Top Newsজাতীয়সংবাদ সারাদেশ

বর্ষবরণে শ্লীলতাহানি : ৯ বছরেও শেষ হয়নি বিচার

নয় বছর আগে ২০১৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় বর্ষবরণ উৎসবে বেশ কয়েকজন নারীকে শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটে। দীর্ঘ সময় পার হলেও এ ঘটনায় হওয়া মামলার বিচারকাজ শেষ হয়নি। তদন্ত সংস্থা পিবিআইয়ের দেওয়া চার্জশিটে ৩৪ জন সাক্ষীর মধ্যে নয়জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করেছিলেন আদালত। এদিকে সাক্ষী হাজির করে দ্রুত মামলাটির বিচার শেষ করার প্রত্যাশা জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।

বর্তমানে মামলাটি ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এর বিচারক শওকত আলীর আদালতে বিচারাধীন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৯ জুন মামলাটিতে একমাত্র আসামি কামালের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। ২০২২ সালের ১২ জানুয়ারি মামলার বাদী আবুল কালাম আজাদ সাক্ষ্য দেন। গত ১৫ জানুয়ারি পুলিশ উপ-পরিদর্শক মিরাজ হোসেন খান আদালতে সাক্ষ্য দেন। এ নিয়ে মোট ৩৪ সাক্ষীর মধ্যে ৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণের মাধ্যমে সাক্ষ্য সমাপ্ত করা হয়।

ওইদিন আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন আসামি কামাল। পরে গত ২৩ জানুয়ারি যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের জন্য ৩১ জানুয়ারি ধার্য করেন। তবে ওইদিন রায় প্রস্তুত না হওয়ায় আদালত রায় ঘোষণা পিছিয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারি ধার্য করেন। পরবর্তীতে ১৩ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করার আবেদন করেন।

আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি রায় থেকে উত্তোলন করে ফের সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য রাখা হয়। আগামী ১৫ এপ্রিল মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ধার্য রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, মামলাটিতে ৩৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে রায়ের পর্যায়ের আসে। তবে আমরা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আবেদন করি। পরে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি মামলাটি রায় থেকে উত্তোলন করে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য রাখা হয়।

রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মামলাটি পরিচালনা করা হচ্ছে। যে কয়জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে তাতে আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তবে আরও জোরালোভাবে অভিযোগ প্রমাণ করতে আমরা মামলাটি পুনরায় সাক্ষ্য গ্রহণের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।

তিনি আরও বলেন, ভিডিও ফুটেজে আসামি কামালের সম্পৃক্ততা দেখা গেছে। কামালকে একটু বোঝা যায়। প্রথমে মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। পরে আবার মামলাটি অধিকতর তদন্তে পাঠানো হয়। কামালকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করা হয়। এটা একটা চাঞ্চল্যকর মামলা। সাক্ষীদের হাজির করে মামলার বিচার দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করবো।

২০১৫ সালের ওই ঘটনায় সেদিন সন্ধ্যায় শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। নারীদের লাঞ্ছনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আটজনকে শনাক্তের পর গণমাধ্যমে ছবি প্রকাশ করে পুলিশ। তাদের ধরিয়ে দিতে এক লাখ টাকা করে পুরস্কারের ঘোষণাও দেন পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক।

একই বছরের ৯ ডিসেম্বর এ মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক দীপক কুমার দাস। প্রতিবেদনে আসামি খুঁজে না পাওয়ার কথা বলা হয়। তবে ওই প্রতিবেদন গ্রহণ না করে মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর তৎকালীন বিচারক জয়শ্রী সমাদ্দার।

২০১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক আব্দুর রাজ্জাক ব্যবসায়ী কামালকে একমাত্র আসামি করে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, তদন্তে আট লাঞ্ছনাকারীর মধ্যে কামাল নামে একজনকে খুঁজে পাওয়া গেছে। অন্য সাতজনকে খুঁজে না পাওয়ায় তাদের চার্জশিটে নাম অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। তাদের খুঁজে পাওয়া গেলে সম্পূরক চার্জশিট দেওয়া হবে। এ মামলায় ৩৪ জনকে সাক্ষী করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ১৯ জুন আদালত আসামি কামালের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।

আসামি পক্ষের আইনজীবী আনিসুর রহমান বলেন, মামলার এজাহারে কামালের নাম ছিল না। পুনঃতদন্তের পর চার্জশিটে তার নাম এসেছে। সে একজন গরীব মানুষ ও ডায়াবেটিসের রোগী। লালবাগের খাজী দেওয়ানে সে ফুটপাতে সবজির ব্যবসা করে। যেহেতু সে ডায়াবেটিস রোগী, এজন্য ওইদিন সে বের হয়েছিল হাঁটাহাটি করার জন্য। ওই ঘটনা ঘটার পরে জায়গাটা ফাঁকা হয়ে যায়। এরপর কামাল সেখানে হাঁটাহাটি করতে যায়। সেখানে যে কোনো ঘটনা ঘটছে, সে বিষয়ে কামাল কোনো কিছু জানত না। সে হেঁটে এসেছিল আর তার ছবি ওই ভিডিও ফুটেজে এসেছে। ফুটেজে এমন কিছু আসেনি যে, সে কাউকে ধরছে, টানছে বা শ্লীলতাহানি করছে। ভিডিও ফুটেজে তার ছবি আসার কারণে তাকে মামলায় জড়ানো হয়েছে। সে ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানে না।

তিনি বলেন, মামলায় তদন্ত কর্মকর্তাসহ নয়জন সাক্ষী দিয়েছেন। তাদের জেরা করা হলে আমার আসামির বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেনি। মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ হয়েছিল। সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত করে রায় ঘোষণার জন্য ছিল। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি রায় ঘোষণা থেকে উত্তোলন করে ফের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আবেদন করে। আদালত তা মঞ্জুর করেন। আশা করি, কামাল ন্যায়বিচার পাবেন এবং বিচারে খালাস পাবেন।

মামলার একমাত্র আসামি কামাল বর্তমানে জামিনে আছেন।

সূত্র : ঢাকা পোস্ট।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button