর্যের থেকে এটি ১০ শতাংশ বড়। ৫ শতাংশ বেশি গরম। নক্ষত্রটির কাছাকাছি থাকা গ্রহ দু’টি পৃথিবীর থেকে সামান্যই বড় আকারে। পাথুরে জমি। পাতলা বায়ুস্তরও থাকতে পারে। বাকি গ্রহগুলি বেশ বড়। এক-একটির ব্যাসার্ধ পৃথিবীর ব্যাসার্ধের দ্বিগুণ। বিজ্ঞানীদের অনুমান, এই গ্রহগুলিতে মোটা বায়ুস্তর রয়েছে।

আসলে এই ব্রহ্মাণ্ডে নানা জাতের, নানা গোত্রের গ্রহ আছে। কেউ পৃথিবীর মতো, কেউ পৃথিবীর চেয়ে ছোট ‘সাব-আর্থ’ আবার কেউ পৃথিবীর চেয়ে বড় ‘সুপার আর্থ।’ এই সুপার আর্থগুলিতে জল ও কার্বন থাকার সম্ভাবনা বেশি। সুপার আর্থদের তাপমাত্রাও হয় অনেকটা পৃথিবীর মতোই। অর্থাৎ হ্যাবিটেবল জ়োন বা প্রাণের বাসযোগ্য পরিবেশ রয়েছে। খান পঞ্চাশেক এমন গ্রহের খোঁজ মিলেছে যাদের নিয়ে এখন নাড়াচাড়া করছেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবীর যমজও বেরিয়ে পড়েছে এই ফাঁকে, এক্সোপ্ল্যানেট ‘টিওআই ৭০০ ডি’। নীলপানা গ্রহ ঠিক যেন নতুন পৃথিবী। এখনও পর্যন্ত পাঁচশোরও বেশি গ্রহ, বামন গ্রহ ও উপগ্রহের খোঁজ মিলেছে যাদের সঙ্গে পৃথিবীর বিস্তর মিল। এই গ্রহগুলির মধ্যে কেপলার-৪৫২বি-ই আমাদের সৌরজগতের গ্রহগুলোর মতো, জল থাকার সম্ভাবনা প্রভূত বেশি।

author avatar
Online Editor SEO
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button