আজ ২৩ এপ্রিল। ‘বিশ্ব বই দিবস’। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য রিড ইউর ওয়ে’ অর্থাৎ ‘পড়ুন আপনার মতো করে’। ইউনেসকোর উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছর এই দিনটি পালন করা হয়। বই দিবসের মূল উদ্দেশ্য হল, বই পড়া, বই ছাপানো, বইয়ের কপিরাইট সংরক্ষণ করা ইত্যাদি বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানো।
এ বছর ১০০টির অধিক দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব বই দিবস। শিক্ষা-সংস্কৃতিতে অগ্রসর দেশগুলোয় বিশ্ব বই দিবসের আয়োজন রীতিমতো বিস্ময়কর। আমরা জানি, আগামী পৃথিবীর নেতৃত্ব দেবে মেধাবীরা আর সমাজ বা রাষ্ট্রকাঠামো হয়ে উঠবে জ্ঞানভিত্তিক।
২০০১ খ্রিষ্টাব্দে বই বিক্রেতা, প্রকাশক এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের গ্রন্থাগার ও গ্রন্থাগার সমিতির অনুরোধে ‘বই দিবস’-এর সঙ্গে ‘গ্রস্থস্বত্ব’ শদটি জুড়ে দেয় ইউনেসকো। প্রতিবছর বিশ্বের ‘গ্রন্থ রাজধানী’ হিসেবে বেছে নেয়া হবে একটি করে শহরকে। ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের জন্যে ‘গ্রন্থ রাজধানী’ হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে আফ্রিকা মহাদেশের দেশ ঘানার রাজধানী ‘আক্রাকে।
বিশ্ব বই দিবসের মূল ধারণাটি আসে স্পেনের লেখক ভিসেন্ত ক্লাভেল আন্দ্রেসের কাছ থেকে। ১৬১৬ সালের ২৩ এপ্রিল মারা যান স্পেনের সবচেয়ে বিখ্যাত লেখক মিগেল দে সেরভান্তেস। তিনিই হচ্ছেন ক্লাসিক উপন্যাস ‘লা মানচার দন কিহোতে’র স্রষ্টা। স্পেনের সাহিত্যে তো বটেই, সারা বিশ্বের সাহিত্যেই এটি একটি বিরাট কীর্তি।
মিগেল দে সেরভান্তেসের স্মৃতিতেই বই দিবস পালন করা শুরু হয়। আন্দ্রেস ছিলেন মিগেল দে সেরভান্তেসের ভাবশিষ্য। নিজের প্রিয় লেখককে স্মরণীয় করে রাখতেই ১৯২৩ সালের ২৩ এপ্রিল থেকে আন্দ্রেস স্পেনে পালন করা শুরু করেন বিশ্ব বই দিবস। যদিও সেই দিনটি তখন বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হত না। এটি ছিল একেবারেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে পালন করা একটি দিন। পরে দাবি ওঠে প্রতি বছরই দিবসটি পালন করার। অবশ্য সে দাবিও তখন নজরে আসেনি কারও। তার পরে কেটে যায় বহু বছর।
বহু দিন অপেক্ষা করতে হয় দিনটি বাস্তবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য। অবশেষে ১৯৯৫ সালে ইউনেসকো দিনটিকে বিশ্ব বই দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং পালন করতে শুরু করে। এরপর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিবছর ২৩ এপ্রিল বিশ্ব বই দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
২৩ এপ্রিল শুধুমাত্র বিশ্ব বই দিবসই নয়, শেক্সপিয়র, সত্যজিৎ রায়, ইনকা গার্সিলাসো ডে লা ভেগা-সহ প্রমুখ খ্যাতিমান সাহিত্যিকদের জন্ম ও প্রয়াণ দিবসও। আর এ কারণেও ২৩ এপ্রিলকে বিশ্ব বই দিবস হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন অনেকেই।
বাংলাদেশে প্রতি বছর ৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পর্যায়ে ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’ পালিত হলেও ২৩ এপ্রিল ‘বিশ্ব বই দিবস’ পালনের নজির নেই। তবে এ কথা সত্য যে, ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’ এবং ‘বিশ্ব বই ও গ্রন্থস্বত্ব দিবস’র লক্ষ ও উদ্দেশের মধ্যে মূলত কোনো পার্থক্য নেই।
বাংলাদেশের ছাত্র, শিক্ষক ও গবেষকদের অধিকতর গ্রন্থাগারমুখী করে তোলা, জাতিগঠনে গ্রন্থাগারের অবদান ও প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করা, দেশে বিদ্যমান গ্রন্থাগারগুলোতে জ্ঞানবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার ওপর সর্বশেষ প্রকাশিত বই ও সাময়িকী সংগ্রহ, বিতরণ ও সেগুলোর অধ্যয়ন বৃদ্ধির কলাকৌশল সম্পর্কে আলোচনা ও মতবিনিময় এবং সার্বিকভাবে একটি মননশীল, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এবং গ্রন্থাগারকর্মী ও পেশাজীবী, লেখক, প্রকাশক, পাঠক বিশেষ করে বাংলাদেশ গ্রন্থাগার সমিতির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ অক্টোবর তারিখে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের সভায় ৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’ঘোষণা করেছিলেন। আমাদের দাবি, একই উদ্দেশ্য সামনে রেখে বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সরকার ‘বিশ্ব বই ও গ্রন্থস্বত্ব দিবস’ উদযাপনের উদ্যোগ নিতে পারে।
সরকার ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। উল্লেখ্য, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্ণমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি বিশ্বখ্যাত চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের লক্ষ্য অর্জনকে সামনে রেখেই প্রণীত বলে প্রতীয়মান হয়। আমাদের জন্যে ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’ এবং ‘বিশ্ব বই ও গ্রন্থস্বত্ব দিবস’ যথাযথভাবে উদযাপনের মাধ্যমে জাতিকে বইমুখী করার বিল্কল্প নেই।