Top Newsঅপরাধ

আট বছর পরও হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ের অপেক্ষা

মোহনা অনলাইন

রাজধানীর গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার আট বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ ১ জুলাই। ৮ বছর আগে ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হোলে আর্টিসান রেস্টুরেন্টে হামলা চালিয়ে বিদেশী নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করেছিল নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন নব্য জেএমবির (আত্মঘাতী) সদস্যরা।

দেশ-বিদেশে সাড়া ফেলা নৃশংস এ ঘটনায় ২২ জনকে হত্যার দায়ে ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর সাত জঙ্গিকে মৃত্যুদন্ড দেন বিচারিক আদালত। তবে হাই কোর্টে এসে সাজা কমে যায় সাত জঙ্গির। মৃত্যুদন্ড থেকে কমিয়ে তাদের আমৃত্যু কারাদন্ডের রায় দেন হাই কোর্ট। এদিকে রায় ঘোষণার আট মাস পেরিয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি না পাওয়ায় এখনো আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। রায়ের অনুলিপির অপেক্ষায় রয়েছে আসামিপক্ষও।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেছেন, মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে হাইকোর্ট আসামিদের আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন। তাই তাদের মৃত্যু পর্যন্ত কারাগারেই থাকতে হবে। বের হওয়ার সুযোগ নেই। সুতরাং হাইকোর্টের রায়ের বিষয়ে আপিল বিভাগে বিবিধ আবেদন করার প্রয়োজন নেই।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, রায়ের অনুলিপি পেলে বুঝতে পারব কী যুক্তিতে বা কোন কোন যুক্তিতে মৃত্যুদণ্ড থেকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। রায়টি পেলে পর্যালোচনার পর রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে তাদের নির্দেশনা অনুসারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। কিন্তু এখনো রায়টা আমরা পাইনি।

তিনি আরো বলেন, মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখাটাই আমি মনে করি ওদের জন্য যথার্থ ছিল। কারণ ওদের প্রতি অনুকম্পা দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। ওরা কতগুলো বিদেশী নিরীহ মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে, যারা আমাদের দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের সাথে জড়িত ছিল। ধর্মের নামে, উগ্রবাদিতার নামে তাদের হত্যা করেছে। এই দণ্ডিতরাই পেছনে থেকে মদদ দিয়েছে, পরিকল্পনা করেছে। তাই আমি মনে করি ওদের প্রতি বিন্দুমাত্র অনুকম্পা দেখানোর সুযোগ নেই।
অপর দিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী মো: আমিনুল এহসান জুবায়ের বলেন, হাইকোর্টের রায়ের অনুলিপি পাওয়ার অপেক্ষা করছি। অনুলিপি পেলে মক্কেলের সাথে আলোচনা করে আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো।

হোলে আর্টিসান হামলায় দেশী-বিদেশী ২০ জন নাগরিকসহ দু’জন পুলিশ কর্মকর্তাকে যে নিষ্ঠুর ও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, তাতে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট। রায়ে আদালত বলেন, নিষ্ঠুরতম হত্যাকাণ্ডটি জনসাধারণের মনে চরম আতঙ্ক সৃষ্টিসহ জননিরাপত্তা মারাত্মকভাবে বিঘিœত করেছে।

রায়ে আদালত বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ এর ধারা ৬ (১) (ক) (আ) ধারার অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আপিলকারী ১. মো: জাহাঙ্গীর হোসেন, ২. মো: আসলাম হোসেন সরদার ওরফে মোহন, ৩. মো: আব্দুস সবুর খান (হাসান), ৪. রাকিবুল হাসান রিগেন ওরফে রাফিউল ইসলাম, ৫. মো: হাদিসুর রহমান, ৬. মো: শরিফুল ইসলাম খালেদ এবং ৭. মামুনুর রশিদ রিপনকে আইনের ৬(২)(আ) ধারায় বর্ণিত সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো।

এ অবস্থায় আপিল বিভাগের ‘আতাউর মৃধা ওরফে আতাউর বনাম রাষ্ট্র’ মামলার নজিরের ১৭৯ প্যারায় বর্ণিত পর্যবেক্ষণের মর্ম অনুসারে আপিলকারীদের আমৃত্যু কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। সে অনুযায়ী প্রত্যেককে আমৃত্যু কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো। তাদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড অনাদায়ে ৫ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়- বলে রায়ে উল্লেখ করেন হাইকোর্ট।

author avatar
Online Editor SEO
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button