Top News

কথা শোনেননি যেসব মন্ত্রী-এমপিরা

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের সার্বিক পরিস্থিতি

আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের সন্তান, পরিবারের সদস্য এবং নিকটাত্মীয়রা উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। এমনকি তারা কারও পক্ষে কাজও করতে পারবেন না। এমনটি জানিয়ে এমপি ও মন্ত্রীর স্বজনদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য নির্দেশনা দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বরাত দিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এ নির্দেশনা ঘোষণা করেন। তবে অতীতের মতো এবারও নির্দেশনা মেনে নেননি দলটির মাঠপর্যায়ের প্রভাবশালী বহু নেতা।

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে একজন মন্ত্রী, মন্ত্রীর পদমর্যাদাসম্পন্ন ডেপুটি স্পিকার এবং অন্তত পাঁচজন সাবেক মন্ত্রী ও নয়জন বর্তমান সংসদ সদস্যের স্বজন উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। যাদের মধ্যে কেউ কেউ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতও হতে চলেছেন।

যেসব এমপি ও মন্ত্রীর স্বজন সরে দাঁড়িয়েছেন তারা হলেন প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং সংসদ সদস্য এ বি তাজুল ইসলাম ও ড. বীরেন শিকদার। আর বাকিরা নির্বাচনে থেকে যাওয়ার মাধ্যমে এমপির রাজত্বে তিনিই সর্বেসর্বা এটারই যেন আবারও প্রমাণ মিলল।

মনোনয়নপত্র যারা প্রত্যাহার করেননি তাদের মধ্যে রয়েছেন নোয়াখালীর সুবর্ণচরে এমপি একরামুল করীম চৌধুরীর ছেলে আতাহার ইশরাক চৌধুরী, মাদারীপুর সদরে সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান এমপি শাজাহান খানের ছেলে আসিবুর রহমান খান, বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে এমপি সাহাদারা মান্নানের ছেলে শাখাওয়াত হোসেন ও সোনাতলায় ভাই মিনহাদুজ্জামান, মৌলভীবাজারের বড়লেখায় এমপি ও সাবেক মন্ত্রী শাহাবউদ্দিনের ভাগ্নে সোয়েব আহমদ, নরসিংদীর পলাশে এমপি আনোয়ারুল আশরাফ খান দীলিপের স্ত্রীর বড় ভাই ও ঘোড়াশাল পৌরসভার সাবেক মেয়র শরীফুল হক, ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে স্থানীয় সংসদ সদস্য মাজহারুল ইসলামের দুই চাচা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য সফিকুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় সংসদ সদস্য আলী আজগর টগরের ভাই আলী মুনসুর, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাবেক মন্ত্রী (বর্তমান এমপি) আবদুর রাজ্জাকের খালাতো ভাই হারুনার রশীদ হীরা ও মামাতো ভাই খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম তপন, সিরাজগঞ্জ সদরে এমপি তানভীর শাকিল জয়ের চাচাতো ভাই রাশেদ ইউসুফ জুয়েল, পাবনার বেড়াতে ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর ছোট ভাই সাবেক মেয়র আবদুল বাতেন এবং ভাতিজা আবদুল কাদের সবুজ, পিরোজপুরের নাজিরপুরে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের ছোট ভাই এসএম নূরে আলম সিদ্দিকী, তেঁতুলিয়ায় পঞ্চগড়-২ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজনের বেয়াই অর্থাৎ ছেলের শ্বশুর কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সহসভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল লতিফ তারিন এবং পঞ্চগড়ের সদর উপজেলায় সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য রেজিয়া ইসলামের দেবর আমিরুল ইসলাম।

অন্যদিকে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলাসহ একাধিক উপজেলায় এমপিদের স্বজনদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। একইভাবে কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের শ্যালক মহব্বত আলী ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিনা ভোটে নির্বাচত হতে যাচ্ছেন। আর মনোহরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের আপন ভাতিজা আমিরুল ইসলাম।

অন্যদিকে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাজি মো. ফয়সাল বিপ্লবের চাচা আনিছ-উজ্জামান আনিছ একমাত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।

উপজেলা নির্বাচনে মাঠপর্যায়ে এমন অবস্থা দেখা গেলেও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা দাবি করেন, এমপি-মন্ত্রীরা দলীয় নির্দেশনা যে মানেনি সেটা বলা যাবে না। কারণ নির্বাচন থেকে যেকোনো সময় প্রার্থীর সরে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এদিকে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষয়টি আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কৌশল। মানা না মানায় কী প্রভাব ফেলবে সেটা সে দলের নীতিনির্ধারক মহলের ভাবনার ব্যাপার। তবে নির্দেশনা না মানা নিশ্চয়ই সংগঠনের জন্য কিছুটা অস্বস্তির।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button