অসহনীয় গরমে রাজধানীসহ সারাদেশের মানুষ অস্থির। তবে তাপদাহের প্রভাব বেশি পড়ছে শিশুদের ওপর। ছোট-বড় সবাই গরমে কাবু হচ্ছে। অজান্তেই অসাস্থ্যকর খাবার পানি পানে দেখা দিচ্ছে ডায়রিয়া।
মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) বা কলেরা হাসপাতালে প্রতিদিন চিকিৎসা নিচ্ছে বহু রোগী। আইসিডিডিআরবি সূত্র জানায়, সাধারণ সময়ে গড়ে সাড়ে তিন শ’ রোগী ডায়রিয়া নিয়ে হাসপাতালটিতে আসে। অথচ গত এক সপ্তাহে গড়ে প্রতিদিন চিকিৎসা নিচ্ছেন পাঁচ শতাধিক রোগী। যার বেশির ভাগই শিশু।
হাসপাতালে আসা রোগীদের বেশির ভাগই বলছেন গরমের কারণেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন তারা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেন, বছরে দুই সময় যেমন বর্ষার শুরু ও শীতের আগের সময়টাতে ডায়রিয়া রোগীর চাপ বাড়ে। বর্তমানে গরম একটা কারণ ডায়রিয়া বাড়ার। তবে এই ডায়রিয়ায় তিন থেকে সাত দিনের মধ্যে এন্টিবায়োটিক ছাড়াই রোগী সুস্থ হয়ে যায়।
রাজধানীর শিশু হাসপাতাল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, মোহাম্মদপুরের ১০০ শয্যার মা ও শিশু হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত সপ্তাহের শুরু থেকেই গরমের কারণে শিশুদের হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে।
লালবাগ থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ১৫ দিনের শিশুকে নিয়ে এসেছেন তার বাবা। তিনি বলেন, এইটুকুন বাচ্চারে নিয়া হাসপাতালে আসা খুবই কষ্টের।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রেও জানা যায়, ডায়রিয়া, জ্বর, টাইফয়েড আর নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হয়েই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে শিশুরা। গরম বাড়ার আগে শিশু রোগী আসতো ১২০ থেকে ১৫০ জন। এখন সে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০০ থেকে ২৫০ জন।
রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে দেড় বছর বয়সী শিশু রিফাত হোসেনকে নিয়ে আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন বাবা রাশেদুল ইসলাম। তিনি আশঙ্কা করছেন, তীব্র গরমের কারণেই তার সন্তান ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছে।
রাশেদুল ইসলাম বলেন, গতকালও আমার বাচ্চা ভালো। রাতে তাকে সুস্থ নিয়েই ঘুমায়েছি। পরে আনুমানিক রাত ১টার দিকে হঠাৎ করে বাচ্চাটা কেঁপে উঠে কান্নাকাটি শুরু করে। তখন তাড়াহুড়া পরে ঘুম থেকে উঠে দেখি সে কান্নাকাটি করছে আর বারবার মোচড় দিচ্ছে। এর কিছুক্ষণ পরই শুরু হয় পাতলা পায়খানা। সারারাতই আমাদের এভাবে যায়। এরপর সকালে তাকে নিয়ে হাসপাতালে যাই, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাওয়াই। এরপরও কোনোভাবে পাতলা পায়খানা কমছিল না, তাই দুপুরের দিকে এই হাসপাতালে নিয়ে আসি।
এই সময়টায় ডায়রিয়া এবং নিউমোনিয়ার প্রকোপ বেশি থাকে তাই গরম থেকে শিশুদের দূরে রাখতে হবে, পর্যাপ্ত পানি খাওয়াতে হবে, নিয়ম মেনে গোসল করাতে হবে তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন, বেশিক্ষণ পানির সংস্পর্শে শিশুরা না থাকে।