মাহমুদ শরীফ। লেখক, সাহিতিক, গবেষক। ছোটবেলা কেটেছে রাজশাহীতে। রাজশাহী ল্যাবরেটরী স্কুল, রাজশাহী কলেজ হয়ে বুয়েট থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। অতঃপর আই.বি.এ.থেকে এম.বি.এ। বি.সি.এস দিয়ে মাঝে কিছুদিন সরকারী চাকুরী। কিন্তু সাহিত্য গবেষণা আর শিক্ষকতার প্রতি নিদারুন মোহের কারনে বেশিদিন সরকারী চাকুরী করা হয়ে ওঠেনি। কানাডা যেয়ে ভূমিকম্প এবং ফায়ার ইঞ্জিনিয়ারীং এ মাষ্টার্স বা স্নাতকোত্তর। এরপর অটোয়া থেকে বিজনেস এডমিনিষ্টেধশনে পি.এইচ.ডি. ডিগ্রী লাভ। পরবর্তীতে জন প্রশাসনে পোষ্ট ডক্টরেট করেন হামিল্টনের মাকমাষ্টার্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
বর্তমানে বাংলাদেশের নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল এন্ড বিজনেস এন্ড ইকোনমিক্স এর একজন অধ্যাপক। একই সংগে কানাডার কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ প্রফেসর এবং একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন গবেষক। তার লেখা প্রায় শ খানেক প্রবন্ধ বিশ্বে শীর্ষ স্থানীয় জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
তার লেখা কিংবা সম্পাদিত সাতটি বই আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন প্রকাশনা সংস্থা যেমন: Springer, Emerald, Taylor and Francis থেকে বের হয়েছে যাপাশ্চাত্যের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণার জন্য ব্যবহার হয়।
সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ ছোটবেলা থেকে। কলেজে পড়ার সময়ই জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় লিখতেন। পরবর্তীতে সেই অনুরাগ দায়বদ্ধতায় এসে ঠেকে। নব্বই এর দশকে আদর্শ ভিত্তিক রাজনীতি মুছতে আরম্ভ
করলো। সমাজতন্ত্রের জায়গায় পাশ্চাত্যের প্রতিদ্বন্দী হলো মৌলবাদ! ধীরে ধীরে সাম্প্রদায়িকতায় বিষবাষ্প
সমগ্র পৃথিবী এবং এই মহাদেশকে ছেয়ে ফেললো এবং মুছে গেল আমাদের মানুষ পরিচয়! আমরা বিভক্ত হতে
থাকলাম নতুন পরিচয়ে হিন্দু, মুসলমান, খৃষ্টান, বৌদ্ধ, ইহুদী সহ নানান পরিচয়ে।
মানবতা নিভে গেল। আমরা আর মানুষ থাকলাম না! এমনকি প্রায়াশই বেঝা কঠিন হয়ে উঠল চার হাত-পা
বিশিষ্ট প্রাণীকূলের মধ্যে কে মানুষ, আর কে পশু!দায়বদ্ধতার শুরুটা তখন থেকেই। এই যাত্রা খুবই প্রতিকূল!
কারন এটা কোন জনপ্রিয় উপাখ্যান নয়। ইতিহাস নির্ভর গভীর সামাজিক-রাজনৈতিক বিশ্লেষনধর্মী এই
উপন্যাস লেখা বর্তমানে অধিকাংশ পাঠকের জন্য আকর্ষনীয় নয়! কিন্তু তারপর ও এগোতে হবে এই পথে। নাহলে এক সময় পুরোপুরি মুছে যাবে আমাদের মানুষ পরিচয়!
বর্তমান সমাজের দর্শন নিয়ে এই পর্যন্ত লেখকের নয়টি উপন্যাস বেরিয়েছে গত একযুগে। বাঙ্গালী প্রবাস
জীবন;অনন্তের পথে, বিমর্ষ সভ্যতায় এক রুদ্র নায়ক, অরুনোদয়ের অস্তাচল, নাটকের চতুর্থ পর্ব, লজ্জাহীন
মৃত্যুর গল্প, মানুষ হওয়ার কাল্পনিক গল্প, উত্তম প্রাণী, নিভে যাওয়া সকাল, মানুষ এই লেখকের উল্লেখযোগ্য
গ্রন্থ। এরমধ্যে “মানুষ হবার কাল্পনিক গল্প” উপন্যাসটি গত বছর আবু রুশদ সৃজনশীল সাহিত্য পুরুস্কার পেয়েছে।
এছাড়া আমেরিকার লুলু প্রকাশনী থেকে তার বিখ্যাত রাজনৈতিক বর্নবাদ বিষয়ে উপন্যাস The Prey Gets the Last Laugh প্রকাশিত হয়েছে ২০১৯ সালে। উপন্যাসটি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় পুস্তক বিক্রেতার মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে যেমন : Barnes and Noble, Chapters, Scribed, Amazon। এ উপনাসটি ২০২০ সালের কানাডার সাহিত ̈ পুরুস্কার Fred Kerner Book Award এর বাছাইয়ে ছিল। মূল্যবোধ, দেশপ্রেম এবং অসাম্প্রদায়িকতা – সর্বোপরি মানুষ পরিচয় নিয়ে এগিয়ে যেতে চায় উপন্যাসিক মাহমুদ শরীফ। যদিও উপন্যাসের বিচ্ছিন্ন এই পথটি দূর্গম!
আমাদের প্রিয় লেখক জনাব মাহমুদ আখতার শরীফের , লেখার সাথে পরিচিত হই ,ওনার অনন্তের পথে বইটির মাধ্যমে , কানাডা প্রবাসী বাঙালি পরিবারের গল্প , যাতে প্রতিফলিত হয়েছে ,এই দেশের শত শত ভাই-বোনদের বিদেশে গিয়ে থিতু হওয়ার অভিজ্ঞতা, তাঁর লেখনীতে সামগ্রিক পরিস্থিতি , বিশ্বের চলমান সংকট সম্পর্কিত প্রসঙ্গ বেশি পেয়েছি , কোনো একটি বইতে এমন ছিল চলমান বিশ্বে আমাদের যে সংকট -ধর্মীয় বিভেদ,জাতিগত বিভেদ , পশ্চিমা বিশ্বের অন্য দেশের নাগরিকদের প্রতি অবজ্ঞা , ইসরাইল -ফিলিস্তিন কিংবা সিরিয়ার সমস্যা, এই সব কিছুর মুলে , অর্থনৈতিক সুবিধা কিংবা আর্থিক লোভের কাছে ভালোবাসা, দায়িত্ব ,মানবতাবোধ মলিন হয়ে যাওয়া , সংখ্যার বিচারে প্রচলিত লেখকদের তুলনায় ,উনার পাঠকের সংখ্যা হয়তো কম মনে হবে কিন্তু বেড়ে চলছে -যা আনন্দের , এবং পরিনিত পাঠকরাই উনার লেখার ভক্ত । আমার ব্যাক্তিগত ধারণা (অনেকেই হয়তো দ্বিমত পোষণ করবেন ),আগামী ১০-২০ বছরের যে বাংলাদেশের সাহিত্যকে যারা এগিয়ে নিয়ে যাবেন, তাদের মাঝে লেখক মাহমুদ আখতার শরীফের নাম উচ্চারিত হবে , লেখকের সুসাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি , পরবর্তী লেখার প্রত্যাশায় আজকে শেষ করছি , সবাই ভালো থাকবেন । যুলকার নাইন -ঢাকা