বজ্রপাতে রাজশাহী বিভাগের তিন জেলায় এক দিনে আটজন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় তিনজন গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ছাড়াও বজ্রপাতে দুটি ছাগলের মৃত্যু হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার দুপুর দেড়টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে এ ঘটনাগুলো ঘটে।
নওগাঁয় তিন প্রাণহানি, আহত ২
নওগাঁর মান্দা ও পত্নীতলা উপজেলায় বজ্রপাতে তিনজনের প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া বদলগাছী উপজেলায় দুজন গুরুতর আহত হয়েছেন। শুক্রবার বিকেলে এসব ঘটনা ঘটে।
পত্নীতলা থানার ওসি মোজাফফর হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বজ্রপাতে উপজেলার নাগরগোলা গ্রামের ৫০ বছর বয়সী খাদেমুল ও গাহন গ্রামের ৩৫ বছর বয়সী মনিকা নামের দুজন নিহত হয়েছেন।
স্থানীয়দের বরাতে ওসি জানান, ঝড়বৃষ্টির সময় বাড়ির পাশে আম কুড়াতে যান খাদেমুল। এসময় বজ্রপাত হলে সেখানেই তিনি নিহত হন।
অন্যদিকে, মনিকা বাড়ির উঠানে ধানের খড় শুকাতে দিয়েছিলেন। মেঘ দেখে তা গোছানোর সময় বজ্রপাত হলে তিনি প্রাণ হারান।
মান্দা থানার ওসি মোজ্জামেল হক তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এ ছাড়াও বদলগাছী উপজেলায় বজ্রপাতে গুরুতর আহত হয়েছেন দুই ব্যক্তি। এসময় তাদের দুটি ছাগল মারা গেছে।
বদলগাছী থানার ওসি মাহবুবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বিকেল ৫টার দিকে উপজেলার ঘাবনা গ্রামে মাঠে গবাদি পশুকে ঘাস খাওয়াচ্ছিলেন আব্দুল খালেক ও হবিবুর রহমান নামের দুই ব্যক্তি। হঠাৎ ঝড়বৃষ্টি শুরু হলে তারা সড়কের পাশে একটি গাছের নিচে আশ্রয় নেন।
ওসি জানান, এসময় ওই গাছে বজ্রপাত হলে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে তারা দুজন গুরুতর আহত হন। এছাড়া বজ্রপাতে তাদের দুটি ছাগল মারা যায়।
পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে বদলগাছী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করেন।
নাটোরে দুজন নিহত, আহত ১
নাটোরের নলডাঙ্গা ও গুরুদাসপুরে বজ্রপাতে দুজন নিহত হয়েছেন। ওই দুই ঘটনায় আরও একজন আহত হয়েছেন। শুক্রবার দুপুরে এই ঘটনাদুটি ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, দুপুর দেড়টার দিকে নলডাঙ্গা উপজেলার কোমরপুর এলাকায় বারনই নদীতে মাছ ধরার সময় বজ্রপাতে মো.কামরুল হোসেন নামে ৩৫ বছর বয়সী এক যুবক নিহত হয়েছেন। এসময় মো. মজনু নামে ৪০ বছর বয়সী আরেক ব্যক্তি আহত হন।
কামরুল হোসেন কোমরপুর গ্রামের মো. লুৎফর রহমানের ছেলে। আহত মজনু ওই গ্রামের আহমদ আলীর ছেলে।
ব্রহ্মপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান এসএম আশরাফুজ্জামান মিঠু জানান, দুপুরে মজনু ও কামরুল গ্রামের গোরস্থান-সংলগ্ন বারনই নদীতে জাল দিয়ে মাছ ধরছিলেন। এ সময় বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই কামরুল নিহত আর আহত হন মজনু।
খবর পেয়ে স্থানীয়রা ঘটনাস্থল থেকে কামরুলের মরদেহ এবং আহত মজনুকে হাসপাতালে নিয়েচিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
অপরদিকে, গুরুদাসপুর পৌর এলাকায় বজ্রপাতে আবেরা বেগম নামের এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে তিনি নিহত হন।
৪০ বছর বয়সী ওই গৃহবধূ দুই সন্তানের মা এবং আনন্দ নগর মহল্লার সাদ্দাদ হোসেনের স্ত্রী।
নিহতের স্বজনরা জানান, দুপুর ২টার দিকে আকাশে মেঘ দেখে আবেরা বেগম বাড়ির পাশে ডোবা থেকে হাঁস ফিরিয়ে আনতে যান। এসময় বৃষ্টি শুরু হলে তিনি একটি আম গাছের নিচে আশ্রয় নেন, কিন্তু তার পাশেই বিকট শব্দে বজ্রপাত হলে তিনি সেখানেই লুটিয়ে পড়েন। পরে স্বজনরা তাকে গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে তিনজনের মৃত্যু
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ ও ভোলাহাটে বজ্রপাতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে শিবগঞ্জ উপজেলায় শিশুসহ দুজন ও ভোলাহাটে একজন মারা যান। শুক্রবার বেলা আড়াইটা থেকে তিনটার মধ্যে ঝড়বৃষ্টির সময় এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
শিবগঞ্জ থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন জানান, ঝড়বৃষ্টির সময় আম কুড়াতে গিয়ে শিবগঞ্জ পৌরসভার আলীডাঙ্গা মহল্লার সুভাস ভকতের স্ত্রী ৩২ বছর বয়সী ববি ভকত ও শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাঁকা নিশিপাড়ার এরশাদ আলীর মেয়ে ৮ বছরের কবিতা খাতুন টিউবয়েলে পানি আনতে গিয়ে বজ্রপাতে নিহত হন।
অন্যদিকে, ভোলাহাট থানার ওসি সুমন কুমার জানান, ভোলাহাট উপজেলার আন্দিপুরের হঠাৎপাড়া আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা ইসলাম আলীর মেয়ে ১০ বছরের আমেনা খাতুন বাড়ির পাশের আম বাগানে আম কুড়াতে গিয়ে বজ্রপাতে গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।