হজযাত্রা: অনিশ্চয়তায় ২৮ হাজার হজযাত্রী
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন পালিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। প্রতিবছর ঈদের একমাস আগে থেকেই শুরু হয় হজ ফ্লাইট। তার আগে হজযাত্রীদের ভিসা, ফ্লাইট শিডিউল সংক্রান্ত কাজ সারে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও এয়ারলাইন্সগুলো। অথচ এবার এখনো শুরু হয়নি ভিসা কার্যক্রম। চূড়ান্ত হজযাত্রীদের তালিকা না পাওয়ায় ঘোষণা হয়নি ফ্লাইট শিডিউলও।
এদিকে ২৮ হাজার হজযাত্রীর মুজদালিফায় যাওয়ায় অনিশ্চয়তাসহ বেশকিছু জটিলতা দেখা দিয়েছে। এককথায় চলতি বছর হজের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। এজন্য হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এবং ধর্ম মন্ত্রণালয় একে অপরকে দোষারোপ করছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২৪ সালের হজ প্যাকেজ অনুযায়ী— ৯ মে থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হওয়া কথা। কিন্তু সৌদিতে বাড়ি ভাড়া করতে না পারা, ২৮ হাজার হজযাত্রীর মুজদালিফায় যাওয়া অনিশ্চয়তা, হজযাত্রীদের বাড়ি ভাড়ার জন্য এজেন্সির প্রতিনিধিদের ভিসা না পাওয়ার কারণে চ্যালেঞ্জর মুখে চলতি বছরের হজ ব্যবস্থাপনা। এসব সংকট কাটাতে কার্যত কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।
চলতি বছরের হজ নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ার জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়কে দায়ী করেছেন হাবের সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম। সম্প্রতি রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, সরকারি ব্যবস্থাপনায় মাত্র ৪ হাজার ২৮৩ জন হজযাত্রীর জন্য বাসা ভাড়া করা গেলেও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রায় ৭৮ হাজার ৮৯৫ হজযাত্রীর বাসা ভাড়ার জন্য কোনো সহায়তা করছে না মন্ত্রণালয়।
অন্যদিকে বাড়ি ভাড়ার জন্য এজেন্সি প্রতিনিধি মোনাজ্জেমদের (পবিত্র হজের সময় নিবন্ধিত হজ এজেন্সির মালিকের পক্ষে দায়িত্ব পালনকারী) ভিসা দিচ্ছে না সৌদি দূতাবাস। ফলে হজযাত্রীদের বাড়ি ভাড়া করতে সৌদি আরবে যেতে পারছেন না তারা। এ জায়গায়ও সহায়তা করছে না মন্ত্রণালয়। সবচেয়ে বড় সংকট তৈরি হয়েছে প্রায় ২৮ হাজার হজযাত্রীর মুজদালিফায় অবস্থান নিয়ে।
যদিও ধর্ম মন্ত্রণালয় বলছে, হজ এজেন্সির অতি মুনাফার লোভে মুজদালিফায় হজযাত্রীদের রাত কাটানো নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। মুজদালিফার খরচ কমাতে এজেন্সিগুলো কালো তালিকাভুক্ত কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে। ফলে এই ২৮ হাজার হজযাত্রীর মুজদালিফায় অবস্থান নিয়ে সংকট দেখা দিয়েছে। এ সংকটের বিষয়ে হাবকে আগে জানানো হলেও তারা কর্ণপাত করেনি। এখন শেষ সময়ে এসে তারা ধর্ম মন্ত্রণালয়কে দোষারোপ করছে।
মুজদালিফায় হজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ থাকে, যা ওয়াজিব। এটি হজযাত্রীদের পালন করতে হয়। অথচ ২৮ হাজার হজযাত্রী মুজদালিফায় যেতে পারবেন কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। শেষ পর্যন্ত মুজদালিফায় যেতে না পারলে তারা শুধু মিনা ও আরাফাতে যেতে পারবেন। এ শর্তে এসব হজযাত্রী আদৌ হজে যাবেন কি না, বা গেলে ভিসা পাবেন কি না, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে।
এ সংকটের জন্য অতি মুনাফালোভী এজেন্সিগুলোকে দায়ী করছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এর কারণ হিসেবে মন্ত্রণালয় বলছে, রিফাত কোম্পানির তালিকাভুক্ত প্রায় ২৮ হাজার হজযাত্রী মুজদালিফায় যাবেন। কিন্তু রিফাত কোম্পানি গত বছর তিন হাজারের বেশি হজযাত্রীকে মূল স্থান থেকে অনেক দূরে রাখে। ফলে তাদের অনেক কষ্ট করে হজ পালন করতে হয়েছে। এই কোম্পানির অধীনে কোনো হজযাত্রীকে চুক্তিভুক্ত করতে নিষেধ করার পরও কিছু এজেন্সি তা করেছে। যে সংখ্যা প্রায় ২৮ হাজার। বিষয়টি জানার পর এজেন্সি মালিক ও সংগঠন হাবকে জানানো হয়। কিন্তু তারা পাত্তা দেয়নি। এখন শেষ সময়ে এসে রিফাত কোম্পানির আওতাধীন হজযাত্রীরা মুজদালিফায় স্থান পাচ্ছে না।
সূত্র : ঢাকা পোস্ট।