পার্বত্য রাঙ্গামাটির পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ বলেছেন, শুদ্ধ কথা ও যুক্তি ছাড়া শুদ্ধ সমাজ ও নিজেকে গড়ে তোলা সম্ভব নয়, তাই বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে দিয়ে যুক্তি নির্ভরতা বাড়াতে হবে এবং যুক্তির মাধ্যমে আপনাকে এগিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, বিতর্ক এমন একটা শিল্প, সমাজ সংস্কার থেকে শুরু করে নিজের মেধা ও মননশীলতা গড়ে তুলে নিজেকে এগিয়ে নিতে কাজ করে। সমাজ সংস্কৃতি, রাষ্ট্রনীতি, বিচার, প্রেম-ভালোবাসা সব ক্ষেত্রে বিতর্ক শিল্প একটি স্থান দখল করে নিতে শুরু করেছে। যুক্তির আলোয় সৃজনশীলতা আর বিশ্নেষণী শক্তির সমন্বয়ে এ শিল্পের বহিঃপ্রকাশ ঘটে ক্ষুরধার বাচনভঙ্গিতে।
বুধবার সকালে রাঙ্গামাটির বার্গিলেক ভ্যালিতে আয়োজিত দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ বিতর্ক সংগঠন ন্যাশনাল ডিবেট ফেডারেশন বাংলাদেশ (এনডিএফ বিডি)’র ‘১১তম এনডিএফ বিডি ন্যাশনাল ইয়ুথ লিডারশীপ ট্রেনিং ক্যাম্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিতর্ক হচ্ছে যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে নিজের মতামত প্রতিষ্ঠা করা। একটি নির্ধারিত বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নিজের যুক্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে নিজের বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠিত করাই বিতর্কের মূল উদ্দেশ্য। বিতর্কের চর্চা এখন চলছে বিশ্বজুড়ে। দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ছড়িয়ে পড়েছে এই বিতর্কের জয়গান।
বর্তমানে আমাদের দেশে বিতর্ক একটি সংঘবদ্ধ রুপ লাভ করেছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে বিতর্ককে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে বাংলাদেশ টেলিভিশন। বিভিন্ন প্রজন্মের বিতার্কিকগণ বিটিভিতে প্রদর্শিত বিতর্ক অনুষ্ঠান দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছে। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় দেখতাম দূর্দান্ত বিতার্কিক আজকের এই অনুষ্ঠানের সভাপতি একেএম শোয়েব ভাই এর বিতর্ক চর্চা। তখনকার সময়ে আমার স্বপ্নের মানুষ ছিলেন তিনি। তার কথা বলার ধরণ, বাচনভঙ্গি এবং বিতর্কের বিষয়গুলো আমাকে আজও নাড়া দেয়।
রাঙ্গামাটির মানুষ একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল জানিয়ে তিনি বলেন, অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা বলি তা কেবল রাঙ্গামাটিতে আসলেই বোঝা যায়। এদের শক্তি হলো একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এখানে সম্প্রীতির অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সকল ধর্মের মানুষ আজ একে অপরের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল।
এনডিএফ বিডি’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান একেএম শোয়েব এর সভাপতিত্বে এবং এনডিএফ বিডি’র মহাপরিচালক ও রেক্টর (স্কুলিং) এম আলমগীর এর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)’র পরিচালক মোঃ আনিসুর রহমান, গ্লোভাল ভিলেজ রাঙামাটি সাবেক সভাপতি ফজলে এলাহী, এনডিএফ বিডি’র মহাসচিব আশিকুর রহমান আকাশ, কো-চেয়ারম্যান তাহসিন রিয়াজ, যুগ্ম মহাসচিব তুষার ধর, মাহমুদ হাসান এবং এনডিএফ বিডি’র সাংগঠনিক সম্পাদক লুভনা আক্তার প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে একেএম শোয়েব বলেন, কথাই হলো সভ্যতা। আর যারা বিতর্ক করে তারাই হলো আধুনিক মানুষ এবং তারাই আধুনিক শিল্পী। তাই জ্ঞান ভিত্তিক একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে বিতর্কের বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, প্রত্যেক বিতার্কিক একজন ক্ষুদে রেনেসাঁ মানব। মানব সভ্যতার আলোকায়নের যে সুদীর্ঘ যাত্রা, সেই যাত্রায় আজ নেতৃত্ব দিতে হবে বিতার্কিককে। আমরা প্রায়ই শুনি শক্তিশালী গণতন্ত্র ও কার্যকর সংসদের গুরুত্বের কথা। যুক্তিস্নাত সেই রাঙ্গা প্রভাতটি বিতার্কিকরাই এনে দিতে পারেন।
আমরা এনডিএফ বিডি এই রাঙ্গামাটির কাছে অনেক ঋণি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য এবং সৌন্দর্য, প্রাকৃতিক নৈসর্গিকতা নিয়ে এনডিএফ বিডির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ুক সারা বিশ্বে। এই রাঙ্গামাটিতে সারাদেশ থেকে বাছাই করা একশো জন লিডার এখানে উপস্থিত হয়েছে। এই লিডারশীপ ক্যাম্পের মাধ্যমে তারা যে জ্ঞান অর্জন করবো আগামী দুই বছর ক্যালেন্ডার তৈরী করবো। আমরা বিতর্কের মধ্য দিয়ে আরও একধাপ এগিয়ে যেতে চাই এবং বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।
পরে লিডারশীপ কি ও কেন? এবং লিডারশীপ ক্যাম্পের গুরুত্ব, নৈতিকতা ও তাৎপর্য বিষয়ক দিনব্যাপী কর্মশালা প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়।
এরআগে অতিথিদের সম্মাননা স্মারক ক্রেস্ট ও উপহার সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। এনডিএফ বিডি’র ৯টি জোনের শতাধিক লিডার/সেরা বিতার্কিকরা অংশগ্রহন করে।