নির্বিচারে ফিলিস্তিনিদের হত্যা বন্ধের দাবিতে মার্কিন ক্যাম্পাসভিত্তিক এই ইসরাইবিরোধী বিক্ষোভ চলছে। ইসরাইবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। আমেরিকার নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ দেশটির ৪৬টি ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে।
যেসব শহরে ছড়িয়ে পড়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- ব্রিটেনের লন্ডন, ফ্রান্সের প্যারিস ও ইতালির রোম থেকে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, জাপানের টোকিও এবং লেবাননের বৈরুতসহ বিশ্বের বিভিন্ন শহরে। এসব বিক্ষোভ থেকে অবিলম্বে গাজায় ইসরাইলের হামলা বন্ধের দাবি জানানো হচ্ছে।
পাশাপাশি ইসরাইল ও গাজা যুদ্ধকে সমর্থন করে, এমন সব কোম্পানির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি তুলেছেন বিক্ষোভকারীরা।যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুসারে এসব বিক্ষোভ থেকে কমপক্ষে দুই হাজার লোককে আটক করা হয়েছে।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুরোধে পুলিশ বেশ কিছু ক্যাম্পাস থেকে অবস্থানকারী লোকজনকে সরিয়ে দেয়, যার মধ্যে নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটিও রয়েছে। বিক্ষোভ সমাবেশের প্রাণকেন্দ্র কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে বিক্ষোভকারীরা বেষ্টনি তৈরি করে। পুলিশ কর্মকর্তারা যখন ক্যাম্পাস থেকে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেয় তখন তাদের বিরুদ্ধে নৃশংস কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়।
মার্কিন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাস থেকে ইসরাইবিরোধী বিক্ষোভকারীদের হটাতে যে দমন–পীড়ন চালানো হচ্ছে, সেটাও তাদের প্রতিবাদে শামিল হতে উৎসাহিত করছে বলে বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন। বলা হচ্ছে, এসব বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও এর ঘনিষ্ঠ মিত্রদেশগুলোর তরুণদের মধ্যে ইসরায়েলের আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা প্রকাশিত হচ্ছে।
যুক্তরাজ্য: যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর থেকেই। তবে সম্প্রতি বিভিন্ন ক্যাম্পাসে সেই বিক্ষোভ ভিন্নমাত্রা পেয়েছে। ক্যাম্পাসে তাঁবু টাঙিয়ে অবস্থান নিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। নিউক্যাসল, লিডস, ব্রিস্টল ও ওয়ারউইক শহরের শিক্ষার্থীরাও ক্যাম্পাসে তাঁবু খাটিয়ে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ করছেন।
অস্ট্রেলিয়া: ব্রিসবেনে কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় (ইউকিউ) বিক্ষোভের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এখানে ফিলিস্তিনপন্থীদের ১০০ মিটার দূরত্বে ইসরায়েল–সমর্থক বিক্ষোভকারীরাও অবস্থান নিয়েছেন। দেশটিতে অন্তত সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁবু টাঙিয়ে অবস্থান নিয়েছেন যুদ্ধবিরোধী ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীরা। এ নিয়ে ক্যাম্পাসগুলোতে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রায় ৫০টি তাঁবু টাঙিয়ে অবস্থান নিয়েছেন যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভকারীরা। শুক্রবার সেখানে পাল্টা বিক্ষোভের আয়োজন করে ইহুদি গোষ্ঠীগুলো। এতে ক্যাম্পাসে উত্তেজনার সৃষ্টি হচ্ছে।
জার্মানি: গত শুক্রবার জার্মানির পুলিশ বার্লিনের প্রাণকেন্দ্রে হামবলডট ইউনিভার্সিটি থেকে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়। এ সময় সেখান থেকে বেশকিছু বিক্ষোভকারী সরতে না চাইলে তাদের জোর করে উঠিয়ে দেওয়া হয়।
কানাডা: গাজা যুদ্ধের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা কানাডার বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। দেশটির মন্ট্রিয়েল, অটোয়া, টরোন্টো ও ভ্যানকুভার শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। মন্ট্রিয়েলের ম্যাক গিল ইউনিভার্সিটিতে শত শত বিক্ষোভকারী পুলিশ ক্লিয়ারিংয়ের ঝুঁকির মুখেই বিক্ষোভে অংশ নেয়।
ভারত: কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে ভারতের খ্যাতনামা নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়েও (জেএনইউ)। ২৯ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিদর্শনে যাওয়ার কথা ছিল ভারতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটির। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কারণে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।
ফ্রান্স: প্যারিসের সায়েন্সেস পো বিশ্ববিদ্যালয় ফ্রান্সের সবচেয়ে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। এখানে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। এটা ছাড়াও এপ্রিলের শেষ দিকে প্যারিসের সরবন বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজা যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। ফ্রান্সের আরও অনেক ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর জানিয়েছে, দেশের ক্যাম্পাসগুলোতে অবস্থান নেওয়া ২৩টি স্থান থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়, ইতালির রোমের স্যাপিয়েঞ্জা বিশ্ববিদ্যালয়, মেক্সিকোর ন্যাশনাল অটোনোমাস ইউনিভার্সিটি এবং লেবাননের আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বৈরুত ও লেবানিজ আমেরিকান ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষার্থীরা ইসরাইলের হামলা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন।