সন্তান লালন পালন করা সহজ কাজ নয়। তাদের ভবিষ্যৎ গড়তে কখনো কখনো কঠোর হতে হয় আবার কখনো ভালোবাসা দিয়ে তাদের মন জয় করতে হয়। প্রত্যেক বাবা-মা তার সন্তানকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে চান। কারও কারও সন্তান বেশ বাধ্য হয় ঠিকই, কিন্তু কোনও কোনও শিশুর মধ্যে দেখা যায় বাঁধনছাড়া জেদ! সেই খুদে এতটাই জেদি হয় যে, কোনওভাবেই বাবা-মায়ের কথা শুনতে চায় না। তখন সন্তানকে সামলাতে গিয়ে হিমশিম খান অভিভাবকেরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক্ষেত্রে দায়ী থাকে কিছু পেরেন্টিং মিসটেক! অর্থাৎ অভিভাবকদের ভুলেই জেদি হয়ে ওঠে শিশু। চলুন জেনে নেওয়া যাক আপনার কোন কোন ভুলে শিশু আরও জেদি হয়ে ওঠে ও কিভাবে তার সমাধান করবেন-
শিশু নির্যাতন: আপনি যদি সন্তানের সঙ্গে নম্র গলায় কথা না বলেন সব সময় বকাবকি বা চিৎকার করেন তাহলে সন্তান ও আপনার ব্যবহার অনুকরণ করার চেষ্টা করবে। একই সাথে আপনার রাগ ও খুব শিশু মনে ও রাগের জন্ম দেবে। এভাবে ধীরে ধীরে শিশু অবাধ্য ও জেদী হয়ে ওঠে। মনে রাখবেন আপনি যদি সম্মানের সঙ্গে কথা বলেন তাহলে সন্তান ও আপনার কাছে থেকে ইতিবাচক আচরণ শিখবে।
সন্তানের সব কথা মেনে নেন: একজন শিশুর মধ্য়ে ভালো-মন্দ বিচারের ক্ষমতা থাকে না। কিন্তু একজন প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে আপনার মধ্য়ে তো সেই ধারণা রয়েছে। তাই শিশুর সব কথা মেনে নেবেন না। সে যে ভুল করছে, তা তাকে বুঝিয়ে দিন। তার সঙ্গে চোখে চোখ রেখে ভালো করে বুঝিয়ে বলুন। আপনি যদি তার সব আবদার না মেনে নেন, তাহলে শিশুও নিজের সীমাবদ্ধতা বুঝতে শিখবে।
বাড়ির পরিবেশ: যদি আপনার বাড়িতে নেতিবাচক পরিবেশ থাকে ও সারাক্ষণ মারামারি ঝগড়া বা উত্তেজনা দেখা দেয় তাহলে তার প্রত্যক্ষ প্রভাব শিশুর ওপর পড়ে। এ ধরনের শিশুরা ঘরের বাইরে ও রাগ করে থাকে এমনকি মানুষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে পারে।
সবার সামনে সমালোচনা করেন: প্রত্যেক শিশুর মধ্য়ে আত্মসম্মান জ্ঞান থাকে। তবে অনেক বাবা-মা সেই নিয়ে কোনও ভাবনা চিন্তা করেন না। আর তাই সবার সামনেই সন্তানের নিন্দা করতে শুরু করেন। অন্যের সঙ্গে তুলনা করেন, এমনকি খুব খারাপভাবে সমালোচনা করতে পিছপা হন না। আর আপনার এই ভুলই সন্তানের মনে প্রভাব ফেলে এবং সে হয়ে ওঠে জেদি। আপনাকে সে মনে মনে অপছন্দ করতে শুরু করে। তাই এবার থেকে সচেতন হন ও এমন সমালোচনা করা বন্ধ করুন।
বাবা মায়ের আচরণ: যদি মা-বাবা একে অপরের সঙ্গে সম্মান দিয়ে কথা বলে ও শিশুদের সামনে একে অপরের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার না করে তাহলে শিশুর ব্যক্তিত্ব ভালো প্রভাব পড়ে। যখন কোন অভিভাবক তাদের সন্তানদের একে অপরের সঙ্গে তুলনা করে তখন সন্তানের মনে রাগ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
প্রশংসা বা উৎসাহ জরুরি: আপনার সন্তান কখনও কখনও প্রশংসা শুনতে চায়। এটি তার মনোবলও বাড়ায়। তাই শিশুর প্রশংসা করতে ভুলবেন না। এতে তার কাজের উৎসাহ বাড়বে। সে আরও ভালোভাবে সেই কাজটি করবে এবং জেদ করাও কমাবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
মেজাজ শৃঙ্খলা: আপনার সন্তান যদি রাগান্বিত হয় তবে কিছুক্ষণ পরেই তাকে শৃঙ্খলা সম্পর্কে জ্ঞান দিতে হবে। আপনি যদি তাকে খারাপ মেজাজে কিছু শেখান তবে সে আরো বেশি বিরক্ত হবে। এছাড়া মনে রাখবেন আপনি যদি রাগান্বিত হন তবে প্রথমে শান্ত হন ও পরে তাকে শৃঙ্খলার জ্ঞান দিন। তাই আজ থেকেই শিশুকে সৌজন্য প্রকাশ করতে শেখান। তার কাছে যেটি রয়েছে এবং সে যা পাচ্ছে, তার পরিবর্তে তাকে ধন্যবাদ জানাতে শেখান। দেখবেন এতে আপনার শিশু অনেকটাই শুধারবে।
একঘেয়েমি: আপনি যদি সারাদিন শিশুর সামনে একই বিষয় নিয়ে কথা বলেন তাহলে সে বিরক্ত হয়ে যাবে ও আরও জেদি হয়ে উঠবে। তাই একই বিষয় নিয়ে শিশুকে বারবার জেরা করবেন না তাহলে তাদের মেজাজ নষ্ট হতে পারে।